Advertisement
E-Paper

হাতি রুখতে এ বার মহুয়া হটাচ্ছে দলমা

মহুয়ার কত ঝাঁঝ হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছেন ওঁরা। পূর্ব সিংভূমের দলমায় পাহাড়ি গ্রামকে চেনা যায় সেই ঝিম-ধরা কষাটে ঘ্রাণেই। তবে সে গন্ধের ভিতরে এত বড় বিপদের বীজ লুকিয়ে তা আগে ভাবেননি বনকর্তারা। গন্ধের টানই গাঁ-ঘরের মহল্লায় টেনে আনছে হাতির দলকে। হাঁড়ি-ভরা মহুয়ার লোভে বার বার ফিরে আসছে হস্তিবাহিনী। এক মাসে তিন বার হাতির হানায় গ্রাম কে গ্রাম তছনছ হয়েছে। দু’দিন আগে, গত মঙ্গলবার ছোটকা গ্রামের অজয় কুজুরকে হাতির পাল পিষে দিয়ে গিয়েছে। জখম হয়েছে আরও পাঁচ জন।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০৪:১৭

মহুয়ার কত ঝাঁঝ হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছেন ওঁরা।

পূর্ব সিংভূমের দলমায় পাহাড়ি গ্রামকে চেনা যায় সেই ঝিম-ধরা কষাটে ঘ্রাণেই। তবে সে গন্ধের ভিতরে এত বড় বিপদের বীজ লুকিয়ে তা আগে ভাবেননি বনকর্তারা।

গন্ধের টানই গাঁ-ঘরের মহল্লায় টেনে আনছে হাতির দলকে। হাঁড়ি-ভরা মহুয়ার লোভে বার বার ফিরে আসছে হস্তিবাহিনী। এক মাসে তিন বার হাতির হানায় গ্রাম কে গ্রাম তছনছ হয়েছে। দু’দিন আগে, গত মঙ্গলবার ছোটকা গ্রামের অজয় কুজুরকে হাতির পাল পিষে দিয়ে গিয়েছে। জখম হয়েছে আরও পাঁচ জন।

বেগতিক বুঝে এ বার মহুয়ার ‘হাঁড়ি’ই বনকর্তাদের তোপের মুখে পড়েছে। গ্রামে ঘরে-ঘরে জমিয়ে রাখা মহুয়াই নষ্টের গোড়া ধরে নিয়ে দলমায় বন বিভাগের ‘মহুয়া হটাও’ অভিযান শুরু হয়েছে।

তাতে উভয়সঙ্কটে পড়েছেন গ্রামবাসীরা। দলমায় মহুয়ার মদ বেচে এখনও অনেকেই দিন গুজরান করেন। হাতির পাল এসে সেই রুটিরুজির পেটে যেন লাথি মেরেছে।

সমস্যাটা বুঝছেন দলমার ফরেস্ট রেঞ্জার মঙ্গল কাচপ। কিন্তু অসহায় ভাবেই হাত তুলে নিচ্ছেন তিনি। ‘‘কিছু করার নেই। মানুষের জীবন ঢের জরুরি। মহুয়া জমানো বন্ধ না-করলে হাতির অত্যাচার ঠেকানো যাবে না।’’

তা ছাড়া, মহুয়ার মদ বিক্রি যে নিষিদ্ধ তা-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন বনকর্তা। গ্রামের মহুয়া শহরে নিয়ে গিয়ে অনেক সময়েই ভেজাল মেশানোর ঘটনাও ঘটে। কিন্তু আপাতত হাতির ভয়ই মহুয়ার প্রতি আক্রোশের প্রধান কারণ। বাংলার গরমে চোলাইয়ের ভাটি ভাঙার ঢঙেই শুরু হয়েছে মহুয়ার হাঁড়ি-ভাঙা অভিযান।

হাতির মহুয়া-প্রীতি অবশ্য একেবারে নতুন নয় দলমাবাসীর কাছে। মহুয়ার টানে হাতিকে সচারচর এত উগ্র হয়ে উঠতে দেখা যায় না। মহুয়া-বিলাসের পরে মত্ত হাতির দল গ্রামে ভাঙচুর শুরু করছে।

অসমের হাতিবিশেষজ্ঞ পার্বতী বডুয়া বা বাংলার প্রাক্তন মুখ্য বনপাল অতনু রাহা এতে খুব একটা আশ্চর্য নয়। পার্বতী বলছিলেন, ‘‘অসমের জঙ্গলে হাঁড়িয়ার নেশাতেও হাতি বেশ মত্ত হয়ে ওঠে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণত, মহুয়ার ফুল দশায় তার গন্ধে হাতি ততটা জঙ্গি হয় না। কিন্তু মহুয়ার তরল তৈরি হলে তার গন্ধ হাতি টের পায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকেই।’’ অতনুবাবুর মতে, ধানের মতোই মহুয়া-হাঁড়িয়াও হাতির বরাবরের প্রিয়। উত্তরবঙ্গের চা-বাগানে কুলি লাইনেও নেশার তাড়নায় মত্ত হাতির উপদ্রব দেখা গিয়েছে।

আপাতত দলমায় পরিস্থিতি সামাল দিতে চলছে, মহুয়া নিয়ে সচেতনতা-অভিযানও। দলমার ফরেস্ট রেঞ্জার বলছেন, ‘‘আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছি। এতটা মহুয়া তৈরি করলে ঘোর বিপদ। এ চলতে দেওয়া যায় না। জীবন থাকলে, জীবিকাও থাকবে।’’ বন দফতরের ভিতরেই অবশ্য এই চেষ্টা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারও কারও মত, গ্রামবাসীদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না-করলে সমস্যা মিটবে না। মহুয়ার হাঁড়ি ভাঙলেও প্রাণ হাতে নিয়েই চলবে চোরাগোপ্তা তরলের কারবার। দলমায় লোকালয় থেকে ‘হাতি খেদানো’র ঠিকঠাক পরিকাঠামো গড়ে না-উঠলে হাতির সঙ্গে সংঘাতও জারি থাকবে।

Aryabhatta Khan ranchi mahua dalma elephant
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy