আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিহারে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং আরজেডি-র তেজস্বী যাদবের ভোটাধিকার যাত্রার শেষ দিন। ‘ইন্ডিয়া’র সমস্ত শরিক দলের নেতাদের পাশাপাশি ওই দিন পটনার জনসমাবেশে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলেন রাহুল এবং তেজস্বী। কিন্তু আজ তৃণমূলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মমতার ওই দিন পটনায় উপস্থিত থাকার প্রশ্ন উঠছে না। যেতে পারবেন না অভিষেকও। দু’জনেরই পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে। রাজ্যে ভোট এগিয়ে আসছে, অভিষেক দিবারাত্রি ব্যস্ত জেলাওয়াড়ি পর্যালোচনা এবং সমীক্ষায়। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্যই অভিজ্ঞ প্রতিনিধি পাঠানো হবে। কে যাবেন, তা যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, গত এক সপ্তাহে বিরোধী রাজনীতির যে গতিপ্রকৃতি, তাতে তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত নয়। বাদল অধিবেশন চলাকালীন সুনেহরি বাগের বাংলোর নৈশভোজে রাহুল গান্ধী এবং অভিষেকের নৈকট্য এবং উষ্ণতা ছিল চোখে পড়ার মতো। গোটা অধিবেশনেই কংগ্রেস এবং তৃণমূলের কক্ষ সমন্বয় মসৃণ থেকেছে। কিন্তু বাদল অধিবেশনের শেষে যে তার ছিঁড়েছে, তা আজকের এই সিদ্ধান্তে আবারও স্পষ্ট হয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে। জেলবন্দি মন্ত্রীদের বরখাস্ত করার প্রস্তাবিত বিল নিয়ে উভয় পক্ষের ফাটল প্রকাশ্যে আসে। তৃণমূল যতটা আগ্রাসী ভাবে ওয়েলে নেমে ওই বিলের প্রতিবাদ করে, কংগ্রেসকে তা করতে দেখা যায়নি লোকসভা ও রাজ্যসভায়। প্রকাশ্যে কোনও বিবৃতি না দিলেও তৃণমূল নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।
রাজনৈতিক শিবির বলছে, বিল নিয়ে প্রতিবাদের ধরণে পার্থক্য হয়তো ছিল, কিন্তু তা এতটা ছিল না যে বড় ক্ষোভের আকার নেবে। আসলে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, সংসদীয় অধিবেশনে বিজেপি বিরোধিতার জন্য যেটুকু কক্ষ সমন্বয় এবং উষ্ণতা বিনিময়ের প্রয়োজন ছিল তা হয়ে গিয়েছে। এমনকি বিরোধী প্রার্থীও সর্বসম্মত ভাবে স্থির করা হয়েছে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে। এ বারে ঝাঁপাতে হবে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে। সেখানে কংগ্রেস তৃণমূলের প্রতিপক্ষ। তাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করার কোনও প্রয়োজন যে অনুভব করছে না তৃণমূল, তা দিল্লিতে বসে বলে গিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় আমাদের কংগ্রেসকে অফার করার মতো কোনও আসন নেই। আমাদের কাউকে প্রয়োজনও নেই।” কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ দিয়ে কোনও ছবি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তৈরি হলে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের বুথে বুথে কর্মীদের কাছে ভুল সংকেত যাবে— এমনটাই মনে করছে তৃণমূল।
অভিষেকের বদলে কাকে পটনা পাঠানো হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে তৃণমূলের অভ্যন্তরে। স্বাভাবিক ভাবেই ‘বিহারিবাবু’ শত্রুঘ্ন সিংহের কথা ভাবা হচ্ছে যিনি এখনও ওই রাজ্যে জনপ্রিয়। তবে তাঁর বাক্য ব্যবহারে অতীতে অনেক বার সমস্যায় পড়েছে দল। অহরহ মোদীর প্রশংসা করে ফেলেছেন তিনি! তৃণমূলের রাজ্যসভার উপনেতা সাগরিকা ঘোষ বা লোকসভার উপনেতা শতাব্দী রায়কে পাঠানো যায় কি না, ভাবা হচ্ছে। লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক কাকলি ঘোষদস্তিদার জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন, সদ্য সুস্থ হওয়ার পথে। তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)