গোটা দিল্লি-হরিয়ানা সীমানাই এখন গর্জনশীল। সিংঘু থেকে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার যেন এক নতুন ট্রাক্টর উপনিবেশে পরিণত হয়েছে! অন্তত দু’মাসের রসদে উপচে পড়ছে সেই উপনিবেশ। ‘গুরু কা লঙ্গর’ নামধারী কয়েকশো লঙ্গরখানায় চলছে ২৪ ঘণ্টার পরিষেবা। হাতে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে লস্যি, লাড্ডু, মকাইয়ের পরোটা। একটি ট্রাকে তৈরি করা হয়েছে গ্রাম থেকে নিয়ে আসা গুরমুখী ভাষার বইয়ে সাজানো মেক শিফট গ্রন্থাগার! তিন দিন আগেই দিল্লির অন্য সীমানা গাজিপুরে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের যে ক্ষয়িষ্ণু কৃষকদের দেখা গিয়েছিল, এখানের ‘সবুজ বিপ্লবের’ সন্তানদের সমৃদ্ধি তাঁদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। ফলে লড়াই করার দমও বেশি। পাটিয়ালা থেকে আসা দলজিৎ সিংহ বোঝালেন, “পঞ্জাবে প্রায় সাড়ে পনেরো হাজার গ্রাম রয়েছে। প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত পাঁচটি করে ট্রলিতে রসদ এসেছে। আরও আসবে। এ ছাড়া, আমাদের অনেক ধর্মীয় সংস্থা, সামাজিক সংস্থা থেকে সাহায্য আসছে। যত দিন না তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেয় সরকার, আমরা এখানকার এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না।”
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে ১ আসনে জয় বিজেপি-র
এক কিলোমিটার অন্তর বিশাল জমায়েত, মঞ্চ, লাউড স্পিকার, ত্রিপলের ছাউনি। লরি, ট্রাক্টর আর ট্রলির ব্যারিকেডে ঘেরা সেই সভাস্থলগুলিতে নাগাড়ে বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন কৃষক সংগঠনের নেতারা। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যার উপজীব্য একই।
কালা কানুন ছিঁড়ে ফেলে না-দিলে সর্বাত্মক হবে আন্দোলন।
ফুলকপি, মুলো আর বাঁধাকপির বস্তার পাশে বসে কড়াইশুঁটি ছাড়াচ্ছিলেন একটি দল। পেল্লায় কড়াইয়ে জল ফুটছে। সেখানে বসা ধর্মপাল সিংহের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে মমতার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিলেন ডেরেক। তত ক্ষণে সেখানে চলে এসেছেন স্বরাজ ইন্ডিয়া দলের নেতা যোগেন্দ্র যাদবও। তিনি ধর্মপালকে অনুরোধ করলেন হিন্দিতে কথা বলতে। ফোন স্পিকারে রেখে কথা হল। ‘সৎ শ্রী অকাল’-এর আদানপ্রদানের পরে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ধর্মপাল। “ম্যাডাম আমাদের বিবি-বাচ্চাও এই আন্দোলনে যোগ দিতে দিল্লি আসতে চায়। দরকার হলে আসবে। মোদী সরকার কর্পোরেটদের হাতে দেশকে বেচে দিতে চায়। মান্ডি ব্যবস্থা তুলে দিতে চায়। পুরো পঞ্জাব পথে নামবে। আপনি আমাদের পাশে থাকুন।” তাঁর কথার মধ্যেই ভিড় জমে গেল চারপাশে। ডেরেক এবং যোগেন্দ্র দু’জনেই তাঁদের বললেন, সংসদে এই তিনটি বিল ছিঁড়ে সবার আগে বিরোধিতার পথ দেখিয়েছিল তৃণমূলই।
আরও পড়ুন: ‘ধারাবাহিক নন’ রাহুল, এ বার শরদ
মমতা এ দিন দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেন কৃষক নেতার সঙ্গে। তাঁর কথায়, “কৃষকের জমি যখন জোর করে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছিল আমি অনশন করেছি। এ কারণে আপনাদের এই আন্দোলন আমারও আন্দোলন। গোটা দেশের আন্দোলন। এই লড়াইয়ে বাংলা থেকে যদি কোনও সাহায্য প্রয়োজন হয় অবশ্যই জানাবেন। দরকার হলে আমরা লোক পাঠাব।” মমতা আরও বলেন, “মোদী সরকার অত্যাবশ্যক পণ্য আইনেও পরিবর্তন করেছে। জোর করে আইন আনছে। ভোটে জিতে ওরা এখন দেশকে বিক্রি করে দিতে চাইছে। আসুন সবাই মিলে আমরা রুখে দাঁড়াই।” এর পর মমতার সঙ্গে গলা মিলিয়ে কৃষকেরা আওয়াজ তোলেন, ‘জয় কিসান’।
মাটিতে বসে বক্তৃতা শুনছিলেন হোশিয়ারপুরের রচপাল সিংহ। ডেরেক পাশে বসে তাঁকে মমতার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। রচপালকে বলতে শোনা যায়, “আপনার রাজ্যে ভোট আসছে। মোদীকে হটাতে যদি কোনও সাহায্যের দরকার পড়ে, অবশ্যই যোগাযোগ করবেন। আমরা পৌঁছে যাব।”