পাশেই আরজেডি নেতা রঘুবংশপ্রসাদ সিংহ। বুধবার পটনার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে মুকুল রায় ও ফিরহাদ হাকিম। —নিজস্ব চিত্র।
এই সে দিন পর্যন্ত নীতীশ কুমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল তাঁর। কিন্তু নোট বাতিলের প্রশ্নে দুই বন্ধু এখন দুই মেরুতে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবিতে যখন মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন পড়শি রাজ্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী সওয়াল করে চলেছেন নোট বাতিলের পক্ষেই! মতের সেই ফারাক বুঝি এ বার দু’জনের সম্পর্কেও চিড় ধরাল কিছুটা! যার ইঙ্গিত পাওয়া গেল আজ পটনায় মমতার প্রতিবাদ সভায়! যেখানে নোট বাতিলের বিরুদ্ধে নিজের বক্তৃতায় নাম না করে নীতীশকে ‘গদ্দার’ আখ্যা দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
নোট বাতিলের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে এখন দেশ জুড়ে প্রচারে নেমেছেন মমতা। গত কাল সভা করেছিলেন লখনউয়ে। আজ সভা ছিল পটনায়। সূত্রের খবর, পটনার সভা যাতে সফল হয়, সে জন্য এখানকার শাসক জোটের অন্যতম প্রধান শরিক সংযুক্ত জনতা দল (জেডিইউ)-এর সমর্থন চেয়েছিল তৃণমূল। নোট-প্রতিবাদে সম্প্রতি দিল্লির যন্তর-মন্তরে মমতার বিক্ষোভ মঞ্চে যে হেতু জেডিইউ সভাপতি শরদ যাদব উপস্থিত ছিলেন, তাই আরও আশাবাদী ছিলেন মমতা-মুকুল রায়রা। কিন্তু পটনায় মমতার সভাকে সমর্থন জানাতেই অস্বীকার করে জেডিইউ। এমনকি মমতা নীতীশের কাছে দূত পাঠালে তাঁর সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেননি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এতেই অসন্তুষ্ট হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
নীতীশ দূরত্ব রাখলেও আজ পটনায় মমতার সভায় ছিলেন শাসক জোটের আর এক দল— লালু প্রসাদের আরজেডি-র দুই শীর্ষ নেতা রঘুবংশপ্রসাদ সিংহ এবং দলের রাজ্য সভাপতি রামচন্দ্র পূর্বে। এঁরা দু’জনেই নীতীশ-বিরোধী বলে পরিচিত। তাঁদের পাশে রেখেই তৃণমূল নেত্রী এ দিন তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দেন নীতীশের উদ্দেশে। মমতা বলেন, ‘‘নোট বাতিলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে কেউ যদি আমাদের পাশে থাকেন তবে ভাল। কিন্তু যদি কেউ সাধারণ মানুষের এই আন্দোলনে পাশে না থাকেন তবে তা বড় যন্ত্রণাদায়ক। মানুষ এই গদ্দারদের কখনওই ক্ষমা করবেন না।’’ মমতার এই আক্রমণে হাততালি পড়ে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মমতার মঞ্চে নেতা পাঠানো ছাড়াও পটনার গর্দনিবাগের এই সভাস্থলে ভিড় জমাতে দলের প্রচুর কর্মীও পাঠিয়েছিলেন লালু। তা ছাড়া, নীতীশ কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সওয়াল করায় ইদানীং পটনার রাজনীতিতে সন্দেহের মেঘ জমতে শুরু করেছে তাঁকে ঘিরে। নীতীশ-বিরোধী অসন্তোষ বাড়ছে লালু শিবিরেও।
লখনউয়ের মতো ভিড় পটনায় হয়নি। তবে তৃণমূল নেত্রী বুঝিয়ে দেন, এতে হতোদ্যম হওয়ার প্রশ্নই নেই। কারণ, একে তো উত্তরপ্রদেশ বা বিহার তাঁর নিজের রাজ্য নয়। এখানে কলকাতার মতো ভিড় হবে, তিনি আশা করেন না। তাঁর মূল লক্ষ্য, নোট বাতিল নিয়ে দেশ জুড়ে মোদী-বিরোধী প্রচারের ঝড় তোলা। সেই লক্ষ্যে তিনি অবিচল। পরে তৃণমূল সূত্রে বলা হয়, পটনার পর এ বার পঞ্জাবের অমৃতসর এবং গুজরাতের আমদাবাদে সভা করবেন মমতা। তবে সে জন্য সময় নেবেন। কারণ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন আসন্ন। এই সময় কলকাতার বাইরে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে কিছুটা মুশকিল। তবে নিজে যেতে না পারলেও এই সময়টায় দলের অন্য নেতাদের নোট বাতিলের বিরুদ্ধে রাজ্যওয়াড়ি প্রচারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। যেমন, ৮ নভেম্বর ওড়িশার বালেশ্বরে তৃণমূলের প্রতিবাদ সভার নেতৃত্ব দেবেন শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায় এবং মানস ভুঁইয়া। ঝাড়খণ্ডে প্রতিবাদ সভা আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহকে।
তার আগে আজ গর্দনিবাগের মঞ্চ থেকেও মোদীেক আক্রমণ করেন মমতা। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিগ বাজারের বিগ বস এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। তাই পাড়ার মুদি দোকানে খুচরোর আকাল হলেও বিগ বাজারে সঙ্কট হতে দিচ্ছে না কেন্দ্রের সরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy