Advertisement
E-Paper

ভারতের দাদাগিরি নিয়ে সরব মানিক

আগরতলায় ফিকি আয়োজিত শীর্ষ বাণিজ্য সম্মেলন। সেখানেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ‘ভারতের দাদাগিরি’র প্রসঙ্গ টেনে আনায় বিস্মিত দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৭
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সঙ্গে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সঙ্গে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

আগরতলায় ফিকি আয়োজিত শীর্ষ বাণিজ্য সম্মেলন। সেখানেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ‘ভারতের দাদাগিরি’র প্রসঙ্গ টেনে আনায় বিস্মিত দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিরা।

বিদেশি অতিথিদের সামনেই দেশের নীতি, বিশেষ করে বিদেশ নীতির সমালোচনায় একটি অঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরব হতে পারেন কিনা এই কূটনৈতিক প্রশ্নও উঠে গেল মানিকের মন্তব্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিনিধি প্রশ্ন তুলেছেন মানিক সরকারের শিষ্টাচার নিয়েও। তাঁদের বক্তব্য, দেশীয় রাজনীতি যাই হোক না কেন, তা দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। আত্ম-সমালোচনার জন্য ভারতেরই একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন একটি আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রের মঞ্চকে ব্যবহার করলেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। প্রশ্ন উঠেছে, দেশের পশ্চিম অংশে যখন পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে তখন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার কেন দেশি-বিদেশি অতিথিদের সামনে দেশকেই হেয় করলেন?

মঞ্চে বলতে ওঠেন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পার্থ শতপথী। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের বৈদেশিক সম্পর্কের দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে বলে তিনি ব্যাখ্যা দেন। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, চিন, ভারত, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পেলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল-সহ বাংলাদেশেরও আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটবে।

এর পরেই বলতে ওঠেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। স্বদেশের বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিনিধির উদ্দেশে মানিকবাবু বলেন, ‘‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ বৃদ্ধি পেলে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সামাজিক ও আর্থিক সমৃদ্ধি হবে। কিন্তু এ অঞ্চলে ভারতের ‘দাদাগিরি’ র মনোভাব (বিগ ব্রাদারলি অ্যাটিটিউড) বন্ধ করা দরকার।’’ মানিকবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘ভারতীয় সংবিধানে মূল ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের হাতে। পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি তথা শিল্পের জন্য জরুরি পরিবেশ তৈরিতে যে মৌলিক পরিকাঠামোগত উন্নতি প্রয়োজন, অর্থাৎ রেল, বিমান এবং সড়ক পথের উন্নয়ন বা সংস্কার, সব ক্ষমতাই দিল্লিতে কেন্দ্রীভূত।’’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজ্যগুলি কী ভাবে উন্নয়ন করবে? তাঁর বক্তব্য, উত্তর-পূর্বের ‘অনুন্নয়নের’ জন্যই এখানকার যুবকদের একাংশের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতা জন্ম নিচ্ছে। বাড়ছে জঙ্গি সমস্যা।

ফিকি আয়োজিত এই বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে রাশিয়া, জাপান, মায়ানমার, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে ত্রিপুরার বাম-মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে সভার অনেকেই বিস্মিত। বিশেষ করে বিদেশমন্ত্রকের যুগ্মসচিব, কেন্দ্রীয় নীতি আয়োগের সদস্যরা এই পরিস্থিতিতে যথেষ্ট অস্বস্তিতে।

কেন্দ্রের কঠোর সমালোচনা করে মানিকবাবু বলেন, ‘‘যোজনা পর্ষদের অবলুপ্তিতে রাজ্যগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে, ‘নীতি আয়োগ’ তৈরি হওয়ার পরে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আর্থিক বরাদ্দ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।’’ কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তা কমে যাওয়ায় পরিকল্পনা খাতে খরচও কমে গিয়েছে বলে উল্লেখ করে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াং বলেন, ‘‘নীতি আয়োগের আবির্ভাবের পর দেশের কোন কোন রাজ্য উপকৃত হয়েছে, তা জানতে চাই।’’

মানিকবাবু ও জেলিয়াংয়ের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নীতি আয়োগের গুরুত্ব ও ভূমিকা কী, তা স্পষ্ট করেন আয়োগের সদস্য বিবেক দেবরায়। যোজনা পর্ষদ থাকাকালীন জনস্বার্থে ব্যয় করার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ যখন রাজ্যে আসত, সে সময় সেই সরকারি অর্থের খরচ কী ভাবে করা হয়েছে তার জন্য ‘সার্টিফিকেট অব অ্যাপ্রিসিয়েশন’-ই যথেষ্ট ছিল। বিবেকবাবু জানান, এখন তা হবে না। কাজের তদারকি করবে নীতি আয়োগ। কাজ দেখেই মিলবে টাকা।’’

manik sarkar trade conference Tripura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy