Advertisement
০২ ডিসেম্বর ২০২৪

মানিক সরকার বনাম ‘লাল সরকার’ জমজমাট

‘লাল সরকার’ ছবি আপাতত সেন্সর বোর্ডের বিবেচনাধীন। কিন্তু সে ছবির ট্রেলর সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন বিজেপি-র প্রচারের বড় হাতিয়ার। দলের নেতারা মানছেন, গ্রামে গ্রামে ভ্যানে করে দেখানোর পরিকল্পনা থাকলেও ছবির ভাষা হিন্দি হওয়ায় একটু সমস্যা তাঁদের হয়েছে।

প্রথম জন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। তবে ছবির পর্দায়। নাম ‘লাল সরকার’।—নিজস্ব চিত্র।

প্রথম জন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। তবে ছবির পর্দায়। নাম ‘লাল সরকার’।—নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪১
Share: Save:

পর্দায় দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। যাকে তাকে গুম করে দেওয়া হচ্ছে। যখনই দরকার, ডাক পড়ছে দুষ্কৃতী বাহিনীর। মোবাইল কানে সব ঘটনার পিছনে কলকাঠি নেড়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিচ্ছেন, তাঁর ভাবমূর্তিতে কিন্তু দাগ লাগা চলবে না!

নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া হলফনামা দেখাচ্ছে, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সাকুল্যে দু’হাজার ৪১০ টাকা! আয় বলতে সরকারি বেতন। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন চাকুরে স্ত্রীর নামে তিনটি স্থায়ী আমানত আছে ঠিকই। কিন্তু তিন আমানতের যা মোট মূল্য, রাজ্যে বিজেপি-র বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের বাৎসরিক আয় প্রায় তা-ই! নিজের বাড়ি বলতে কিছু নেই। উত্তরাধিকার সূত্রে স্ত্রীর নামে সামান্য জমি আছে। পাঁচ বছর আগে ব্যাঙ্কে যা জমা ছিল, কু়ড়ি বছরের মুখ্যমন্ত্রীর জমানো টাকা তার চেয়েও কমে গিয়েছে!

প্রথম জন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। তবে ছবির পর্দায়। নাম ‘লাল সরকার’।

দ্বিতীয় জনও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। বাস্তবে। নাম মানিক সরকার!

দুই সরকারের যুদ্ধে এখন সরগরম ভোটের ত্রিপুরা। ‘লাল সরকার’ ছবি আপাতত সেন্সর বোর্ডের বিবেচনাধীন। কিন্তু সে ছবির ট্রেলর সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন বিজেপি-র প্রচারের বড় হাতিয়ার। দলের নেতারা মানছেন, গ্রামে গ্রামে ভ্যানে করে দেখানোর পরিকল্পনা থাকলেও ছবির ভাষা হিন্দি হওয়ায় একটু সমস্যা তাঁদের হয়েছে। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার মন্তব্য, ‘‘ত্রিপুরার বাস্তবটা আসলে কী, সেটা সামনে আনার জন্য বই এবং ছবি তৈরি হয়েছে। মানুষ এমনিতেই ত্রিপুরায় কমিউনিস্ট রাজের অবসান চাইছেন। বাস্তবের ছবি দেখলে তাঁদের সিদ্ধান্ত আরও পাকা হবে!’’

বাস্তবের মানিক অবশ্য পর্দার ‘লাল সরকার’কে নিয়ে প্রকাশ্যে এখনও মুখ খোলেননি। ঘনিষ্ঠ মহলে শুধু বলেছেন, বাইরে থেকে বিজেপি নেতারা এসে যত অকথা-কুকথা বলবেন, রাজ্যের মানুষ তত তাঁদের স্বরূপ চিনে নেবেন! সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য ওই ছবির ট্রেলর-প্রচারের কথা নির্বাচন কমিশনের নজরে আনার কথা ভাবছেন। সিপিএমও তাদের সাংস্কৃতিক ফ্রন্টকে কাজে লাগিয়ে ছোট ছোট ভিডিও ক্যাপসুল সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়েছে। সেখানে রাজস্থানের রাজসমন্দে বাঙালি শ্রমিক-হত্যা বা যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে গেরুয়া বাহিনীর তাণ্ডবের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। সঙ্গে অন্তর্নিহিত বার্তা, এরা ক্ষমতায় এলে এমন দিনই আসবে!

ত্রিপুরায় সিপিএমকে সরাতে গেলে তাদের কাণ্ডারী মানিককেই যে আগে কুপোকাত করতে হবে— এই কৌশল আগেই নিয়েছে বিজেপি। সিপিএম নেতারা আবার হলফনামা তুলে পাল্টা দেখাচ্ছেন, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব বা বিধায়ক সুদীপের সম্পত্তির হিসেব মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে ঢের বেশি। বিজেপি-র নিজের ঘরেও কাঁটা কম নেই। দলের প্রাক্তন সভাপতি রণজয় দেব যেমন খোলা বিবৃতি দিয়ে বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। ‘অশক্ত’ আখ্যা দিয়ে বিজেপি এ বার তাঁকে প্রার্থী করেননি। রণজয়বাবু বিজেপি-কে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘‘মানুষ পরিবর্তন চাইছেন ঠিকই। তবে নেতাদের অতি আত্মবিশ্বাস এবং পুরনো কর্মীদের প্রতি অবহেলা তরী ডোবাতে পারে!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy