সারি সারি তানপুরা, স্তূপীকৃত গিটার-তবলা-হারমোনিয়াম, বাঁশরি, খোল— আরও কত কিছুই না অযত্নে নষ্ট হচ্ছে জেলায় আসাম সরকারের সংস্কৃতি দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের দফতরে।
অথচ, বাদ্যযন্ত্রের অভাবে রেওয়াজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না জেলার উদীয়মান শিল্পীরা।
অসমের পরম্পরাগত সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে প্রতিটি জেলায় সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়েছিল সরকার। কিন্তু হাইলাকান্দিতে ওই কেন্দ্রের অবস্থা বেহাল। দু’জন কর্মী সামলাচ্ছেন সব কিছু। তা-ও সব সময় ওই কেন্দ্রে তাঁদের দেখা মেলে না। সরকারের পরিকল্পনা ছিল, ওই সংস্কৃতি কেন্দ্র থেকে দুঃস্থ, প্রতিভাবান শিল্পীদের বিনামূল্যে বাদ্যযন্ত্র বিতরণ করা হবে। সে জন্য প্রচুর বাদ্যসামগ্রী সেখানে মজুত করা হয়। কিন্তু শিল্পীদের হাতে সে সবের কিছুই পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। অনেক যন্ত্র উধাও হয়ে যাচ্ছে। সংস্কৃতি বিভাগ সূত্রে খবর, ২০১০-১১ সালে মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের অধীনে হাইলাকান্দির তিনটি নির্বাচন চক্রের ১৫০টি সাংস্কৃতিক সংস্থার জন্য ১৫০টি হারমোনিয়াম, ১২৬টি তবলা, ৭২টি তানপুরা, ৫৫টি গিটার, ৫৫টি ঢোলক, ৪০ সেট বাঁশি, ৪০টি বিহু ঢোল, ২৪টি খোল এবং ২৪ জোড়া করতাল হাইলাকান্দির সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। প্রশাসনিক হিসেবে, সেগুলি জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থার মধ্যে বিতরণও করা হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাইলাকান্দির কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংস্থা।
‘আনন্দধারা’ সংগঠনের সভাপতি পূরবী মিশ্র বলেন, ‘‘আমরাও ওই কেন্দ্রে বাদ্যযন্ত্রের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’’ ‘প্রহরী’ ক্লাবের সম্পাদক বিকাশ পালের অভিযোগ, অনেক আবেদনেও তাঁরা কিছুই পাননি।
হাইলাকান্দি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের করণিক দীনেশ গোস্বামীর কাছে বাদ্যযন্ত্র বিতরণ হওয়া সংস্থাগুলির তালিকা দেখতে চাইলে, অনেক ক্ষেত্রেই গ্রহীতার পূর্ণ স্বাক্ষরের বদলে টিপসই দেখা যায়। কয়েকটি সংস্থার নাম-ঠিকানার অস্তিত্ব জেলায় মেলেনি। দীনেশবাবুর বক্তব্য, ‘‘হাইলাকান্দির পূর্বতন ডিএমের সুপারিশে ৪টি, খাদ্য ও অসামরিক বিভাগের পূর্বতন আধিকারিকের কথায় ৩টি ও অন্য দুই সরকারি কর্তার সুপারিশে ২৭টি গিটার দেওয়া হয়েছে।’’
তিনি আরও জানান, করিমগঞ্জে কোনও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র না থাকলেও ওই কেন্দ্রের জন্যও ২৫০টি হারমোনিয়াম, ২১০টি তবলা, ১২০টি তানপুরা, ৯১টি গিটার, ৯১টি ঢোলক, ৪০ সেট বাঁশি, ৪০টি বিহু ঢোল, ৫৬টি খোল এবং ৪০ জোড়া করতাল বরাদ্দ করা হয়। করিমগঞ্জের জন্য বরাদ্দ বাদ্যযন্ত্রগুলি পাঠানো হয় হাইলাকান্দির সাংস্কৃতিক কেন্দ্রেই। সেগুলি এখন অযত্নে নষ্ট হছে। আস্তে আস্তে উধাও-ও হয়ে যাচ্ছে। দীনেশবাবু জানান, করিমগঞ্জের জন্য বরাদ্দ কিছু বাদ্যসামগ্রী তিনি হাইলাকান্দির কয়েকটি সংস্থাকেও দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনুরোধেই আমি এই কাজ করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy