Advertisement
১২ ডিসেম্বর ২০২৪
বদল রণকৌশলে

পূর্ব ভারতে নেতা বদল মাওবাদীদের

পূর্ব ভারতে সংগঠনের নতুন সম্পাদক বাছাই করে সংগঠন গুছিয়ে তুলতে রণকৌশল বদলেছে মাওবাদীরা। আরও বেশি কিশোর-কিশোরী নিয়োগ করে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে তারা বড় ধরনের নাশকতার ছক কষছে বলেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।

দিবাকর রায়
পটনা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

পূর্ব ভারতে সংগঠনের নতুন সম্পাদক বাছাই করে সংগঠন গুছিয়ে তুলতে রণকৌশল বদলেছে মাওবাদীরা। আরও বেশি কিশোর-কিশোরী নিয়োগ করে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে তারা বড় ধরনের নাশকতার ছক কষছে বলেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। বিষয়টি নিয়ে চার রাজ্যের পুলিশকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

পুলিশের গুলিতে কিষেণজি নিহত হওয়ার পর থেকে পূর্ব ভারতে মাওবাদীদের নেতৃত্বে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। পর পর কয়েক জনকে অস্থায়ী ভাবে নেতৃত্বে এনেও লাভ হয়নি। এই অঞ্চলে সংগঠনের সার্বিক দায়িত্ব তাই এ বার তুলে দেওয়া হয়েছে বছর ৫১-র প্রতাপ রেড্ডি ওরফে চলপতির হাতে। এর আগে বিশাখাপত্তনমে আদিবাসীদের নিয়ে সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন চলপতি। গোয়েন্দারা বলছেন, সেখানেও একই ভাবে কিশোর বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি।

বিহার পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, গত ১৮ জুলাই গয়া-অরঙ্গাবাদ সীমানায় সিআরপি-র উপর হামলার মাথা ছিলেন চলপতি। ওই হামলায় ১০ জন কোবরা জওয়ান মারা যান। পুলিশের পাল্টা গুলিতে তিন জন মাওবাদীও নিহত হয়। মাওবাদীদের সেন্ট্রাল জোনাল কমিটির মুখপাত্র পরমজিত ঘটনার দায় স্বীকার করে সাংবাদিকদের কাছে বিবৃতি পাঠিয়েছিলেন। মৃত তিন মাওবাদীর পরিচয় দেওয়ার পাশপাশি সিআরপি-কে ‘ফাঁদে ফেলার’ কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। মাওবাদীদের দাবি, পুলিশ ও সিআরপি ওই এলাকায় বিভিন্ন মোবাইল ফোনে আড়ি পাতে। তেমনই একটি নম্বর থেকে অন্য একটি নম্বরে বলা হয়— মাওবাদীদের বৈঠক চলেছে। সেই ‘খবর’ পেয়ে ঘোর বর্ষাতেই জঙ্গলে ঢুকে মাওবাদীদের ফাঁদে পা দেন জওয়ানেরা। এই সাফল্যের পরই চলপতিকে পূর্ব ভারতের সম্পাদক করেছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতা মুপল্লা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতি।

মাওবাদীদের এই নেতৃত্ব পরিবর্তন ও নয়া তৎপরতার উপর নজর রেখেছেন গোয়েন্দারা। কৌশল পরিবর্তনের খবর তাঁরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানিয়েছেন। তার পরেই চলতি মাসের শেষ দিকে দিল্লিতে রাজ্য পুলিশের কর্তাদের বৈঠকে ডেকেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

গোয়েন্দারা জেনেছেন— সম্প্রতি নিজেদের প্রভাবিত এলাকায় ‘শহিদ সপ্তাহ’ পালন করেছে মাওবাদীরা। বিহার-ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া জঙ্গলের এক গ্রামে এই কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন চলপতি। নিরাপত্তা বাহিনীর পর পর অভিযানে সংগঠনের ভালই ক্ষতি হয়েছে বলে বক্তৃতায় স্বীকার করেন তিনি। কর্মীদের নিয়মিত আত্মসমর্পণ নিয়েও তিনি চিন্তিত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই শুধু বিহার-ঝাড়খণ্ড অঞ্চলে পুলি‌শি অভিযানে ৭৬ জন মাওবাদী মারা গিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৬৬৫ জনকে। আর আত্মসমর্পণ করেছে ৬৩৯ জন মাওবাদী নেতা-কর্মী। মাওবাদী নাশকতার ঘটনাও কমে গিয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। তবু মাওবাদীদের ছোট করে দেখছে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ১০টি রাজ্যের ১০৭টি জেলা ‘মাওবাদী উপদ্রুত’ হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। এরই মধ্যে পূর্ব ভারতে মাওবাদীদের নতুন সম্পাদক এবং তাঁর নতুন রণকৌশল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Maoist Eastern India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy