E-Paper

রুবিয়ো চান আলোচনা, দিল্লির পাশে হেগসেথ

কাশ্মীরের পহেলগামে পাকিস্তানের মদতপ্রাপ্ত জঙ্গিরা এসে নিরপরাধ পর্যটকদের প্রাণ নিয়েছে বলে অভিযোগ ভারতের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২৫ ০৮:৫৭
বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো।

বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো। —ফাইল চিত্র।

পহেলগাম কাণ্ড নিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতার মধ্যেই আমেরিকান প্রশাসনের দুই কর্তার সঙ্গে কথা হল ভারতের দুই মন্ত্রীর। বুধবার গভীর রাতে (ভারতীয় সময়) আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো কথা বলেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে। আজ সে দেশের প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের। রুবিয়ো পরামর্শ দিয়েছেন ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করে’ শান্তি ফেরানোর জন্য উদ্যোগী হতে। অন্য দিকে রাজনাথের মন্ত্রক থেকে জানা গিয়েছে যে, হেগসেথের বক্তব্য হল ভারতের ‘আত্মরক্ষার অধিকারের’ পাশে রয়েছে আমেরিকা।

কাশ্মীরের পহেলগামে পাকিস্তানের মদতপ্রাপ্ত জঙ্গিরা এসে নিরপরাধ পর্যটকদের প্রাণ নিয়েছে বলে অভিযোগ ভারতের। আমেরিকা-সহ বিশ্বের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের কাছে (যাদের সঙ্গে ভারতের পোক্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে) ভারত তথ্য-সহ দাবি করেছে, গোটা বিষয়টি আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসেরই নতুন সংস্করণ— পাকিস্তানের সেনার সরাসরি নির্দেশ ও সহায়তা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার গভীর রাতে আমেরিকার বিদেশসচিব ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে পরামর্শ দিলেন ‘উত্তেজনার নিরসন করতে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করুক’। ওয়াশিংটনের এ হেন পরামর্শের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও দেয়নি সাউথ ব্লক। ফোনালাপের পর জয়শঙ্কর তাঁর এক্স হ্যান্ডলে শুধু লেখেন, ‘‘পহেলগামে হামলার বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার রুবিয়োর সঙ্গে আলোচনা করলাম। জঙ্গিরা, হামলার ষড়যন্ত্রকারীরা এবং পৃষ্ঠপোষকদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’’ অন্য দিকে বৃহস্পতিবার ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে এক্স হ্যান্ডলে রাজনাথ-হেগসেথের কথোপকথনের কথা জানানো হয়। রাজনাথ হেগসেথকে বলেছেন, “জঙ্গি সংগঠনগুলিকে টাকা দেওয়া এবং সমর্থন করার ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানের। সে দেশ একটি দুর্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে।” উত্তরে হেগসেথ ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন বলে মন্ত্রক লিখেছে।

তবে কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আমেরিকার বিদেশসচিব অন্তত তাঁদের দক্ষিণ এশিয়া নীতির (ভারত-পাকিস্তান) প্রশ্নে ফের ভারসাম্যের কূটনীতির রাস্তাতেই হাঁটলেন। পহেলগামে জঙ্গি নাশকতার পরপরই দু’দেশকে উদ্ভূত সমস্যার ‘দায়িত্বশীল সমাধান’ খুঁজতে বলেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসও কাল রাতে ওয়েবসাইটে লেখেন, ‘আজ বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকবে আমেরিকা’। ভারত-পাক উত্তেজনা প্রশমনের পরামর্শও দিয়েছেন রুবিয়ো। ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, “দু’দেশের মধ্যে যে উত্তেজনার পরিস্থিতি হয়েছে, তা নিরসনে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করুক। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক ভারত।” পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সঙ্গেও কথা বলেন রুবিয়ো। পরিস্থিতি প্রশমিত করতে উদ্যোগী হতে রুবিয়োকে অনুরোধ করেন পাক প্রধানমন্ত্রী। হামলার তদন্তে পাক কর্মকর্তাদের কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানান আমেরিকার কর্তা।

নয়াদিল্লি সূত্র বলছে, পহেলগামের নাশকতায় পাকিস্তানের ভূমিকা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে যৌথ ভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন সেনার সঙ্গে বৈঠক করে তাদের ‘সম্পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন, তখন এই ধরনের ভারসাম্যমূলক শান্তি প্রয়াস মোদীর ‘বন্ধু’ ট্রাম্পের কাছ থেকে আসা খুব একটা অভিপ্রেত নয় বলে মনে করা হচ্ছে। বরং পাকিস্তানই চাইছে কাশ্মীর নিয়ে হইচই বাড়লে তার আন্তর্জাতিকীকরণ করার, যাতে বিষয়টিকে ফের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা যায়। এই পরিস্থিতিতে সাউথ ব্লক তার পুরনো কথাকে ফের ঝালিয়ে নিয়ে বলছে, অতলান্তিকের ও-পারে বসে ভারতের নিরাপত্তা-ঝুঁকির সঠিক বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয় আমেরিকার পক্ষে।

আমেরিকার প্রতিরক্ষাসচিবের বক্তব্যকে অবশ্য ইতিবাচক ভাবে দেখছে সাউথ ব্লক। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পোস্টে বলা হয়েছে যে, ‘আমেরিকার প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথ আজ সকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং পহেলগামে কাপুরুষোচিত জঙ্গি হামলায় নিরীহ নাগরিকদের মৃত্যুর জন্য গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে আমেরিকার সরকারের দৃঢ় সমর্থনের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি’।

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, গত আড়াই দশক ধরে আমেরিকা পাকিস্তানকে ব্যবহার করে এসেছে আফগানিস্তানে যুদ্ধের জন্য। সেই কারণে তারা পাকিস্তানের জঙ্গিপনা সম্পর্কে ভারতের বিভিন্ন অভিযোগের উত্তরে চোখ বুজে থেকেছে। কিন্তু এই মুহূর্তের ভূকৌশলগত পরিস্থিতি অনুযায়ী কাবুলের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক সংঘাতের। নয়াদিল্লি ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে তালিবান সরকারের সঙ্গে। সাউথ ব্লকের বক্তব্য, মার্কো রুবিয়ো ভারসাম্যের বার্তা দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু পাকিস্তানের জঙ্গি দমনের লড়াইয়ে ওয়াশিংটন পাশেই রয়েছে নয়াদিল্লির। আমেরিকার প্রতিরক্ষাসচিবের সঙ্গে রাজনাথের কথোপকথনেই তা স্পষ্ট।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Marco Rubio United States

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy