হ্যাঁ বলেননি। না-ও। মনের কথাটি খোলসা না করেই জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গড়া নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর কোর্টে বলটি ছুড়ে দিলেন মেহবুবা মুফতি।
পিডিপি-র উপরে পাল্টা চাপ দিতে বিজেপি এ বারে দ্বিমুখী কৌশল নিল। এক দিকে, রাজ্যপালের কাছে দশ দিন পরে আবার সময় চেয়ে নিল। যাতে দশ দিনের মধ্যে মেহবুবা তাঁর মনের কথাটি জানাতে পারেন। দুই, তলে তলে ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে আলোচনা শুরু করল। এই শর্তে যে, ছ’বছরের মধ্যে প্রথম তিন বছর হবে বিজেপি-র সরকার। পরের তিন বছর মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। ফারুককে করা হবে কেন্দ্রের মন্ত্রী। কিন্তু ফারুক রাজি থাকলেও ওমর এখনও বিজেপির সঙ্গে যেতে নারাজ।
মুফতি মহম্মদ সঈদের মৃত্যুর তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও তাঁর মেয়ে মেহবুবা মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে বেঁকে বসেন। তাঁর আশঙ্কা, বিজেপির সঙ্গে গেলে উপত্যকায় দলের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসবে। অগত্যা আজ রাজ্যপাল এন এ ভোরা দুই দলকেই ডেকে জিজ্ঞাসা করেন। বিজেপি গতকাল রাতেই অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে স্থির করেছিল, রাজ্যপালের কাছে গিয়ে পিডিপিকে সমর্থনের কথাই বলা হবে। কারণ, মেহবুবাই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। ফলে সরকার গড়তে হবে তাঁকেই। কিন্তু মেহবুবা ঠিক কী চান, সেটাই স্পষ্ট ছিল না।
আজ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পরেও সেটি স্পষ্ট করলেন না মেহবুবা। বরং সরাসরি নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপর শর্ত আরোপ করে বলটি প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে ঠেলে দিলেন। আর বক্তব্যের পরতে পরতে ছিল বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীর প্রতি কটাক্ষও। বললেন, ‘‘মুফতি সাহেবের মৃত্যুর পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার পর নতুন করে সরকার গড়তে হলে কেন্দ্রকে আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ করতে হবে। আমি মোদীর হাত ধরিনি। আমি সেই মানুষদের হাত ধরেছি, যাঁরা মোদীর হাত ধরেছেন। গত দশ মাসে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সরকার চলেছে। মুফতি সাহেবের যে ভিশন ছিল, সেই অভিজ্ঞতা নেই আমার।’’
মেহবুবার বক্তব্য শুনে বিজেপির কোনও নেতার মনেই কোনও ধন্ধ নেই, সরকার গড়া নিয়ে তিনি যতটা না ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন, নেতিবাচক তার থেকে ঢের বেশি। জম্মু-কাশ্মীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত, আরএসএস থেকে বিজেপিতে আসা নেতা রাম মাধব বলেন, ‘‘নতুন করে আর কোনও শর্তই হতে পারে না। সরকার চালানোর জন্য ইতিমধ্যেই দুই দলের সমঝোতা হয়েছে। আমরা সরকার চালানোর পক্ষপাতী।’’ তবে মেহবুবার বক্তব্য শুনে বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, তিনি নিজের বাবার উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যেতে চাইছেন। সে কারণে নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহের স্তরে কারও সঙ্গে সরাসরি কথা বলার পক্ষপাতী। কিন্তু বিজেপি নেতাদের মতে, যে ‘অপরিপক্ক’ মতিগতি দেখাচ্ছেন মেহবুবা, তাতে শীর্ষস্তরের হস্তক্ষেপেও যে কাজ হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সে কারণে আজ রাজ্যপালের বৈঠকের আগে রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিংহকেই পাঠানো হয়েছে মেহবুবার সঙ্গে কথা বলতে।
সেই বৈঠকের পরেও নির্মল সিংহ বলেন, সরকার চলবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। বিজেপি সূত্রের মতে, তবে নিজের দলের মধ্যে মেহবুবার যে টানাপড়েন রয়েছে, সেটিকে কী করে সামাল দেবেন, তা নিয়ে এখনও বিভ্রান্ত তিনি। গলা থেকে বিজেপি কাঁটা সরালেই তিনি বাঁচেন। তাতে অন্তত খসতে থাকা ভোটব্যাঙ্ক বাঁচাতে পারবেন। কিন্তু আবার হাতের লক্ষ্মী সরকারটি পায়ে ফেলার আফশোসও থেকে যাবে। ফের ভোট হলে এই সুযোগ আসবে কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়।
এই দোটানার মধ্যেই আগামী দশ দিনে দু’পক্ষকেই একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy