পরীক্ষা শেষ হয়েছে আগেই। আজ, রবিবার জানা যাবে নম্বর। বিহারে কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে, বোঝা যাচ্ছে না বুথ-ফেরত সমীক্ষা থেকে। কারণ, এক সমীক্ষা এনডিএ-কে এগিয়ে রাখছে, তো অন্যটা লালু প্রসাদ-নীতীশ কুমারের মহাজোটকে। নিজের পক্ষের সমীক্ষা তুলে ধরে প্রকাশ্যে দুই শিবিরেরই দাবি, সরকার তারাই গড়ছে। কিন্তু অন্দরে কতটা বইছে টেনশনের চোরাস্রোত? ভোট গণনার আগের দিন কী করলেন রথী-মহারথীরা?
নীতীশ কুমার
এই ভোট তাঁর মরণ-বাঁচন লড়াই। কারণ, হারলে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়েই তৈরি হয়ে যাবে প্রশ্ন। এ বারে ভোটটা নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর ইজ্জতের লড়াইও বটে। লোকসভা ভোটে পর্যুদস্ত হওয়ার পরে বিধানসভায় নীতীশ পায়ের তলার মাটি ফিরে পান কি না, সেটাই দেখার। অথচ মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী দিন তিনেক আগে সেই যে ৭ সার্কুলার রোডের বাড়িতে ঢুকেছেন, আর তাঁকে দেখা যায়নি। বাড়ির সামনে অষ্টপ্রহর টিভি চ্যানেলের ওবি ভ্যান। সদর দরজা ফাঁক করে মাঝেমধ্যে দু’এক জন গম্ভীর মুখে ঢুকছেন-বেরোচ্ছেন। সাংবাদিকদের ঢোকা মানা। জানা গেল, পরিচিত কয়েক জনকে নীতীশ নাকি বলেছেন, যতটা আশা করা গিয়েছিল, ফল ততটা ভাল হচ্ছে না। তবে সরকার গড়া নিয়ে আশাবাদী।
লালু প্রসাদ
বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে নীতীশের মতো বাঁচা-মরার লড়াই নয়। কারণ, তিনি বা রাবড়ি দেবী মুখ্যমন্ত্রী হবেন না। মহাজোট সরকার গড়তে না পারলে তাঁর তেমন রাজনৈতিক ক্ষতি নেই। আবার মহাজোট সরকার গড়লে রাশ অনেকটাই লালুর হাতে থাকবে। সেই সঙ্গে দুই ছেলে বিধায়ক হয়ে গেলে দাপট আরও বাড়বে। শনিবার আরজেডি দফতরে ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে হাল্কা মেজাজে দু’আঙুলে ভিকট্রি চিহ্ন তুলে বললেন, ‘‘১৯০টি আসনে জিতে আমরাই ক্ষমতায় আসছি। বিজেপি-আরএসএস বিভ্রান্ত করার জন্য বুথ-ফেরত সমীক্ষা করিয়েছে। এ সব ফালতু!’’
সুশীলকুমার মোদী
বিহারে বিজেপির ‘মুখ’ বলতে তিনিই। তাই হারলে অনেকটাই দায় চাপবে। আবার বিজেপি জিতলেও সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রী হবেন না বলে খবর। আক্ষেপ সেটাই। সমসাময়িক লালু-নীতীশরা মুখ্যমন্ত্রী হলেও তাঁর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি এক বারও। অথচ প্রায় সাত বছর উপ-মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এখন নজর ভোটের ফল ও সোমবার দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে। শনিবার নিজের বাড়িতেই ছিলেন। সংবাদমাধ্যমের কাছে তেমন ধরা দেননি। তবে পরিচিত সাংবাদিককে লিখে দিয়েছেন, ‘ক্ষমতায় আসছি’।
জিতনরাম মাঁঝি
গয়ার কাছে গ্রামের বাড়িতে সারা দিন বিশ্রাম করে রাতে পটনায় ফিরেছেন নীতীশের হাত ছেড়ে বিজেপির সঙ্গে যাওয়া প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এমনিতে এই ভোট থেকে তাঁর পাওয়ারও খুব কিছু নেই, হারানোরও নেই। তাই টেনশন নেই একরত্তি। তবে নীতীশের যাত্রাভঙ্গ হলে খুশিই হবেন।
রামবিলাস পাসোয়ান
পাসোয়ানেরও কিছু আসে-যায় না। রাজ্যে তাঁর কিছু পাওয়ার নেই। কেন্দ্রের মন্ত্রিত্ব থাকলেই হল। সুতরাং দু’মাসের প্রচার পর্ব সেরে তিনি এখন দিল্লিতে। ফের জিমে যাওয়া শুরু করেছেন ছেলে চিরাগও। তবে উদ্বেগ একটাই— তাঁর ভূমিকায় নাকি খুশি নন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এনডিএ হারলে দিল্লির গদি টলমলে।
অমিত শাহ
লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে বিরোধীদের সাফ করে দিয়েছিলেন। এ বার বিহারে ঘাঁটি গেড়ে বসে ছিলেন। হারলে বিজেপি সভাপতির পদ হয়তো খোয়া যাবে না, কিন্তু দিল্লি বিধানসভায় বিপর্যয়ের পর আরও এক দফা বিরাট ধাক্কা খাবেন। তাই ইজ্জতের লড়াই। এ দিন দিল্লির বাড়িতেই ছিলেন, রুটিন বৈঠক করেছেন।
এবং... নরেন্দ্র মোদী
আপাত ভাবে বিহার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কিছু যায়-আসে না। আবার, যায়-আসেও। কারণ, বিহার ভোটে তিনিই ছিলেন এনডিএ-র মুখ। নীতীশের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক বহু দিন তলানিতে। লোকসভা ভোটের আগে দল তাঁকে প্রচার কমিটির প্রধান করতেই ১৭ বছরের জোট ভাঙেন নীতীশ। বিহারে সরকার গড়া না গেলে ‘মোদী ম্যাজিক ভ্যানিশ’ ধুয়োটাও শুনতে হবে। শনিবার অবশ্য বিহার নিয়ে বিশেষ ভাবনার সময় পাননি মোদী। দিন কেটেছে কাশ্মীরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy