Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে চিনকে কড়া বার্তা

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে রেলপথ তৈরির কাজ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য চিনের কাছে দাবি জানাল ভারত। চিনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং-এর সঙ্গে গত সপ্তাহের বৈঠকেও এই দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত সপ্তাহে ‘চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক’ শীর্ষক বিদেশ মন্ত্রকের একটি অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে ভারতের এই প্রতিবাদের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০২:২০
Share: Save:

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে রেলপথ তৈরির কাজ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য চিনের কাছে দাবি জানাল ভারত। চিনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং-এর সঙ্গে গত সপ্তাহের বৈঠকেও এই দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত সপ্তাহে ‘চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক’ শীর্ষক বিদেশ মন্ত্রকের একটি অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে ভারতের এই প্রতিবাদের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি ব্রাজিলে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে গিয়ে চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মোদী। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য অনুযায়ী, সেই বৈঠকের সুর ছিল একই সঙ্গে নরম এবং গরম। এক দিকে তিনি চিনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়িয়ে নিয়ে যেতে সর্বাঙ্গীন সহযোগিতার কথা বলেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, আমদানির তুলনায় রফতানির অঙ্কের যে বিপুল ফারাক রয়েছে, সেটা কমাতে আগ্রহী তাঁর সরকার। চিনের প্রেসিডেন্টকে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত তাঁর সরকার নিয়েছে, তার সুযোগও চিন নিতে পারে।

কিন্তু পাশাপাশি সাউথ ব্লকের অস্বস্তির কথাও তিনি প্রথম বৈঠকেই জানিয়ে দিয়েছেন চিনের সর্বোচ্চ নেতাকে। প্রায় ৮০ মিনিটের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের অনেকটাই ব্যয় হয়েছে সীমান্ত-আলোচনায়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত এবং চিন শান্তিপূর্ণ ভাবে সীমান্ত সমস্যা মেটাতে পারলে তা গোটা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে। মোদী এ কথাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অরুণাচলপ্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

মোদী ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই চিনের সঙ্গে একাধিক শীর্ষ বৈঠক হয়ে গিয়েছে। বাণিজ্য আলোচনাও শুরু হয়েছে। তার মধ্যেও বেজিং কিন্তু ভারতের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলতে ছাড়েনি। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যেমন অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তেমনই সে দেশের মানচিত্রে অরুণাচলকে চিনের অংশ হিসাবে দেখিয়ে কিছুটা স্নায়ুর চাপে ফেলে দেওয়া হয়েছে ভারতের নতুন সরকারকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ব্রিকস বৈঠকের ঠিক আগে সে দেশের সরকারের পক্ষ থেকে চিনা সেনাদের একটি মানচিত্র বিলি করা হয়, যেখানে অরুণাচলকে চিনের অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছে।

স্নায়ুর যুদ্ধে মোদী সরকার যে নতি স্বীকার করবে না, তা বিদেশ মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টটিতে জানানো হয়েছে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের তৈরি এই রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ‘চিন তার পূর্ব সীমান্তে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জমি নিজের বলে দাবি করে আসছে। এ’টি অরুণাচলপ্রদেশে পড়ে। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীরের আনুমানিক ৩৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা চিন দখল করে রেখেছে। এ ছাড়াও ১৯৬৩ সালের ২ মার্চ চিন এবং পাকিস্তানের মধ্যে তথাকথিত সীমান্ত চুক্তি সই হয়। তার মধ্যে বেআইনি ভাবে পাকিস্তান ভারতের ৫,১৮০ বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ড (পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে) চিনকে দিয়ে দেয়।’ এর পরই বলা হয়েছে, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট রয়েছে যে পাক অধিকৃত অংশের মধ্যে দিয়ে রেল যোগাযোগ গড়ে তুলছে চিন। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চিনের কার্যকলাপ নিয়ে ইতিমধ্যেই ভারত তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছে এবং এ সব কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে।’

ক্ষমতায় আসার পরই এক দিকে যেমন বিদেশি নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো এবং বৈঠকে বসা শুরু করেছিলেন মোদী, পাশাপাশি সমস্যার ক্ষেত্রগুলিও চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াও শুরু করেছিলেন। প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে বসে চিন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ও সমস্যা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেন তিনি। মেনন নরেন্দ্র মোদীকে জানান, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চিনা রেলপথ নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে সরব না হলেও সাধারণ ভাবে সেখানকার কার্যকলাপ নিয়ে এর আগে বেজিংকে নালিশ জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ বিশেষ হয়নি।

মোদীর দৌত্যে চিনা নীতি বদলায় কি না,সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kashmir china agni roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE