গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
#মিটু-র আঁচ এবার বিচার বিভাগেও। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের প্রাক্তন এক বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ জেলা আদালতের এক বিচারক। চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন বিচারক। সেই মামলা গ্রহণ করে ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে নোটিস জারি করেছে শীর্ষ আদালত। ছ’সপ্তাহ পর মামলার ফের শুনানি। অন্যদিকে শুক্রবারই #মিটু আন্দোলন সমর্থন করেছেন বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি গৌতম প্যাটেলও। তাঁর মন্তব্য, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বিচারব্যবস্থার মধ্যেও যৌন হেনস্থার মতো ঘটনা আকছার ঘটে।
ওই মহিলা বিচারকের অভিযোগ, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয় যৌন হেনস্থা। তদন্তের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময় অভিযুক্ত বিচারপতির বাড়িতে একটি পার্টি ছিল। অভিযোগ, এক আদালত কর্মীর মাধ্যমে ওই অভিযোকারিণী বিচারককে তিনি খবর পাঠান, একটি আইটেম সং-এর সঙ্গে নাচ করতে। কিন্তু মেয়ের জন্মদিন আছে বলে ওই পার্টি এড়িয়ে যান মহিলা বিচারক। পরের দিনই বিচারপতি মেসেজ করেন, ‘‘এক আইটেম সংয়ের ছন্দে এক সুন্দরী মহিলার নাচ দেখা থেকে বঞ্চিত হলাম।’’
মহিলা বিচারপতির অভিযোগ, তার পরও নানা রকম অশ্লীল ইঙ্গিত করে মেসেজ করতে থাকেন ওই বিচারপতি। কিন্তু তাতে কোনও সাড়া না দেওয়ায় তাঁর উপর প্রতিশোধ নিতে বদলি করে দেন বলে অভিযোগ জানান মহিলা বিচারক। তাঁর দাবি, তখন তাঁর মেয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছিল। তাই তাঁর পক্ষে সেই সময় অন্যত্র কাজে যাওয়া সম্ভব ছিল না। বাধ্য হয়ে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই তিনি বাধ্য হয়ে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। তাঁকে বেআইনি ভাবে বদলি করা হয় বলেও অভিযোগ মহিলা বিচারকের।
আরও পড়ুন: ১৩৬ যাত্রী নিয়ে পাঁচিল ভেঙে উড়ে গেল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান!
এই ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা বিচারক। চাকরি ফিরে পাওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। ঘটনার তদন্তে তিন বিচারকের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানিতে ওই তদন্ত কমিটি মতামত দেয়, যৌন হেনস্থার অভিযোগের সরাসরি প্রমাণ না থাকলেও মহিলা বিচারকের বদলি যে বেআইনি ভাবে করা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে তা স্পষ্ট।
মহিলাও শীর্ষ আদালতে জানিয়েছেন, তিনি স্বেচ্ছায় বা নীতিগতভাবে চাকরি থেকে ইস্তফা দেননি। বরং পরিস্থিতির চাপ তাঁকে বাধ্য করেছে ওই সিদ্ধান্ত নিতে। তাঁর বদলি ছিল অনিয়মিত, বেআইনি, শাস্তিমূলক ও স্বেচ্ছাচারী। তাই চাকরি ফিরে পেতে চান তিনি।
আরও পড়ুন: পুজোয় সরকারি অনুদানে স্থগিতাদেশ নয়, সুপ্রিম কোর্টেও স্বস্তি রাজ্যের
পাশ্চাত্যে শুরু হলেও নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে তনুশ্রী দত্ত অভিযোগ তোলার পর এ দেশেও গতি পেয়েছে #মিটু আন্দোলন। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন ক্ষেত্রের অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। এবার সেই আন্দোলনের ঢেউ বিচার বিভাগেও। সেই আর্জিই গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
অন্যদিকে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি গৌতম প্যাটেল শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেন, যেসব মহিলারা তাঁদের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন, তাঁদের তিনি পূর্ণ সমর্থন করেন। তিনি আরও বলেন, বিচার ব্যবস্থার মধ্যেও পিতৃতান্ত্রিকতা রয়েছে। কোনও মহিলার বুদ্ধিমত্তা দক্ষতা ও অন্য সমস্ত গুণ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে শুধু মহিলা বলেই এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। এটা সর্বত্রই ঘটে। বিচার ব্যবস্থার মধ্যেও আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy