Advertisement
E-Paper

পুলিশ হতে চেয়েছিল জঙ্গি মনজয়, দাবি আত্মীয়দের

বড় হয়ে পুলিশ হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। হাতে তুলে নিতে চেয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার। কিন্তু সেই হাতেই খুন হয়ে গেল এত জন নিরীহ মানুষ!কোকরাঝাড়ের গোঁসাইগাঁও মহকুমায় ২ নম্বর পাখিরিগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা লাচিত ইসলারির ছেলে মনজয়ের ইচ্ছা ছিল, বড় হয়ে পুলিশ হওয়ার। হাতে থাকবে রাইফেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৫
কোকরাঝাড়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। রবিবার রাজীব চৌধুরীর তোলা ছবি।

কোকরাঝাড়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। রবিবার রাজীব চৌধুরীর তোলা ছবি।

বড় হয়ে পুলিশ হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। হাতে তুলে নিতে চেয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার। কিন্তু সেই হাতেই খুন হয়ে গেল এত জন নিরীহ মানুষ!

কোকরাঝাড়ের গোঁসাইগাঁও মহকুমায় ২ নম্বর পাখিরিগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা লাচিত ইসলারির ছেলে মনজয়ের ইচ্ছা ছিল, বড় হয়ে পুলিশ হওয়ার। হাতে থাকবে রাইফেল। বীরদর্পে ঘুরবে সর্বত্র। সকলে সেলাম ঠুকবে। কিন্তু পুলিশ নিয়োগ বা সেনা নিয়োগের পরীক্ষাগুলিতে বারবার অংশ নিয়েও ব্যর্থ হয় সে। শেষপর্যন্ত রাইফেল হাতে ঘোরার স্বপ্নপূরণ হয় বটে। তবে জঙ্গি দলে নাম লিখিয়ে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ২২-২৩ বছর বয়সে এনডিএফবিতে যোগ দিয়ে ঘরছাড়া ছেলের ক্ষতবিক্ষত দেহ, গুলিতে উপড়ে বেরিয়ে আসা চোখ দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠেন মা। কিন্তু বাবা লাচিত বার দু’য়েক দেহ খুঁটিয়ে দেখে মাথা নাড়েন। গত ২৪ ঘণ্টায় নিজের সিদ্ধান্ত অনড় তিনি। হত্যাকারী জঙ্গির গুলিবিদ্ধ দেহ তাঁর ছেলে মনজয়ের হতেই পারে না। ছোটবেলায় পুড়ে গিয়েছিল বুকের অনেকটা অংশ। সেই পোড়া দাগ মোটেই দেখা যাচ্ছে না নিহত যুবকের বুকে। কিন্তু নিহত জঙ্গি যে মনজয়ই সেই দাবিতে একই রকম অনড় পুলিশ-প্রশাসনও। তাই সন্দেহ কাটাতে শেষ ভরসা ডিএনএ পরীক্ষা।

অসমের ডিজিপি মুকেশ সহায় বলেন, “সম্ভবত গুলি ও অন্য জখমে ক্ষতবিক্ষত মুখ ও শরীর দেখে ছেলেকে চিনতে পারছেন না বাবা-মা। আমরা ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করাচ্ছি।”

এ দিকে, একই সঙ্গে সংগ্রামপন্থী এনডিএফবির সাধারণ সম্পাদক বি আর ফেরেঙ্গা ও গোঁসাইগাঁওয়ের ২ নম্বর পাখিরিগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা মনজয়ের পরিবারের অন্য সদস্যদের দাবি— সেনা ও পুলিশ মনজয়কে কয়েক দিন আগেই ভুটান সীমান্তের জঙ্গল থেকে গ্রেফতার করেছিল। ফেরেঙ্গা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোনে সংবাদমাধ্যমকে জানায়, মে মাসে রিপু সংরক্ষিত অরণ্যে সংগঠনের ঘাঁটি উৎখাত করে তাদের এক সদস্যকে গুলি করে মারে পুলিশ। তখন থেকেই মনজয়ের খোঁজ মিলছিল না। দু’মাস দলের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখায় তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। ফেরেঙ্গার দাবি, বড়োদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী অশান্তি সৃষ্টি, এনডিএফবির বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও রাজ্যের অন্য বড় সমস্যা থেকে মানুষোর নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে, ধৃত মনজয়ের মগজধোলাই করে তাকে দিয়ে ভারতীয় বাহিনীই এই কাজ করিয়েছে।

কোকরাঝাড়-কাণ্ডে নিহত জঙ্গির পরিচয় নিয়ে নিশ্চিত না হওয়ার পাশাপাশি, পুলিশের মুখ পুড়েছে ঘটনার দু’দিন পরেও গুলি চালিয়ে পালানো বাকি জঙ্গি বা জঙ্গিদের ধরতে না পারায়। আজ সকালে কোকরাঝাড়ে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। প্রথমে ডিজিপি মুকেশ সহায় ও আইজি এল আর বিষ্ণোইকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল বালাজান বাজার ঘুরে দেখেন তিনি। পরে সার্কিট হাউসে ইউনিফায়েড কম্যান্ডের বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, যে ভাবে হোক ঘটনায় জড়িত জঙ্গিদের খুঁজে বের করতে হবে। নির্মূল করতে হবে সংগ্রামপন্থী এনডিএফবিকে। অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, মায়ানমারে এনডিএফবি বাহিনীতে শ’খানেক জঙ্গি থাকতে পারে। তবে রাজ্যে এনডিএফবি জঙ্গির সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ জন।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিহত ১৪ জনের পরিবারের হাতে ৫ লক্ষ করে টাকার চেক তুলে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিটিসি প্রশাসনও পরিবারপিছু এক লক্ষ টাকা করে সাহায্য দেবে। ঘটনা নিয়ে নিজেদের মতো করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে এনআইএ।

মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি প্রফুল্ল মহন্তর নেতৃত্বে অগপ প্রতিনিধিদল, শিল্প প্রতিমন্ত্রী পল্লবলোচন দাস, আলফা সভাপতি অরবিন্দ রাজখোয়ার নেতৃত্বে আলফার প্রতিনিধিদলও এ দিন ঘটনাস্থলে যায়। মহন্তর সফরের সময় স্থানীয় মানুষ পুলিশের নামে মুর্দাবাদ স্লোগান দেয়। তাঁদের দাবি, ডিজিপি বা মন্ত্রীরা ঘটনার ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ এসেছে বলে জানালেও, বাস্তবে পুলিশ অভিযান শুরু করে প্রায় ৪০ মিনিট পরে। তাই অন্য জঙ্গিরা নিশ্চিন্তে গণহত্যা চালিয়ে এলাকা ছেড়ে পালায়। কিন্তু মনজয় কেন রাইফেল উঁচিয়ে জওয়ানদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিল- তা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

নিহতদের পরিজনের সঙ্গে দেখা করে রাজখোয়া বলেন, “নিরীহদের হত্যা করা কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এই একই ভুল আলফাও করেছিল। আজ তা আরও বেশি করে উপলব্ধি করছি।”

এ দিকে, ত্রস্ত রাজ্য এখন সিঁদুরে মেঘ দেখেই ডরাচ্ছে। কোকরাঝাড় কাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার মাথায় বিশ্বনাথ জেলায় এ দিন ছিল হাটবার। কিন্তু ভোর বেলা চতিয়া স্টেশন রোডে, গেরেকিগ্রামে হাত রাইফেল, মুখে কালো কাপড় বাঁধা পাঁচ যুবককে যেতে দেখে ছুটে গিয়ে থানায় খবর দেয় এক কিশোর। তার পর থেকেই আতঙ্ক ছড়ায় আশপাশের অঞ্চলে। অভিযানে নেমে পড়ে পুলিশ ও সেনা। ঘরে ঘরে চলে তল্লাশি। পাওয়া যায়নি কাউকেই। কিন্তু আতঙ্কে আজকের হাটবারে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা ছিল হাতেগোণা। পাশাপাশি বিশ্বনাথ শহর থেকে ধরা পড়েছে অল অসম রেভেলিউশনারি আর্মির কম্যান্ডার বিপুল রাভা। উদ্ধার হয় গুলি, হুমকি চিঠি।

Manjay kokrajhar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy