Advertisement
E-Paper

মন্ত্রীরাও গবেষণায়, জানেন কেবল মোদীই

ঠিক দু’সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে বলেছিলেন, আপাতত তাঁকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্বটাও সামলে যেতে হবে। চাপ সামলাতে অর্থ ও প্রতিরক্ষা দু’টি মন্ত্রকেই দু’জন শক্তিশালী প্রতিমন্ত্রী খুঁজে নেওয়া হবে বলে স্থির হয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অরুণ জেটলি নিজেই গত কাল প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, যে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপরে ছেড়ে দিয়েছেন।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৫

ঠিক দু’সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে বলেছিলেন, আপাতত তাঁকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্বটাও সামলে যেতে হবে। চাপ সামলাতে অর্থ ও প্রতিরক্ষা দু’টি মন্ত্রকেই দু’জন শক্তিশালী প্রতিমন্ত্রী খুঁজে নেওয়া হবে বলে স্থির হয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অরুণ জেটলি নিজেই গত কাল প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, যে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপরে ছেড়ে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে জেটলি আজ বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রক যখন আমাকে দেওয়া হয়েছিল, তখনই সেটা অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল। এই মন্ত্রকটি যে কোনও সময়ে আমি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই দায়িত্ব নিয়েছি। তিনি বললেই ছেড়ে দেব।” আসলে দু’টি কারণে প্রধানমন্ত্রী জেটলিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব থেকে সরাতে চাইছিলেন না। প্রথম কারণ, এই মুহূর্তে বেশ কিছু বড় প্রতিরক্ষা-চুক্তির কথা চলছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা ৪৯ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। ফলে বিদেশি সংস্থাগুলি সরাসরি এ বার দেশি সংস্থার সঙ্গে দরপত্র জমা দেবে। অতীতে এনডিএ জমানায় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তহেলকা কাণ্ডের মতো দুর্নীতি হয়েছিল। এর পরে কংগ্রেসের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি ভয়ের চোটে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের চুক্তিগুলি কার্যত ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেন। এই অবস্থায় জেটলির সৎ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি এবং তাঁর আইনি বুদ্ধি প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে কিছুটা আশ্বস্ত করে রেখেছে। তা ছাড়া প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের উদ্দেশ্যে একটি সরকারি নীতি তৈরি করার কাজও শুরু করেছেন জেটলি। তা শেষ করা পর্যন্ত কাজটা চালিয়ে যেতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

এ ক্ষেত্রে সমস্যা দাঁড়িয়েছে দু’টি। প্রথমটি জেটলির স্বাস্থ্য। পাকস্থলীর বাইপাস সার্জারির পর এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ। প্রায় ২৫ কেজি ওজন কমেছে। কিন্তু জেটলির পরিবারও মনে করে, বাজেটের মাত্র মাস তিন বাকি। গত বার জেটলি সংসদেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বাজেটের সময়। সে ক্ষেত্রে পাল্টা প্রস্তাব হল, এমন কাউকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হোক, যাঁকে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে জেটলিও সব রকম সাহায্য করতে পারবেন।

আরও একটি বিষয় হল, মোদীর মন্ত্রিসভায় প্রতিভা ও যোগ্যতার অভাব রয়েছে। সে কারণেও জেটলির উপরে চাপ রয়েছে। কিন্তু রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজের মতো প্রবীণ মন্ত্রীরা জেটলির এই রমরমাটা ঠিক পছন্দ করছেন না। সেই উষ্মা নিয়ে মন্ত্রিসভার মধ্যে চাপা উত্তেজনাও রয়েছে। রাজনাথ আনুষ্ঠানিক ভাবে মন্ত্রিসভায় দু’নম্বর। কিন্তু বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জেটলিই। তাঁকে প্রতিরক্ষা থেকে সরালে সেই উষ্মা কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।

এ বার প্রশ্ন, প্রতিরক্ষা তবে কাকে দেওয়া হবে? অরুণ শৌরি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। নাগপুরে সঙ্ঘের দ্বারস্থও হয়েছিলেন তিনি। মোদীর সঙ্গে শৌরির সম্পর্ক তেমন খারাপ নয়। কিন্তু জেটলির সঙ্গে শৌরির বাক্যালাপও নেই। এ অবস্থায় নাগপুরেরও পছন্দের প্রার্থী গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্কর। মনোহরের বয়স কম। শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, জেটলির সঙ্গেও সম্পর্ক ভাল। জেটলিও মনে করছেন, শৌরির চেয়ে পারিক্করেরই প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়া বাঞ্ছনীয়। কোনও কোনও মহল থেকে শিবসেনা নেতা সুরেশ প্রভুর নামও তোলা হয়েছিল। সুরেশকে প্রধানমন্ত্রী পছন্দও করেন। বিজেপির মধ্যে মন্ত্রী হিসেবে যোগ্য প্রতিভা খুঁজতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেখানে হিমশিম খাচ্ছেন, সে দিক দিয়ে সুরেশ ভাল প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু সঙ্ঘ চায়, প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ, এবং স্বরাষ্ট্র এই চারটি মন্ত্রক বিজেপি নিজের হাতে রাখুক। তা ছাড়া সুরেশকে ইতিমধ্যেই জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের শেরপা করেছেন মোদী। তাঁর জন্য সাউথ ব্লকে একটি বিশেষ ঘরের ব্যবস্থাও হয়েছে। দিল্লিতে কংগ্রেস থেকে বিজেপি, সকলেই সুরেশকে যোগ্য বলে মনে করলে কী হবে, শিবসেনা তাঁকে মন্ত্রী করতে চায় কি না, সেটাও কিন্তু একটা বড় প্রশ্ন।

আগামিকাল বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক বসছে। সেখানে পারিক্করকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঠিক হয়েছে, পারিক্করকে ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যসভার সদস্য করা হবে। তবে মজার ব্যপার হল, প্রধানমন্ত্রী যে পারিক্করকেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী করবেন, সেটা এখনও স্পষ্ট করে জানাননি তাঁকে। যেমন জানাননি জেটলিকেও।

মন্ত্রিসভা গঠন, সম্প্রসারণ বা দফতর বণ্টনের ব্যাপারে মোদীর এই রাজনৈতিক স্টাইলের সঙ্গে মিল আছে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর। তিনিও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর ঘনিষ্ঠ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও সিদ্ধান্ত জানতে দিতেন না। অনেক মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে দেখা করে রাজ্যে ফিরে গিয়ে জানতে পেরেছেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হবে। কিন্তু অটলবিহারী বাজপেয়ী বা নরসিংহ রাওয়ের সময় মন্ত্রিসভা গঠন নিয়েও আলোচনা হতো। মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে সনিয়া গাঁধী, আহমেদ পটেলের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রিসভা গঠন করতেন, যেটাকে ‘কোর গ্রুপ’ বলা হতো। রবিবার দুপুর একটায় রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। তার আগে নতুন মন্ত্রীদের সকাল ন’টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাসভবনে প্রাতরাশ বৈঠকে ডাকতে পারেন। শিবসেনার কয়েক জনকে মন্ত্রী করার বিষয়টি নিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে উদ্ধবের আলাপ আলোচনা চলছে। আপাতত উদ্ধব ঠাকরের প্রস্তাব, অনিল দেশাইকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করা হোক।

জেটলির কথা আলাদা। চাপ কমাতেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বাড়তি দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি, অর্থ মন্ত্রকে প্রতিমন্ত্রী করে আনা হতে পারে যশবন্ত সিন্হার ছেলে জয়ন্ত সিন্হাকে। বিজেপির অন্য মন্ত্রীদের অনেকেই কিন্তু যথেষ্ট উদ্বেগে। কতটা রদবদল হবে, কার কাছ থেকে কোন মন্ত্রক নিয়ে নেওয়া হবে, কেউই কিছু জানেন না। একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা নিতিন গডকড়ীর ভার কিছুটা লাঘব করা হতে পারে। নির্মলা সীতারামন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত বাণিজ্য মন্ত্রী এবং অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। দ্বিতীয় দায়িত্বটি থেকে সরিয়ে তাঁকে বাণিজ্যের পূর্ণমন্ত্রী করার কথা চলছে। তবে রবিবার কী ঘটতে চলেছে, সেটা নিজের কাছেই রেখেছেন মোদী। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে নির্মলা বলেন, “আপনারা যেমন কে কী মন্ত্রক পেতে পারেন, তা নিয়ে গবেষণা করছেন, সত্যি কথা বলতে কি, আমরাও সেই রকমই জল্পনাকল্পনা করছি। কী হবে এবং কী হবে না, সেটা জানেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।”

রবিশঙ্কর আইন ও টেলিকম মন্ত্রকের দায়িত্বে আছেন। একটি মন্ত্রক ছাড়তে হতে পারে শুনে টেলিকম নিজের হাতে রাখার চেষ্টা করছেন। সূত্রের খবর, মন্ত্রী হতে পারেন অনুরাগ ঠাকুর, মীনাক্ষী লেখি, মুখতার আব্বাস নকভি, জে পি নাড্ডা ও রাজীবপ্রতাপ রুডি। বিজেপি নেতারা বলছেন, ১০ থেকে ১৫ জন মন্ত্রী শপথ নেবেন। হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের কিছু সাংসদ মন্ত্রী হতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গ তো আছেই।

union ministry cabinet ministers jayanta ghoshal modi Modi know research Ministers bjp vote online news national news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy