দাবি করেছিল বিভিন্ন শিবির। আবার বিরোধিতাও ছিল। শেষ পর্যন্ত লোকসভায় পাশ হল নাবালক বিচার (শিশু রক্ষণাবেক্ষণ) বিল। ফলে, ধর্ষণ ও খুনের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে নাবালকদেরও শাস্তির ব্যবস্থা করার পথে এক ধাপ এগোল মোদী সরকার।
নির্ভয়ার ধর্ষণ ও খুনে এক নাবালক জড়িত ছিল। কিন্তু নাবালক আইনে তার বিচার হওয়ায় কড়া শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেয়েছে সে। ওই ঘটনার পরেই গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে নাবালকদেরও সাধারণ আইনে বিচার করে কড়া শাস্তি দেওয়ার দাবি তোলে বিভিন্ন শিবির। ইউপিএ জমানাতেই এই বিষয়ে চিন্তা শুরু হয়। শেষে মোদীর জমানাতে এই বিষয়ে পদক্ষেপ কেন্দ্রের। কিন্তু এই বিলেও বিরোধীদের কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। শশী তারুর, এন কে প্রেমচন্দ্রনের মতো বিরোধী সাংসদের দাবি, স্থায়ী কমিটির সুপারিশ সরকার মানেনি। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেও ১৬-১৮ বছর বয়সীদের সাধারণ আইনে বিচার করার ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু ওই বয়সীদের সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা দিয়ে সংশোধনের চেষ্টা করা উচিত বলে মত প্রকাশ করেছিল স্থায়ী কমিটি। সবচেয়ে বেশি কটাক্ষের মুখে পড়েন নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মেনকা গাঁধী। মেনকা পশুপ্রেমী হলে নাবালকদের নিয়ে মাথাব্যথা নেই বলে কটাক্ষ করেন বিরোধীরা। জবাবে মেনকা বলেন, ‘‘হৃদয়ের দরজা খুললে পশু, মানুষ-সকলের জন্যই খোলে। আমি শুধু পশুকল্যাণের চেষ্টা করি না, শিশু উদ্ধার কেন্দ্রও চালাই। সেখানে দু’হাজারের বেশি শিশু রয়েছে।’’
মেনকার দাবি, নয়া আইনে কড়া শাস্তির প্রয়োজন ও নাবালকদের সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির ১৩টি সুপারিশের মধ্যে ১১টি মেনেছে সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘নয়া আইনে যে শাস্তি হোক, ১৬ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সীরা সংশোধনাগারেই থাকবে। ২১ বছর বয়স হলে তাদের আচরণ খতিয়ে দেখা হবে। শুধরে গেলে শাস্তি কমানোও হতে পারে।’’ নাবালকদের সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এই পদক্ষেপ বলে দাবি মেনকার।
নয়া আইনের পক্ষে সওয়াল করেন মেনকা। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়স নিয়ে আপত্তির জবাবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘১৬ বছর কড়া শাস্তির পক্ষে কম বয়স নয়। বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতির উপরে এই বয়সসীমা নির্ধারণের বিষয়টি নির্ভর করে। ইংল্যান্ড, আমেরিকায় তা ১০ বছর। আবার আর্জেন্তিনায় তা ১৬ বছর।’’
কেবল নির্ভয়া কাণ্ডে এক নাবালক জড়িত থাকায় আমূল পরিবর্তনে আপত্তি ছিল বিরোধীদের একাংশের। মেনকার জবাব, ‘‘একটিমাত্র অপরাধ হলেও শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন।’’ লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। রাজ্যসভায় পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানে কী হয়, তাই এখন দেখার।