Advertisement
E-Paper

দিল্লিতে বিক্রি হয়ে যাওয়া বাংলার পিঙ্কি ধরিয়ে দিল দেহব্যবসা চক্র

অভাবের সংসার। পরিবারের স্বার্থে বয়স হওয়ার আগেই বড় হতে হবে তাকে। বুঝে নিয়েছিল পিঙ্কি (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু কাজের খোঁজে বেরিয়ে হারিয়ে যেতে হবে, দুঃস্বপ্নেও সে ভাবেনি। বয়স ১৮ ছাড়ায়নি। নানা প্রতিবন্ধকতায় লেখাপড়াও বেশি দূর এগোয়নি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৯:৪২

অভাবের সংসার। পরিবারের স্বার্থে বয়স হওয়ার আগেই বড় হতে হবে তাকে। বুঝে নিয়েছিল পিঙ্কি (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু কাজের খোঁজে বেরিয়ে হারিয়ে যেতে হবে, দুঃস্বপ্নেও সে ভাবেনি।

বয়স ১৮ ছাড়ায়নি। নানা প্রতিবন্ধকতায় লেখাপড়াও বেশি দূর এগোয়নি। কিন্তু একটা কাজ খুব দরকার। খুব ভাল কাজ মিলবে কি না সংশয় ছিল। কিন্তু বাড়ি ছেড়ে দিল্লি পাড়ি দিতে পারলে ভাল বেতনের সুযোগ রয়েছে বলে জানায় এক পরিচিতই। তার হাত ধরেই অবেশেষে বাংলা ছেড়ে দিল্লি পাড়ি নাবালিকা পিঙ্কির।

রাজধানী শহরে পৌঁছনোর পর আর পিঙ্কির খোঁজ মেলেনি। বেমালুম উধাও হয়ে যায় মেয়েটা। পরিবার বহু চেষ্টা করেও পিঙ্কির হদিশ পায়নি।

আর পিঙ্কি? সে দিল্লি পৌঁছে বুঝতে পেরেছিল কত বড় ফাঁদে আটকা পড়েছে তার জীবন। পূর্ব দিল্লির লক্ষ্মীনগরে একটি বাড়িতে প্রথমে পিঙ্কির থাকার ব্যবস্থা হয়। আস্তানায় পৌঁছেও শুরুতে কিছুই বুঝতে পারেনি সেই নাবালিকা। যে চাকরি দেওয়ার স্বপ্ন বুনে দিল্লি নিয়ে গিয়েছিল, প্রথম ধাক্কাটা সে-ই দিল। হিতাকাঙ্খীর খোলসটা খসিয়ে পিঙ্কিকে ধর্ষণ করল সে। তার পর পিঙ্কিকে জানিয়ে দেওয়া হল, বাড়ি থেকে ব্যাগে ভরে যে সব জামাকাপড় সে নিয়ে এসেছে, তার আর কোনও প্রয়োজন নেই। চারটে ছোট ছোট পোশাক, হাই হিলের চপ্পল আর সস্তার কসমেটিকস ছুড়ে দিয়ে লোকটা সে দিন বলেছিল, তৈরি হয়ে নিতে। এত ক্ষণে পিঙ্কি বুঝতে পেরেছিল, বাড়ি থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে নিয়ে এসে দেহ ব্যবসায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, বাংলা ছেড়ে প্রথমবার বাইরে বেরনো নাবালিকা কিছুই চেনে না দিল্লির। অসহায় আর্তনাদ করেও তাই জাল কাটতে পারেনি।

এর পর থেকে রোজ ১৫-২০ জন করে খদ্দের ঢুকত পিঙ্কির ঘরে। কোনও দিন খদ্দেরের চাপ একটু কম থাকলে পিঙ্কির বিছানার দখল নিত মধুচক্রের পাণ্ডারা।

ভিতরে ভিতরে পালানোর ছক কষতে শুরু করে পিঙ্কি। যে ভাবে দিল্লি পৌঁছনোর আগে তাকে কিছু বুঝতে দেওয়া হয়নি, ঠিক সেই ভাবেই পিঙ্কিও গোপন রেকেছিল পুরোটা। তার পর হঠাৎ এক দিন নিখোঁজ। এক অপরিচিতা সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তাঁর মধ্যস্থতায় দিল্লি পুলিশে অভিযোগ জানায় পিঙ্কি। তৎপরতা দেখিয়েছে পুলিশও। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে বুধবার করোলবাগ, লক্ষ্মীনগর-সহ বিভিন্ন এলাকায় এক সঙ্গে হানা দেয় দিল্লি পুলিশ। নারী পাচার চক্র এবং দেহ ব্যবসার বড়সড় নেটওয়ার্ক ফাঁস হয় পুলিশি অভিযানে।

মধুচক্রের এক চাঁই ইতিমধ্যেই ধৃত। বাকিদের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে দিল্লি পুলিশ। পিঙ্কি পুলিশকে জানিয়েছে, তাকে মিথ্যা বলে দিল্লি আনা হয়েছিল। তার পর জোর করে দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য করা হয়। শুধু লক্ষ্মীনগরের বাড়িটিতে নয়, বিভিন্ন সময়ে নানা হোটেলে নিয়ে গিয়ে তাকে ধনী ক্লায়েন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হত। এতেই শেষ নয়। পুলিশ জানতে পেরেছে, নারী পাচার চক্রের পাণ্ডারা সুযোগ পেলেই তাকে ধর্ষণ করত।

পিঙ্কির বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করছে পুলিশ। তবে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য মেয়েদেরও উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মধুচক্রের ফাঁদ কেটে নাবালিকা বাঙালি মেয়েটার মরিয়া দৌড় হয়তো আলোয় ফেরাতে চলেছে অজান্তেই ফাঁদে পড়া আরও অনেক পিঙ্কিকে।

Trafficking Bengali girl Minor Delhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy