অবশেষে সাড়া দিল সমুদ্র। ঠিক পাঁচ দিনের মাথায়। সমুদ্রের একটি বিশেষ অঞ্চল থেকে সঙ্কেত পাঠাচ্ছে সোমবার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ডর্নিয়ার বিমানটি। শনিবার এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী। বিমান উধাও রহস্যে প্রথম পাওয়া এই সূত্র ঘিরে আশার আলো দেখছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও। তবে বিমানে থাকা তিন অফিসারের এ দিনও হদিস নেই। আদৌ তাঁরা বেঁচে আছেন কিনা, উঠছে প্রশ্ন।
সঙ্কেতের পাশাপাশি, সমুদ্রের ওই বিশেষ অঞ্চলে আজ তেল ভাসতে দেখা গিয়েছে বলেও মন্ত্রক সূত্রের খবর। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র সীতাংশু কর টুইটারে জানান, ‘‘তেল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে।’’
তবে ভাসতে থাকা তেলের থেকেও হঠাৎ পাওয়া এই সমুদ্র-সঙ্কেতেই বেশি ভরসা রাখতে চাইছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। নৌসেনার তরফে তল্লাশি অভিযানে অংশগ্রহণকারী ‘আইএনএস সন্ধায়ক’ জাহাজ সূত্রেই নিখোঁজ বিমান থেকে সঙ্কেত মিলেছে বলে দাবি উপকূল রক্ষী বাহিনীর। পুদুচেরির দক্ষিণে নোভো বন্দর এবং করাইকল উপকূলের মাঝামাঝি কোনও অংশেই ডর্নিয়ার বিমানটি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু কী ভাবে মিলল এই সঙ্কেত? গত কালই নিখোঁজ বিমানের সন্ধানে করাইকল থেকে কুড্ডালোর উপকূল বরাবর সমুদ্র অভিযানে নামে ‘আইএনএস সন্ধায়ক’। চিদম্বরম উপকূল থেকে ১৬ মাইল দূরে এই করাইকল উপকূলেই শেষ বারের মতো চিহ্নিত করা গিয়েছিল বিমানটিকে। অভিযানে নেমেই সমুদ্র তলদেশ থেকে পাল্টা উত্তরের অপেক্ষায় ক্রমাগত সঙ্কেত পাঠাতে থাকে সন্ধায়ক। নৌসেনার দাবি, আজ সাড়া মিলেছে ডর্নিয়ার বিমানের সোনার লোকেটিং বিকন যন্ত্র (এসএলবি) থেকে। বলা হয়, থেমে থেমে হলেও নিয়মিত সঙ্কেত আসছে সমুদ্র থেকে। উপকূল রক্ষী বাহিনীর তরফে চেন্নাইয়ের ইনস্পেক্টর জেনারেল এসপি শর্মা বলেন, ‘‘সমুদ্র থেকে যে পাল্টা সঙ্কেত মিলেছে, তা নিশ্চিত ভাবেই ডর্নিয়ারের এসএলবি থেকে পাওয়া।’’ জলে ডোবার পরেও এই বিশেষ যন্ত্র থেকে অন্তত এক মাস পর্যন্ত সঙ্কেত পাওয়া যেতে পারে বলে দাবি তাঁর। তবু এই সঙ্কেত ঘিরে এখনও ধোঁয়াশায় খোদ বাহিনীরই একাংশ। কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও।
উপকূল রক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, সোমবার নিয়মমাফিক নজরদারি শুরু হওয়ার ঘণ্টা চারেকের মধ্যেই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় তাদের ‘সিজি-৭৯১’ ডর্নিয়ার বিমানটির। তার পর পরই ওই নিখোঁজ বিমানের খোঁজে উপকূল রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযানে নামে ভারতীয় নৌসেনার মোট ১০টি জাহাজ ও দুটি বিমান। কিন্তু বহু অনুসন্ধানের পরেও টানা দু’দিন প্রায় কোনও সূত্রই মেলেনি বিমান-উধাও রহস্যের। যোগাযোগ করা যায়নি বিমানটির চালক ডেপুটি কম্যান্ডান্ট বিদ্যাসাগর, সহ-চালক ডেপুটি কম্যান্ডান্ট এম কে সোনি অথবা বিমানটির নেভিগেটর ডেপুটি কম্যান্ডান্ট সুভাষ সুরেশের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার সমুদ্রের একটি বিশেষ অঞ্চল থেকে তেল ভাসতে দেখা যায়। কিন্তু সেই তেল যে ডর্নিয়ার বিমানটির নয়, তা পরীক্ষা করে নস্যাৎ করে দেয় ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন।
তবু আজ সমুদ্রে পাওয়া তেলের চিহ্নকে কিছুটা হলেও গুরুত্ব দিতে চাইছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এমনকী, বাহিনীর একাংশের আশঙ্কা— সমুদ্রের এই অংশের নীচেই মিলবে বিমানের ধ্বংসাবশেষ। নৌসেনার বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ডুবোজাহাজ ‘আইএনএস সিন্ধুধ্বজ’-ও অভিযানে যোগ দিচ্ছে বলে জানান উপকূল রক্ষী বাহিনীর কলকাতা আঞ্চলিক শাখার মুখপাত্র অভিনন্দন মিত্র।
তল্লাশি অভিযানে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশেন টেকনোলজি। ‘সাগরনিধি’ নামে তাদের একটি জাহাজও তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে উপকূলবর্তী সমুদ্রে। উপকূল রক্ষী বাহিনীর তরফে মাল্টি সাপোর্ট ভেসেলের (এমএসভি) আর্জি জানানো হয়েছে রিলায়্যান্সকে। জলের নীচে সন্ধান চালানোয় বিশেষ উপযোগী রিমোট-চালিত যানেরও অপেক্ষা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy