খোদ প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য থেকে পালাচ্ছেন ভিন রাজ্যের শ্রমিকেরা। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ নরেন্দ্র মোদী। দ্রুত সমস্যা মেটাতে হবে— গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যদিও আজও উত্তর গুজরাতের বিভিন্ন স্টেশনে ঘরে ফেরার লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। অধিকাংশই বিহার ও উত্তরপ্রদেশের মানুষ। উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ভিন রাজ্যের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন থাকার পরে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। মানুষ আতঙ্কিত। ভয়ে রাজ্য ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ওখানকার প্রশাসনের কাছে আবেদন করব এ সব যেন না হয়।’’
এরই সঙ্গে মমতার অভিযোগ, ‘‘বিজেপি দেশ জুড়ে ধোঁয়াশা ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করছে। বিভাজনের রাজনীতি হচ্ছে। বিভাজনে দেশ কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। বিভাজন করলে দেশের পতনই হবে। একতাই আমাদের শক্তি।’’
গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুজরাতের সাবরকন্ঠা জেলায় একটি ১৪ মাসের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় এক জন বিহারি
গ্রেফতার হওয়ার পরেই গোলমালের সূত্রপাত। শুরু হয় হিন্দিভাষীদের খেদানো। মোদী-রাজ্যে এই ঘটনায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী নিশানা করছেন গুজরাতের ‘মোদী মডেল’-কে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গুজরাত সরকারের ভুল শিল্পনীতি, নোট বাতিল এবং জিএসটির ধাক্কায় সে রাজ্যে কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে বেকারি। তাই শ্রমিকদের তাড়াতেই ওই পরিকল্পনা।’’
মুখ্যমন্ত্রী রূপাণী হিন্দিভাষীদের উপরে আক্রমণের দায় চাপিয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক অল্পেশ ঠাকুরের দিকে। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেসের ওই বিধায়ক পরিকল্পিত ভাবে হিন্দিভাষী এলাকায় গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। ধৃতদের তালিকায় ৩০ জন অল্পেশ-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের সমর্থক রয়েছে। রূপাণীর কথায়, ‘‘কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাই যখন অপরাধী, তখন রাহুলের মুখ খোলা উচিত নয়।’’ এতে কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি জানতে চান, ‘‘তবে অল্পেশকে গ্রেফতার না করে তিন দিন কেন চুপ রইল সরকার? কেন ৫০ হাজার মানুষ গুজরাত ছাড়তে বাধ্য হলেন?’’
তৃণমূল নেত্রী মমতা বলেন, ‘‘দেশের আইন হচ্ছে অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা। শুনলাম, গুজরাতে ইতিমধ্যেই ৩৭০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কী ভাবে এত লোককে গ্রেফতার করা হল বুঝতে পারছি না।’’ মমতা মনে করিয়ে দেন, ভারতে যে কোনও রাজ্যে যে কেউ বসবাস করতে পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খখণ্ড, রাজস্থান, গুজরাত, উত্তর-পূর্বের বাসিন্দারা কাজের জন্য আসেন, বসবাস করেন। অনেকে ২০-৩০ বছর ধরে এ রাজ্যে রয়েছেন। তাঁরা আমাদের থেকেও
বেশি বাঙালি।’’
নিজেদের দলের সরকার হওয়ায় গুজরাত সরকারের ভূমিকা নিয়ে মুখ খুলতে পারছেন না উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ বা বিহারের নীতীশ কুমার। উল্টে রূপাণীর সরকারকে আজ ‘ক্লিন চিট’ দিয়েছেন আদিত্যনাথ। বিহার পুলিশও জানিয়েছে, উৎসবের সময়ে বিহারের মানুষেরা নিজেদের গ্রামে ফেরেন। এতে নতুনত্ব কিছু নেই।
বিজেপি অবশ্য ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। তাদের বক্তব্য, বিধানসভা ভোট আসতেই পরিকল্পিত ভাবে দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের মতে, ‘‘ভোট এলেই কংগ্রেস জাতি বা ধর্মের ভিত্তিতে ঝামেলা বাধায়। শুরু হয় পদক ফেরানোর পর্ব। কর্নাটক ও গুজরাতের ভোটে ওই মডেল দেখেছি।’’ মণীশের পরামর্শ, ‘‘অন্যের দোষ না ধরে বরং রাজধর্ম পালন করুক বিজেপি।’’
প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যে হিন্দিভাষীরা আক্রান্ত হওয়াটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বড় রকমের ধাক্কা বলেই মনে করছে বিরোধী শিবির। চিন্তিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। তাদের মতে, মহারাষ্ট্র, অসম, ত্রিপুরার ধাঁচে গুজরাতেও ভিন রাজ্যের মানুষ খেদানোর ঘটনা দেশের ঐক্যের প্রশ্নে হিতকারী নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy