Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বেফাঁস দুই মন্ত্রী, বিতর্কে মোদী সরকার

এই বিতর্কিত মন্তব্যের পাশাপাশি মোদী সরকারের অন্য মন্ত্রী অনন্তকুমার হেগড়ে স‌ংবিধানের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটাই একেবারে মুছে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বসেছেন। এমনকী তাঁর দাবি, যাঁরা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলেন, তাঁদের বংশ পরিচয়ের ঠিক নেই।

অনন্তকুমার হেগড়ে ও হংসরাজ আহির

অনন্তকুমার হেগড়ে ও হংসরাজ আহির

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৬
Share: Save:

দুই মন্ত্রীর বেফাঁস মন্তব্যে এ বার নতুন বিতর্কে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

মোদীর এক মন্ত্রী হংসরাজ আহির মহারাষ্ট্রে একটি হাসপাতালের অনুষ্ঠানে গিয়ে অনুপস্থিত ডাক্তারদের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। ডাক্তারদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মানুষ আমাকে মন্ত্রী বানিয়েছে। আমি যে এখানে আসব, আপনারা কি জানতেন না? যদি গণতন্ত্রে ভরসা না থাকে, তা হলে মাওবাদী হয়ে যান। আপনাদের তখন গুলি করে মারব।’’ এই বিতর্কিত মন্তব্যের পাশাপাশি মোদী সরকারের অন্য মন্ত্রী অনন্তকুমার হেগড়ে স‌ংবিধানের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটাই একেবারে মুছে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বসেছেন। এমনকী তাঁর দাবি, যাঁরা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলেন, তাঁদের বংশ পরিচয়ের ঠিক নেই। কর্নাটকের একটি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কর্মদক্ষতা উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী হেগড়ে বলেন, ‘‘কেউ যদি নিজেকে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান কিংবা লিঙ্গায়েত বলেন, তা হলে আমি খুশি হই। কারণ, তিনি তাঁর শিকড়কে চেনেন। কিন্তু যাঁরা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলেন, তাঁদের বাবা মায়ের ঠিক নেই। নিজেদের রক্তের যোগ জানেন না তাঁরা।’’ এ সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য ‘‘সংবিধান বদলে দিতেই ক্ষমতায় এসেছি আমরা। আগেও সংবিধান বদলেছে। ভবিষ্যতেও একে পাল্টাব।’’

হেগড়ের বক্তব্যকে সামনে রেখে আজ থেকেই কর্নাটকের ভোটের জমি তৈরি করতে নেমেছে রাহুল গাঁধীর দল। কর্নাটকের নেত্রী খুশবু সুন্দরকে দিল্লিতে এনে সাংবাদিক বৈঠক করে এআইসিসি। খুশবু ও দলের আর এক মুখপাত্র গৌরব গগৈ বলেন, ‘‘অম্বেডকরের নাম ভাঙিয়ে ভোট পাওয়ার চেষ্টা করে যে বিজেপি, তারাই এখন সংবিধান পাল্টে দিতে সওয়াল করছে।’’ সংবিধানের নামে শপথ করেন মন্ত্রীরা, তাঁরাই এখন সেই শপথ কী ভাবে ভাঙছেন— সে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। তবে কংগ্রেস নেতাদের মতে, হেগড়ে যা বলেছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদও দেওয়া যায়। কারণ, তিনি বিজেপি-সঙ্ঘের আসল রূপটা সবার সামনে এনে দিয়েছেন। সংবিধানের কোন কোন বিষয় বাদ দিতে চান, তা স্পষ্ট করে বলার জন্য মোদীর মন্ত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে কংগ্রেস। কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি দীনেশ গুন্ডুরাও বলেন, ‘‘হেগড়ে হিন্দু হওয়ার যোগ্যই নন। কারণ, হিন্দু ধর্মের মূল কথা হল শান্তি ও সহনশীলতা। মন্ত্রীর কথায় যা একেবারেই ফুটে উঠছে না।’’ অভিনেতা প্রকাশ রাজও হেগড়ের কথায় ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘জন্মের সূত্রে কিংবা জাতপাত দিয়ে মানুষের বিচার হয় না।’’ এরই মধ্যে হেগড়ের জিভ কেটে দেওয়ার জন্য ১ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কালবুর্গি জেলা পঞ্চায়েতের এক প্রাক্তন সদস্য গুরুসন্ত পাত্তেদর।

শুধু হেগড়েই নয়, আহিরকে নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছে কংগ্রেস। বিতর্কে নিশানা করা হয়েছে বিজেপি ও মোদীকে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘দুই মন্ত্রী বিজেপির প্রকৃত চেহারাকে সামনে এনে দিয়েছেন।’’ আর গগৈয়ের মন্তব্য, ‘‘আমাদের প্রতিটি কথার অর্থ বের করতে এত টুকুও সময় নেন না মোদী। এখন নিজের মন্ত্রীদের কথাবার্তার অর্থ কী— সেটা একটু বুঝিয়ে বলবেন?’’

মোদী এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে বিতর্ক এড়াতে ব্যাখ্যা হাজির করেছেন আহির। বলেছেন, ‘‘আমি ডাক্তারদের শ্রদ্ধা করি। তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলতে চাইনি। তবে আমার ক্ষোভ এক সার্জেনের বিরুদ্ধে, যিনি সে দিন অনুপস্থিত ছিলেন।’’ অবশ্য আহিরের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ আইএমএ ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছে। তবে সর্বভারতীয় স্তরে এই দাবি উঠলেও সংস্থার স্থানীয় শাখার বক্তব্য, মন্ত্রী ডাক্তারদের অপমান করেননি।

বিরোধী দলের এক নেতার কটাক্ষ, আহির আর হেগড়ে আলাদা আলাদা বিষয়ে বলেছেন ঠিকই। তবে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে দু’জনের মিল পাওয়া যাবে। আহির শুধু হুমকি দিয়েছেন। আর এ বছরের শুরুতে মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হেগড়ে ডাক্তারদের রীতিমতো পিটিয়েছেন। সেই ভিডিও নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE