Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
রাজনাথের মুখে হাফিজনামা

পাশে সঙ্ঘ, কঠোর মোদী

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ পাঠানো ও ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমারকে গ্রেফতারের ঘটনায় কোনও ভাবেই অনুতপ্ত নয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্র মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:২৪
Share: Save:

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ পাঠানো ও ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমারকে গ্রেফতারের ঘটনায় কোনও ভাবেই অনুতপ্ত নয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্র মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক। জেএনইউকে ঘিরে যখন বিরোধী দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন এ নিয়ে এককাট্টা সরকার ও সঙ্ঘ।

প্রধানমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও দু’জন শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায় সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের দাবি, ‘‘যারা আন্দোলন করছেন, তাদের বক্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে হাফিজ সইদ। এর থেকেই আন্দোলনের চরিত্র বোঝা যায়।’’ আর জেএনইউয়ের ঘটনা নিয়ে অরুণ জেটলির ব্যাখ্যা, ‘‘কংগ্রেস ও কমিউনিস্টরা দেশবিরোধিতার প্রশ্নে সহিষ্ণু। আমরা জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কোনও ঘটনা ঘটলে অসহিষ্ণু হয়ে পড়ি।’’ এ থেকেই স্পষ্ট, মন্ত্রিসভা ও দল কানহাইয়া কুমারের গ্রেফতারের ঘটনায় কোনও ভাবেই অনুতপ্ত নয়। উল্টে মোদীর মন্ত্রীরা বোঝাতে চাইছেন জেএনইউয়ে অতিবিপ্লবের চাষ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ দিন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলি ও সুষমা স্বরাজের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধীদের রাজনৈতিক চাপ কী ভাবে সামলানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

জেএনইউ নিয়ে দেশের রাজনীতি যখন উত্তাল, ঠিক সেই সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর জানা উচিত যে তিনি সমগ্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী।’’ অর্থাৎ শুধু বিজেপি বা সঙ্ঘের সমর্থক ভারতবাসীই নন, দেশের যে নাগরিকরা তাঁর মতাদর্শের বিরুদ্ধে, তিনি তাঁদেরও প্রধানমন্ত্রী।

তবে মনমোহন এই মন্তব্য করলেও মন্ত্রিসভা, বিজেপি, আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সকলেই এক মত জানিয়েছেন, জেএনইউয়ে কানহাইয়াকে গ্রেফতার করা সঠিক সিদ্ধান্ত। বিজেপি মুখপাত্ররা বলছেন, তাঁরা চান এ ব্যাপারে দেশ জুড়ে বিতর্ক হোক।

মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দু’বছর হতে চলল। ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে, মোদী ও তাঁর সতীর্থরা সচেতন ভাবেই বহুত্ববাদের নেহরু-মডেল অনুসরণে আগ্রহী নয়। অটলবিহারী বাজপেয়ীও এই মডেলের অনুসারী ছিলেন, কিন্তু তখন ছিল জোট নির্ভর বিজেপি শাসন। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাওয়ার পরেই বিজেপির রাজনৈতিক লাইন বদলে গিয়েছে। সরকারের মন্ত্রীরা, বিজেপি ও সঙ্ঘের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেন, ‘মেকি ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের নামে ‘জাতীয়তাবাদ বিরোধী প্রগতিশীলতা’র মুখোশ খুলে দেওয়া দরকার। একেই এখন নিজেদের অন্যতম কাজ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন তাঁরা। ফলে এত দিন ধরে যে রাজনৈতিক পরম্পরা চলেছে, তার আমূল পরিবর্তন করে এক নতুন রাষ্ট্রবাদের মডেল তুলে ধরতে মরিয়া মোদীর দল।

বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, দাদরির ঘটনা যখন ঘটেছিল তখন এই কারণেই দল কোনও অনুতাপ প্রকাশ করেনি। প্রধানমন্ত্রীও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন অনেক পরে। দাদরি নিয়ে মোদীর প্রতিক্রিয়া বিজেপি-র রণকৌশলের অঙ্গও ছিল না। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের সময় মুজফ্ফরনগরের ঘটনা বিজেপিকে সাহায্য করেছিল। আর বিহারের ভোটে দাদরি কাণ্ডের ফল না পাওয়াই যে পরাজয়ের কারণ— এমনটা আজও মনে করছে না বিজেপি। বিজেপি নেতারা এখনও মনে করেন, বিহারে মেরুকরণের রাজনীতি তাঁদের দলের শতকরা ভোট অনেকটাই ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। তবে লালু-নীতীশকে সাফল্য এনে দিয়েছে জোটের অঙ্কের হিসেব। উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্যে কাল উপনির্বাচন ছিল। কর্নাটকে জেলা পরিষদেরও ভোট ছিল কাল। অসম, কেরলে নির্বাচন আসছে। এই পরিস্থিতিতে অমিত শাহ মনে করেন, অমর্ত্য সেন যতই সহিষ্ণুতার উপদেশ দিন না কেন, বিজেপি ভোট পাওয়ার সাবেকি রাজনীতি ত্যাগ করতে পারে না।

এনডিএ-র শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, হায়দরাবাদ থেকে জেএনইউ— এই ঘটনাগুলিতে কংগ্রেস, সিপিএমের মতো বিরোধী দলগুলি আরও কাছাকাছি আসতে পারে। এর ফলে মোদী বিরোধী মঞ্চ গঠনের চেষ্টাও হতে পারে— তবে কট্টর লাইনেই লুকিয়ে রয়েছে বিজেপির ভোট বাড়ানোর চাবিকাঠি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

national news modi jnu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE