প্রধানমন্ত্রী বিদেশে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশে। এমনকী অর্থমন্ত্রীও বিদেশে। আর বিদেশমন্ত্রী? তিনি অবশ্য রয়েছেন দেশে!
সংসদ চলছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিল নিয়ে রোজ বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু সরকারের তিন মাথাই দেশের বাইরে। সরকারটা তা হলে চালাচ্ছেন কে? বিজেপির মধ্যেই যখন এই প্রশ্ন উঠছে, বিরোধীরা তো সরব হবেনই। আর তাই যে কংগ্রেস গত কাল রাজ্যসভায় বিমা বিল নিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল, আজ লোকসভায় তারা বাজেট বিতর্ক শুরু করতেই দিল না এই প্রশ্ন তুলে। কংগ্রেসের সাফ কথা, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সংসদে না থাকলে বাজেট বিতর্ক শুরু হবে না!
সেসেলস, মরিশাস, শ্রীলঙ্কা সফরে এখন প্রধানমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি লন্ডনে গিয়েছেন মহাত্মা গাঁধীর মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জাপানে বুলেট ট্রেনে চেপে সফর করছেন। সংসদ চলার সময় সরকারের তিন মাথার অনুপস্থিতিকেই আজ হাতিয়ার করল কংগ্রেস।
লোকসভায় স্পিকার সুমিত্রা মহাজন যতই বোঝানোর চেষ্টা করুন অর্থমন্ত্রী না থাকলেও তাঁর প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হা সভায় আছেন। নিয়ম অনুযায়ী যে কোনও মন্ত্রীই মন্ত্রিসভার প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। কিন্তু বিরোধীরা নাছোড়। কংগ্রেসের দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বললেন, আজ বাজেট নিয়ে আলোচনায় তাঁরা রাজি ছিলেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী থাকবেন না, সেটি সরকারের পক্ষ থেকে জানানোই হয়নি।
কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ বলেন, “সরকারের তিন মাথা বিদেশে। সরকার কী ভাবে চলছে, সেটা তারাই জানে।” যদিও এ কথা বলেও শাকিলের কটাক্ষ, “বিজেপিতে অবশ্য ২ নম্বর, ৩ নম্বর নিয়ে কিছুই আসে যায় না। ১ থেকে ১০ এক জনের হাতেই। তবু সরকার অন্তত জানাবে তো প্রধানমন্ত্রী নেই, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নেই, অর্থমন্ত্রী নেই। এখন সরকারের মাথা তা হলে কে?”
নরেন্দ্র মোদী কাউকে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব দিয়ে না গেলে কেউই ছড়ি ঘোরাতে পারেন না। তবু আজ প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে কেন্দ্রের মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। কিন্তু তিন মাথার গরহাজিরে যে ভাবে তেতে আছেন বিরোধীরা, তাঁদের শান্ত করা হবে কী করে? অস্বস্তি ঢাকতে তাই আজ তড়িঘড়ি সংসদ ভবনে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রাজীবপ্রতাপ রুডি ও প্রকাশ জাভড়েকর মনমোহন সিংহকে আদালতের সমন পাঠানোর ঘটনাটি নিয়ে সুর চড়ান।
কিন্তু বিজেপি যতই আক্রমণ করুক, কংগ্রেস অনুপস্থিতির বিষয়টিকে হাতছাড়া করতে চাইছে না। বরং এই বাহানায় সরব হয়ে লোকসভায় নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চাইছে তারা। কিন্তু এখন রাহুল গাঁধী কেন ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে, সে প্রশ্ন যে তাদেরও তাড়া করতে পারে, সেটাও তারা বুঝছে। লোকসভায় খুব বেশি নিজেদের ছাপ ফেলার সুযোগ পায় না কংগ্রেস। সেটা তারা রাজ্যসভায় করে দেখায়। এ বারে কংগ্রেস জেটলিরই মন্তব্যকে অস্ত্র করছে। রাজ্যসভায় বেগ পাওয়ায় জেটলি বলেছিলেন, লোকসভায় ভোটে জিতে আসা সাংসদরা যে বিল পাশ করাচ্ছে, সেটি কেন রাজ্যসভায় আটকে দেওয়া হবে? তা হলে তো লোকসভার মর্যাদাকেই অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া হয়। কংগ্রেসের দীপেন্দ্র হুডা সে প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারই লোকসভাকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy