Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মোদীর মুখ থেকে উধাও আতঙ্কের ‘মিত্রোঁ’

বছর আড়াই আগে শব্দগুলো শুনে হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ত জনতা। নরেন্দ্র মোদী তখন লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। এক-একটা সভায় জনতাকে উদ্দেশ করে তিনি বলতেন, ‘মিত্রোঁ’! ভিড় জবাব দিত, ‘মোদী! মোদী!’

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

বছর আড়াই আগে শব্দগুলো শুনে হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ত জনতা। নরেন্দ্র মোদী তখন লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। এক-একটা সভায় জনতাকে উদ্দেশ করে তিনি বলতেন, ‘মিত্রোঁ’! ভিড় জবাব দিত, ‘মোদী! মোদী!’

শেষ পর্যন্ত মোদীই বসেছেন দিল্লির তখ্‌তে। কিন্তু তাঁর ‘মিত্রোঁ’ নিয়ে আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় রঙ্গ-রসিকতা। বিশেষত নোট-বাতিলের পর থেকে। ‘অচ্ছে দিন’-এর কথা বলা মোদী প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। এ বার তাঁর সাম্প্রতিকতম চার-পাঁচটা বক্তৃতা থেকে উধাও হয়েছে ‘মিত্রোঁ’ও।

পুরনো বাক্যবাণে ভরসা হারাচ্ছেন মোদী? নাকি ওই শব্দগুলো নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপই বুঝিয়ে দিচ্ছে, জনপ্রিয়তা কমেছে তাঁর? প্রশ্নগুলো তুলছেন বিরোধী শিবিরের অনেকে। তাঁদের দাবি, প্রথমে দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতার নানা অভিযোগ, তার পর ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের ঘোষণার জেরে ক্রমশ মোহভঙ্গ হচ্ছে জনতার। সোশ্যাল মিডিয়ার চুটকিগুলো তারই প্রমাণ।

যেমন এই কাল্পনিক প্রশ্নোত্তর— ‘একটি মাত্র শব্দে গত বছরের সেরা আতঙ্ক কোনটা?’ উত্তর: ‘‘মিত্রোঁ!’’ ৩১ ডিসেম্বর হোয়াটসঅ্যাপে একটি ব্যঙ্গচিত্র পেয়েছেন অনেকেই। তাতে টিভিতে বক্তৃতা দিচ্ছেন মোদী। এক ব্যক্তি শুনতে বসেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘‘মিত্রোঁ, আজ মধ্যরাত থেকে দু’হাজার...।’’ ১ জানুয়ারি থেকে দু’হাজার টাকার নোটও বাতিল হচ্ছে ধরে নিয়ে লোকটি তৎক্ষণাৎ অজ্ঞান। পরের দৃশ্য। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন, ‘‘আজ মধ্যরাত থেকে দু’হাজার সতেরো সাল শুরু হবে!’’

‘মিত্রোঁ’ শব্দের অর্থ ‘বন্ধুরা’। সোশ্যাল মিডিয়ার রসিকতা বলছে, ‘মিত্রোঁ’ মানে বহু ব্যক্তিকে একসঙ্গে আঘাত করা, যে ধাক্কা থেকে উঠে দাঁড়াতে অনেকটা সময় লাগে! ইঙ্গিতটা
নোট বাতিলের দিকেই। এক বিরোধী নেতা বলছিলেন, ‘‘নোট বাতিলের বক্তৃতার পরে লোকের মনে ভয়। এখনও প্রতি মুহূর্তে তারা ভাবছে, এই বুঝি ‘মিত্রোঁ’ ডাক দিয়ে মোদী আবার কোনও ভয়ঙ্কর ঘোষণা করবেন!’’

এখানেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করাচ্ছেন, দেহরাদূন, দিল্লি, লখনউ এবং আজ তিরুপতি মিলিয়ে মোদীর সর্বশেষ কয়েকটি বক্তৃতার কোত্থাও ‘মিত্রোঁ’ নেই। এমনকী গত ৩১ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে বক্তৃতাতেও তিনি ‘মিত্রোঁ’ বলেছেন কি না, অনেকেই নিশ্চিত নন। কারও কারও মতে, সেই দিন মোদী শব্দটা বলেছিলেন এক বারই। কিন্তু এমন ভাবে যে, তা প্রায় শোনাই যায়নি।

ব্যঙ্গচিত্রে প্রধানমন্ত্রীর বাক্যবাণ। ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে।

আর তাই শিকে ছেঁড়েনি দিল্লির এক রেস্তোরাঁর পানরসিকদের কপালে। ভিড় টানতে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ সে দিন ঘোষণা করেছিলেন, যত বার মোদী ‘মিত্রোঁ’ বলবেন, তত বার বিয়ার বা কোনও পানীয়ের ‘শট’ পাওয়া যাবে মাত্র ৩১ টাকায়। পর্দায় চোখ ঠিকরে বসে ছিলেন গ্রাহকেরা। কিন্তু ফাঁকি দিয়েছে ‘মিত্রোঁ’।

বিজেপি-সূত্রের ব্যাখ্যা, সোশ্যাল মিডিয়ায় বরাবরই নজর থাকে প্রধানমন্ত্রীর। ‘মিত্রোঁ’ নিয়ে চর্চাও তাঁর নজর এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। মিত্রোঁ-বর্জনের এটি একটি কারণ হতেই পারে। সেখানেই আবার প্রশ্ন। যে শব্দ ঘিরে এত আতঙ্ক, তাতে কি খোদ প্রধানমন্ত্রীই আতঙ্কে? অনেকেরই মনে হয়েছে, আগের ঝাঁঝ যেন আর নেই মোদীর বক্তৃতায়। বর্ষশেষের বক্তৃতাতেও তিনি দেখা দিলেন কল্পতরু হয়ে, একরাশ ছাড়ের ঘোষণা নিয়ে। বিরোধীরা যাকে বলেছেন, নোট-বাতিলের অস্বস্তি সামাল দেওয়ার চেষ্টা।

২০১৪-র মোদীর মধ্যে এই অস্বস্তিটাই ছিল না। ছিল আত্মবিশ্বাসের পাহাড়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Modi Mitron
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE