বিস্ফোরণে যে দিন কেঁপে উঠল ব্যাঙ্কক, ঠিক সে দিনই সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মাটিতে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ব্যাঙ্কক বিস্ফোরণের খবর পেয়েই টুইটারে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছিলেন। আর তার কয়েক ঘণ্টা বাদে দুবাইয়ের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৫০ হাজার প্রবাসী ভারতীয়ের উদ্দেশে মোদী বললেন, ‘‘ভাল তালিবান, খারাপ তালিবান এই ধারণা আর চলবে না। সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি সন্ত্রাসের সঙ্গে, না মানবতার সঙ্গে।’’
সন্ত্রাসবাদের বিভাজন করা নিয়ে অতীতে বহু বার আমেরিকার সমালোচনা করেছে ভারত। অনেকের মতে, ‘ভাল তালিবান, খারাপ তালিবান’-এর কথা বলে পরোক্ষে ওয়াশিংটনকেই খোঁচা দিয়েছেন মোদী। তবে একই সঙ্গে স্বীকার করেছেন, অতীতের সেই ধারণা ক্রমশই ক্ষয় হচ্ছে। মোদীর কথায়, ‘‘আগে যখন সন্ত্রাস নিয়ে অন্য (দেশের) নেতাদের সঙ্গে কথা বলতাম, তখন তাঁরা বলতেন সমস্যাটা আমাদের আইনশৃঙ্খলার। কিন্তু এখন তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, সন্ত্রাসের কোনও সীমান্ত হয় না।’’
আমিরশাহির সঙ্গে ভারতের যৌথ বিবৃতিতেও আজ কড়া সুরেই সন্ত্রাসের বিরোধিতা করা হয়েছে। পরে মোদীর বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ... সমঝনেওয়ালে সমঝ জায়েঙ্গে (যাঁরা বোঝবার, বুঝে যাবেন)।’’ কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মুম্বই বিস্ফোরণের অন্যতম অভিযুক্ত দাউদ ইব্রাহিমকে সন্ত্রাসের হোতা হিসেবে তুলে ধরে তার উপরে চাপ বাড়ানোর কাজটা দু’দিনের সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফরে সেরে ফেলেছেন মোদী। একটা সময় দুবাই-ই দাউদের ঘাঁটি ছিল। কিন্তু ইন্টারপোল তার নামে রেড কর্নার নোটিস জারি করার পর থেকে সে আর দুবাইমুখো হয়নি বলেই ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে খবর। তবে সে দেশে এখনও তার নিজের, ভাই আনিস এবং এক শ্যালকের বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে আমিরশাহির বেশ কিছু সংস্থার শেয়ার। এই সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্যই আমিরশাহি সরকারকে অনুরোধ করেছেন মোদী। প্রয়োজনে দাউদ ও তার ঘনিষ্ঠদের সম্পত্তির তালিকাও আমিরশাহি সরকারকে দেওয়া হতে পারে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর। জঙ্গি সংগঠন আইএসের কার্যকলাপ নিয়েও আমিরশাহির যুবরাজের সঙ্গে মোদীর কথা হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি আমিরশাহি সফরে বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা হিসেবে ভারতের বিজ্ঞাপন করেছেন মোদী। জানিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ভারতে সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি হয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতিতে ভারতের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে মাসদরে শিল্পপতিদের সভায় মোদী আশ্বাস দেন, শিল্পোদ্যোগীদের সাহায্য করতে তাঁর সরকার সব রকম সহযোগিতা করবে। আমিরশাহির প্রধানমন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আজ শিল্প-বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন মোদী। ভারতে রেলপথ ও বন্দরের বিকাশ, আবাসন ক্ষেত্রে লগ্নি টানার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আমিরশাহির যুবরাজ মহম্মদ বিন জায়েদ আল নায়ানের সঙ্গে কথা হয়েছে পর্যটন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো নিয়েও।
তবে শিল্পপতিদের সভায় প্রধানমন্ত্রীর একটি মন্তব্য নিয়ে আজ সকাল থেকে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। আমিরশাহির মাসদারে পূর্বতন ইউপিএ সরকারকে নিশানা করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘বেশ কিছু সমস্যা আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। যেমন সরকার চালাতে গিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা, আর কাজ না-করার প্রবণতা। এ সব কাটিয়ে তোলাই এখন আমার প্রধান কাজ।’’
মোদীর এই অভিযোগ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস। বিদেশ সফরে গিয়ে ঘরোয়া রাজনীতির প্রসঙ্গ না-তোলা কূটনীতির দস্তুর হলেও এর আগে চিন ও কানাডায় তার তোয়াক্কা না-করে বিরোধীদের আক্রমণ করেছেন মোদী। তা নিয়ে সমালোচনা হলেও অবস্থান পাল্টাননি মোদী। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা আজ বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর উচিত নিজের পদমর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হওয়া, দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।’’
দেশে বিরোধীদের সমালোচনা কুড়োলেও দুবাইয়ে প্রবাসী ভারতীয়রা আজ উচ্ছ্বসিত ভাবেই স্বাগত জানিয়েছেন মোদীকে। এক বছর আগে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে বাঁধভাঙা উচ্ছাসের সেই ছবিটাই আজ যেন ফিরে এসেছিল দুবাইয়ের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। হয়তো তাকে ছাপিয়েও গেল। আমেরিকাবাসী ১৮ হাজার ভারতীয়ের জমায়েতে মোদী সে দিন তুলে ধরেছিলেন নতুন ভারতের কথা। আর আজ ৫০ হাজার প্রবাসী ভারতীয়দের সামনে বদলে যাওয়া ভারতের ছবিকেই সামনে নিয়ে এলেন তিনি। বুঝিয়ে দিলেন, এই ভারতকে নিয়েই এখন অন্য ভাবে ভাবছে গোটা দুনিয়া। মোদীকে ঘিরে প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে উৎসাহ এতটাই ছিল যে, স্টেডিয়ামে অনেকেরই ঠাঁই হয়নি। তাঁরা ভি়ড় করেছিলেন বাইরে জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে। মোদীও ছিলেন নিজের মেজাজে। দু’দিন আগে লালকেল্লার রক্ষণাত্মক ভঙ্গি ঝেড়ে ফেলে দুবাইয়ের প্রবাসী ভারতীয়দের সামনে ফিরে এলেন সেই লোকসভা ভোট-প্রচারের মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy