দিল্লি ভোটের ফল আজ মস্ত বড় বালাই!
এতটা ধাক্কা খেতে হবে, হয়তো দুঃস্বপ্নেও দেখেননি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা!
বাজেট অধিবেশনের মুখে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিবেশে তাই রাতারাতি কৌশল বদলে ফেলছেন প্রধানমন্ত্রী। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপটে হই হই করে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন যিনি, সকলকে নিয়ে চলার বার্তা এখন তাঁরই মুখে!
কী রকম?
এক, পটনায় নীতীশ কুমারের শপথ অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ সিংহ যাদবরা আজ সামিল হয়েছেন। কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টা আগেই গত কাল মুলায়ম সিংহ যাদবের নাতির বিয়ের তিলক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। লালু-মুলায়ম পরিবারের সঙ্গে ফোটো সেশনের মাধ্যমে শান্তির বার্তা দিয়েছেন।
দুই, কাল থেকে বাজেট অধিবেশন। তার আগে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে আজ সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করতে পাঠিয়েছেন মোদী। সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্য সনিয়ার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন বেঙ্কাইয়া। তা ছাড়া সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আজ বলেছেন, “সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চালানো সবার দায়িত্ব।” সূত্রের খবর, সনিয়া জমি অধিগ্রহণ অর্ডিন্যান্স নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানালে, বেঙ্কাইয়া তাঁকে জানান, সরকার এ নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিন, বিজেপির অন্দরেও টানাপড়েন কমিয়ে বন্ধু-পরিবেশ কায়েম করতে তৎপর হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর রাজনৈতিক উত্থানে বিজেপিতে সবাই যে খুশি নন, সেটা অজানা নয় তাঁর। আজ লালকৃষ্ণ আডবাণীর পঞ্চাশতম বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। খোশগল্প করেছেন আডবাণী পরিবারের সঙ্গে, যশবন্ত সিন্হার মতো নেতাদের সঙ্গে। বিকেলে মুরলীমনোহর জোশীর বাড়িতেও এক অনুষ্ঠানে যান তিনি।
চার, আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত মেরুকরণের রাজনীতি আর নয়। সামনে বাজেট অধিবেশন। সংসদে সরকারের কর্মসূচি সুষ্ঠু ভাবে রূপায়ণ করতে দিন। গত অধিবেশন চলাকালীন সঙ্ঘের অনুগামী একাধিক বিজেপি সাংসদ ও মন্ত্রী বিভাজনমূলক মন্তব্য করে সরকারের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছিলেন। যার প্রতিবাদে তামাম বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংসদ অচল করে দেয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ বার আগাম সতর্ক। তিনি চাইছেন, বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলিকে এক ছাতায় নিয়ে আসে, এমন কোনও পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়। সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে তাঁর প্রতিনিয়ত সমন্বয়ের জন্য দত্তাত্রেয় নামে এক ঘনিষ্ঠ নেতাকে দায়িত্বও দিয়েছেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রী আজ এই প্রতিবেদককে বলেন, “সরকারের হানিমুন পিরিয়ড বলে সংবাদমাধ্যমে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু আমার সরকারের হানিমুন পিরিয়ড বলে কোনও কথা ছিল না। প্রথম দিন থেকেই কাজ করছি। উন্নয়ন করতে গেলে অনেক বাধা-বিপত্তি আসে। কিন্তু আমি উন্নয়ন ছাড়া আর কোনও কথা বলতে চাইছি না।” তাঁর কথায়, “একটা ধারণা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে যে সরকার সকলকে নিয়ে চলতে চাইছে না। এটা ঠিক নয়। মুলায়মের নাতির বিয়ে তো সামাজিক অনুষ্ঠান। কিন্তু সরকার চালানোর ক্ষেত্রেও সকলকে নিয়েই চলতে চাইছি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বলে ছোট দলগুলির মতকে গুঁড়িয়ে দেব তা আমার কাজের ধরন নয়।”
তবে রাজনৈতিক সূত্র বলছে, একমাত্র ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে। কেন্দ্রের তরফে সরকারি কাজে ও উন্নয়নের প্রশ্নে কোনও রকম পক্ষপাত না করার বার্তা দিয়েও কাজের কাজ হচ্ছে না। রাজ্যেরই সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কলকাতায় কথা বলতে গেলে, সরকারি আমলারা পর্যন্ত সময় দিচ্ছেন না। গোটা দেশের মধ্যে একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতাই এড়িয়ে গিয়েছেন নীতি আয়োগের পরিচালন সমিতির বৈঠক। মোদী ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নামকেওয়াস্তে এক বার সাক্ষাৎ হলেও উন্নয়নের প্রশ্নেও মিলেমিশে কাজ করার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অন্যদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে কাজের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা হলেও মমতা-বিজেপি প্রায় মুখ দেখাদেখিই নেই দিল্লিতে। কেন্দ্রের প্রায় সব সিদ্ধান্তেরই বিরোধিতা করছে তৃণমূল। তিস্তা নিয়ে সুর নরম করলেও মমতা এ ব্যাপারে এখনও উদ্বেগে রেখে দিয়েছেন মোদী সরকারকে। বাজেট অধিবেশনের মুখে শিবাজি পাঁজার গ্রেফতারেও যে তৃণমূল খেপবে তা বলা বাহুল্য।
তবে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “দু’টি বিষয় গুলিয়ে ফেললে চলবে না। আইন আইনের পথে চলবে। তা না হলে মোদীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও দুই শিল্পপতির বিরুদ্ধে তদন্ত হতো না।” তিনি মনে করিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ কে ডি সিংহের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেডি-র বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ওই নেতার কথায়, “প্রধানমন্ত্রী যে রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে এগোতে চাইছেন তার মোদ্দা উদ্দেশ্য হল, সংসদ সচল রেখে গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানো।” কারণ, বিমায় প্রত্যক্ষ লগ্নি থেকে শুরু করে জমি আইন সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স সংসদে পাশ করাতে না পারলে সরকারের মুখ পুড়বে। হতাশ হবে শিল্পমহল। তাই সকলকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের কাজ এগোতে চাইছেন মোদী। ভোট রাজনীতিতে যে একলা চলার পথ নিয়েছেন অমিত শাহ, তার সঙ্গে মোদীর এই রাজনীতির তাই কোনও সংঘাত নেই।
তবে প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রীর এই কৌশল কাজে আসবে কি?
এ নিয়ে সংশয় কিন্তু রয়েই গেল। সর্বদল বৈঠকের পর কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বা তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, কিংবা সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি, সংযুক্ত জনতা দলের নেতারা আজ প্রায় একসুরেই কথা বলেছেন। এঁরা সকলেই অর্ডিন্যান্স-রাজের বিরোধী! জমি আইন সংশোধনের বিরুদ্ধেও এঁরা সকলেই এককাট্টা। অরবিন্দ কেজরীবালের পর এঁরাও ‘সবক’ শেখাতে চান মোদীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy