সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত।—ছবি পিটিআই।
‘নেশন’ বলুন, চলবে।
‘ন্যাশনাল’? ‘চলেগা’।
‘ন্যাশনালিটি’? চলবে।
ন্যাশনালিজ়ম? কক্ষনো না!
কারণ, ন্যাশনালিজ়ম মানে হিটলার!
রাঁচীতে আজ এই কথাগুলো বললেন মোহন ভাগবত স্বয়ং। ঠিক নিজে নিদান দিলেন না, ব্রিটেন-প্রবাসী এক আরএসএস কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করলেন সঙ্ঘপ্রধান। এক বার ব্রিটেন সফরে-যাওয়া ভাগবতকে ওই কর্মকর্তাই নাকি বলেছিলেন, ‘নেশন’, ন্যাশনাল’, ‘ন্যাশনালিটি’— এ সব বললেও ‘ন্যাশনালিজ়ম’ শব্দটা উচ্চারণ না করতে। অভিধানে যে শব্দের অর্থ জাতীয়তাবাদ, তা বলতে বাধা কোথায়? এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের ওই সঙ্ঘ-কর্মকর্তার বক্তব্যই তুলে ধরে ভাগবত বলেছেন, ‘‘ন্যাশনালিজ়মের মানে হিটলার, নাৎসিবাদ, ফ্যাসিবাদ।’’
অনুষ্ঠানটি সঙ্ঘের। যদিও তা আয়োজিত হয়েছিল রাঁচীর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজ সেখানেই আরএসএসের উর্দি পরিহিত ভাগবতের বক্তৃতা ‘জাতীয়তাবাদ’ নিয়ে চর্চা কিছুটা হলেও উস্কে দিয়েছে। বক্তৃতায় জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে আসার ঠিক আগে ভাগবত বলছিলেন ‘বড় দেশের’ খবরদারির বিষয়ে। বলছিলেন, কিছু দেশ মহাশক্তি হয়ে উঠে অন্যদের উপরে কর্তৃত্ব ফলাতে চায়। এই কারণেই নানা দেশের বিদ্বানরা এখন মনে করেন, দেশ বড় হওয়াটা বিপজ্জনক। দুনিয়ায় ‘ন্যাশনালিজ়ম’ শব্দটার আজ আর ভাল অর্থ নেই। এর পরেই ভাগবত চলে আসেন নিজের ব্রিটেন সফর প্রসঙ্গে। জানান, ওই কর্মকর্তা তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘শব্দের অর্থ নিয়ে সাবধান থাকুন, ইংরেজি আপনাদের ভাষা নয়। আপনারা বই-পড়া ভাষায় কথা বলবেন। কিন্তু এখানকার কথায় শব্দের অর্থ আলাদা হয়ে যায়। তাই নেশন, ন্যাশনাল, ন্যাশনালিটি বলুন। ন্যাশনালিজ়ম নয়।’’
ভাগবত আরও বলেছেন, ‘‘দেশ জুড়ে অশান্তির কারণ মৌলবাদ। ভারতের সংস্কৃতি হিন্দু সংস্কৃতি। বৈচিত্র সত্ত্বেও প্রত্যেক ভারতীয় পরস্পর সংযুক্ত। সঙ্ঘ হিন্দুত্বের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’ বিরোধীদের একাংশের মতে, আজকের বক্তৃতায় ভাগবত ইংরেজি প্রতিশব্দটি নিয়ে আপত্তি তুললেও জাতীয়তাবাদ নিয়ে তাঁর আসল ভাবনা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এই কয়েকটি বাক্যেই। অ্যাডল্ফ হিটলারের উগ্র জার্মান জাতীয়তাবাদ ক্রমশ নাৎসিবাদের চেহারা নিয়েছিল। আবার পুলওয়ামা-হামলা ও বালাকোট অভিযানের পরে জাতীয়তাবাদের তাসেই যে নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতায় ফেরা মসৃণ হয়েছে— তা-ও ঠিক। বিজেপি জমানায় উগ্র হিন্দুত্বের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের তুলনা হয় প্রায়শই। সঙ্ঘপ্রধান আজ সেই অভিযোগ কিছুটা খণ্ডন করতে গিয়ে বুঝিয়েছেন, তাঁরা নাৎসিবাদ বা ফ্যাসিবাদে নেই। কিন্তু ‘ভারতের সংস্কৃতি হিন্দু’— এই মন্তব্যে সঙ্ঘের হিন্দু ‘স্বদেশি’ জাতীয়তাবাদের আদর্শকেই প্রকট করে দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy