৫০০ টাকা খরচে ৪০ মিনিটের অনলাইন ক্লাস। সেই ক্লাস চরমপন্থায় মগজধোলাইয়ের। আত্মঘাতী মহিলা জঙ্গি গড়ে তোলার। জইশ-ই-মহম্মদের প্রমীলা শাখায় এই ‘ভর্তি চলিতেছে’ গত ৮ অক্টোবর থেকে। জইশ প্রধান মাসুদ আজ়হার সমাজমাধ্যমের পোস্টে বড়াই করে জানিয়েছে, তাদের মহিলা-শাখা জামাত-উল মোমিনাত-এর সদস্যার সংখ্যা সূচনার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পাঁচ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। তাদের লক্ষ্য এখন জেলা স্তরে এই সংগঠনের বিস্তার।
মাসুদ লিখেছে, ‘বোনেরা অনেকেই বলেছেন যে, যোগদানের পরেই তাঁদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। তাঁরা জীবনের অর্থ উপলব্ধি করেছেন। জেলা শাখা গঠন করা হবে। প্রত্যেক জেলায় এক জন করে ম্যানেজার থাকবেন। কাজ ভাগ করে দেওয়া হবে। এত অল্প সময়েই পাঁচ হাজার সদস্য মিলেছে।’
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাক পঞ্জাবের বাহাওয়ালপুরে জইশের মূল ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। তাতে নিহত হয়েছিল মাসুদের বোন সাদিয়ার স্বামী ইউসুফ আজ়হার। সেই সাদিয়ার নেতৃত্বে জইশের মহিলা শাখা গড়েছে মাসুদ। সাদিয়ার সঙ্গে রয়েছে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার মূল চক্রী, নিহত জঙ্গি উমর ফারুকের স্ত্রী আফিরা। জইশের সদর দফতর, মরকজ় উসমান-ও-আলিতে জইশের প্রমীলা শাখারও ঘাঁটি। বাহাওয়ালপুর ছাড়াও পাকিস্তানের মুলতান, শিয়ালকোট, করাচি এমনকি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মুজ়ফ্ফরাবাদ থেকেও মহিলাদের মগজ ধোলাই করে এই বাহিনীতে নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে গোয়েন্দা সূত্রের আশঙ্কা, জইশের মহিলা শাখা আর শুধু পাকিস্তানের চৌহদ্দিতে আটকে নেই। দিল্লি বিস্ফোরণের তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, ধৃত ভারতীয় চিকিৎসক শাহিন শাহিদকে সম্ভবত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জামাত-উল মোমিনাত-এর ভারতীয় শাখা তৈরির। সাদিয়া এবং আফিরার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল বলেই মনেকরা হচ্ছে।
মাসুদ আগেই বলেছিল, জইশের পুরুষ সদস্যদের মতো একই প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হবে মেয়েদের। জইশের ছেলেদের যে ১৫ দিনের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ-পর্বের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তার পোশাকি নাম ‘দৌরা-এ-তরবিয়ত’। মহিলাদের জন্য তেমনই রয়েছে ‘দৌরা-এ-তাসকিয়া’। ধর্মীয় পাঠকে হাতিয়ার করে মগজধোলাই চলে এই পর্বে। ৪০ মিনিটের অনলাইন ক্লাস হয়। চাঁদা ৫০০ টাকা। সঙ্গে রয়েছে কঠোর নির্দেশ, স্বামী বা পরিবারের ঘনিষ্ঠেরা বাদে সরাসরি সম্পর্কহীন কোনও পুরুষের সঙ্গে ফোনে কথা বলা অথবা বার্তা-বিনিময় করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএস, এলটিটিই বা হামাসের কায়দায় মহিলাদের একটি আত্মঘাতী বাহিনী তৈরি করাই লক্ষ্য জইশের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)