Advertisement
E-Paper

সমুদ্র পেরিয়ে যাবে ছেলের নাম, কালামকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল মায়ের

আর সাত ভাইবোনের জন্য মা শুধু ভাত রাঁধতেন। কিন্তু ছোট ছেলেটার জন্য করতেন বাড়তি কয়েকটা রুটি। ভোর চারটেয় উঠে পড়তে বসবে ছেলেটা। তখন খিদে পাবে তো। শুধু তা-ই নয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৯
তখন রাষ্ট্রপতি। ২০০৬ সালে ম্যানিলায় এ পি জে আব্দুল কালাম। ছবি: এএফপি।

তখন রাষ্ট্রপতি। ২০০৬ সালে ম্যানিলায় এ পি জে আব্দুল কালাম। ছবি: এএফপি।

আর সাত ভাইবোনের জন্য মা শুধু ভাত রাঁধতেন। কিন্তু ছোট ছেলেটার জন্য করতেন বাড়তি কয়েকটা রুটি। ভোর চারটেয় উঠে পড়তে বসবে ছেলেটা। তখন খিদে পাবে তো। শুধু তা-ই নয়। দিন-আনি-দিন-খাইয়ের সংসারে নামমাত্র পুঁজি থেকে কিনতেন বাড়তি কেরোসিন। কত রাত পর্যন্ত ছেলে পড়াশোনা করবে কে জানে! লেখাপড়া শিখেই যে এই ছেলে অনেক দূর যাবে, ঠিক জানতেন মা। স্বপ্ন দেখতেন, তাঁদের বাড়ির খুব কাছেই যে বঙ্গোপসাগর, সেই বিশাল সমুদ্রও ছাড়িয়ে যাবে তাঁর ছেলের নাম়ডাক।

মায়ের সেই স্বপ্ন সত্যি করেছিলেন আব্দুল। তবে রাস্তাটা নেহাত সোজা ছিল না। ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর। তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে এক অতি দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আবুল পকির জয়নুলআবদিন আব্দুল কালাম। বাবা জয়নুলআবদিন ছিলেন এক সাধারণ মৎস্যজীবী। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই রোজগারের তাগিদে খবরের কাগজ বিক্রি করতে হতো আব্দুলকে। স্কুল পাশ করে কলেজে পড়ার জন্য একটা বৃত্তি পান তিনি। ভর্তি হন তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজে। ১৯৫৪ সালে সেখান থেকেই পদার্থবিদ্যায় স্নাতক। তার পর ফের স্কলারশিপ নিয়ে চেন্নাইয়ে। পড়তে শুরু করেন এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং। তাঁর স্বপ্ন ছিল ভারতীয় বায়ুসেনায় বিমানচালক হবেন। তাঁর ক্লাসের প্রথম আট জনকে বায়ুসেনায় যোগ দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল।কালাম হয়েছিলেন নবম। সে-যাত্রায় তাই আর যুদ্ধবিমানের চালক হয়ে ওঠা হয়নি কালামের।

বিমানচালক হয়ে ওঠা হল না। তবে নিজের অদম্য চেষ্টায় তিনি হয়ে উঠলেন দেশের ‘মিসাইল ম্যান’। ১৯৯৮ সালে পোখরান বিস্ফোরণ পরীক্ষার অন্যতম কারিগর ছিলেন তিিন। পড়াশোনার জন্য এক বারই শুধু গিয়েছিলেন বিদেশে, ১৯৬৩-৬৪ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ‘নাসা’য়। যে বঙ্গোপসাগরের দিকে তাকিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতেন মা আসিম্মা, সেই সমুদ্রসৈকতেই দু’দশক ধরে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ করে গিয়েছেন ছেলে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে ছিলেন ডিআরডিও, ইসরোয়। মহাকাশ ও পরমাণু গবেষণায় তাঁর অবদানের জন্য পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ ও ভারতরত্নে সম্মানিত হয়েছিলেন আব্দুল কালাম।

ছবিতে ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের বিশেষ কিছু মুহূর্ত

স্মরণে মিসাইল ম্যান (১৯৩১-২০১৫)

২০০২ সালে ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন এপিজে। রাষ্ট্রপতি ভবনে ছিলেন ২০০৭ সাল পর্যন্ত। তাঁর সময়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা সর্বসাধারণ, বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্যখুলে দেওয়া হয়েছিল। ছেলে-বুড়ো,বিজ্ঞানী-শিক্ষক সকলের কাছেই তিনি ছিলেন ‘সর্বসাধারণের রাষ্ট্রপতি’।

রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি আবার ফিরে যান পড়াশোনার জগতে। শিলং, ইনদওর ও আমদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, তিরুঅনন্তপুরমের ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে নিয়মিত পড়াতেন। এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মঞ্চেই বক্তৃতা দিতে দিতে তাঁর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়া তাই এক আশ্চর্য সমাপতন!

ধর্মের গোঁড়ামি এড়িয়ে চলতেন বাবা-মা। ছোটবেলা থেকে মুক্তমনা ছিলেন আব্দুলও। গড়গড় করে মুখস্থ বলতে পারতেন ভগবদ্‌গীতা। কোরান শরিফও। তবে শুধু বইয়েই ডুবে থাকতেন না তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, কোথাও যাওয়ার আগেই পকেট থেকে বার করে ফেলতেন ছোট্ট চিরুনি। নামাজাদা হেয়ার স্টাইলিস্টের কল্যাণে তৈরি হয়েছিল তাঁর নিজস্ব চুলের ছাঁট। আর সব সময় বলতেন, লেখাপড়ার কোনও বিকল্প হয় না। স্কুলপড়ুয়াদেরও বারবার অনুপ্রাণিত করে বলেছেন, নিজের ভবিষ্যতের কারিগর হতে গেলে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আর কখনও কাজে ফাঁকি দেবে না। নিজের জীবনেও এ কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গিয়েছেন। কর্মজীবনে ঠিক দু’দিন ছুটি নিয়েছিলেন, মায়ের আর বাবার মৃত্যুদিনে।

বলে গিয়েছিলেন, ‘‘আমার মৃত্যুতে ছুটি ঘোষণা কোরো না। আমায় যদি ভালবাসো, মন দিয়ে কাজ করো সে দিন।’’

apj abdul kalam apj abdul kalam obituary apj abdul kalam mother missile man of india the wings of fire pokhran blast 1998 nuclear test ex president abpnewsletters MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy