Advertisement
E-Paper

ফেসবুক-গুগ্‌লের সাহায্য চাইল পুলিশ

রহস্যের অঙ্ক মিলছে না ইন্টারনেটে। তাই সাইবার দুনিয়া কাঁপানো দুই ‘দৈত্যের’ দ্বারস্থ মুম্বই পুলিশ। রাকেশ মারিয়ার বাহিনীর জরুরি বার্তা পৌঁছে গিয়েছে ফেসবুক ও গুগ্‌ল কর্তৃপক্ষের কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:০২

রহস্যের অঙ্ক মিলছে না ইন্টারনেটে। তাই সাইবার দুনিয়া কাঁপানো দুই ‘দৈত্যের’ দ্বারস্থ মুম্বই পুলিশ।

রাকেশ মারিয়ার বাহিনীর জরুরি বার্তা পৌঁছে গিয়েছে ফেসবুক ও গুগ্‌ল কর্তৃপক্ষের কাছে। শিনা বরা খুনের তদন্তে তাঁদের সাহায্য একান্ত প্রয়োজন। অফিসারদের একাংশের দাবি, রহস্যের জট তাঁরা প্রায় খুলে ফেলেছেন। তিন প্রধান অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রায় সব ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণও জোগাড় হয়ে গিয়েছে। তবু কিছু ‘ফাঁক’ এখনও জোড়া লাগছে না। সেই সূত্রগুলো রয়েছে কয়েকটা ফেসবুক ও জি-মেল অ্যাকাউন্টে। ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব খন্না ও শ্যাম রাই ছাড়া আর কেউ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত কি না, ওই সূত্র পেলে তা-ও জানা যাবে বলে অফিসারেরা নিশ্চিত।

গোড়া থেকেই পুলিশ বলে আসছে, শিনা হত্যায় সাইবার-যোগের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রথমত, ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল শিনা খুন হওয়ার পরেও তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সক্রিয় ছিল। সেখানে নিয়মিত তাঁর ছবি পোস্ট করা হতো। দ্বিতীয়ত, ইন্দ্রাণী এবং সঞ্জীবের মধ্যে ই-মেল এবং ফেসবুকে মেসেজ চালাচালির প্রমাণ মিলেছে বলেও পুলিশ সূত্রের দাবি। যে কারণে গত কালই কলকাতা থেকে সঞ্জীবের মোবাইল ও ল্যাপটপ পরীক্ষার জন্য নিয়ে এসেছে মুম্বই পুলিশ। সন্দেহ করা হচ্ছে, ফেসবুক মেসেঞ্জার বা ই-মেলের মাধ্যমেই সম্ভবত খুনের ছক চূড়ান্ত করেছিলেন ইন্দ্রাণী-সঞ্জীব। কিন্তু এই চক্রান্তে আরও কেউ তাঁদের সঙ্গে ছিল কি না, তা এ বার খতিয়ে দেখতে চাইছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার মুম্বই পুলিশের ডিসি ধনঞ্জয় কুলকার্নি বলেন, ‘‘এমনিতে এখন সব ধরনের মামলাতেই প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়। কিন্তু, শিনা বরা মামলা এখন অগ্রাধিকারের তালিকায় শীর্ষে। অনেক উত্তর খুঁজতে হচ্ছে। প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া খুবই জরুরি।’’

দুই সংস্থার কাছ থেকে ঠিক কী ধরনের সাহায্য চাইছে পুলিশ?

ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, মোটামুটি ২০০৯ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার শুরু করেন ইন্দ্রাণী। প্রথম দিকে বছর চারেক খুব একটা ফেসবুক করতেন না। ২০১৩ থেকে হঠাৎ ফেসবুকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। অনেক ছবি পোস্ট করতে থাকেন। যার মধ্যে স্বামী পিটার মুখোপাধ্যায় ও মেয়ে বিধির ছবিই ছিল বেশি। পিটার নিজেই দাবি করেছিলেন, মাঝেমধ্যেই শিনার প্রোফাইল থেকে তাঁর ছবি দেখাতেন ইন্দ্রাণী। পুলিশ মনে করছে, গোটা সময়টায় ঘন ঘন ফেসবুক করে, ছবি পোস্ট করে ইন্দ্রাণী এমন একটা আবহ তৈরি করতে চাইতেন— যেন সবই স্বাভাবিক আছে।

তার চেয়েও আশ্চর্য ঘটনা একটা ঘটেছে। এখন ইন্দ্রাণীর ফেসবুক প্রোফাইলে গেলে ২০০৯ থেকে ২০১৩— এই সময়টার কোনও পোস্ট বা চ্যাট রেকর্ড খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, এই চার বছরের মধ্যে কি ‘বিশেষ’ কোনও পোস্ট ছিল ইন্দ্রাণীর ওয়ালে? নাকি ফেসবুক মেসেঞ্জারে একান্ত গোপনীয় কোনও কথা চালাচালি হয়েছিল? শুধু ইন্দ্রাণীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নয়, তাঁর জি-মেল ইনবক্স থেকেও পুরনো অনেক মেল মুছে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, হয় ইন্দ্রাণী নিজেই এই সমস্ত রেকর্ড মুছে দিয়েছেন, না হলে কেউ তাঁকে এই কাজে সাহায্য করেছেন।

ঠিক যে ভাবে শিনার মৃত্যুর পরে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হয় ইন্দ্রাণী নিজে অথবা অন্য কেউ চালু রেখেছিলেন বলে মনে করছে পুলিশ। এই অ্যাকাউন্ট থেকে অনেক অনেককে পোস্ট পাঠানো হয়েছে। শিনার নিজের ছবিও পোস্ট করা হয়েছে। শিনার ফেসবুক পাসওয়ার্ড যে ইন্দ্রাণীর কাছে ছিল, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবে ইন্দ্রাণীর এক আত্মীয় দিন কয়েক আগে দাবি করেছিলেন, শিনার ভাই মিখাইল তাঁর ফেসবুক পাসওয়ার্ড জানতেন। ইন্দ্রাণীর চাপেই মিখাইল শিনার অফিসে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন বলে ওই আত্মীয় দাবি করেন। এখন শিনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কোন কোন আইপি অ্যাড্রেস থেকে লগ ইন হয়েছে (অর্থাৎ ইন্দ্রাণীর মুম্বইয়ের বাড়ি থেকে, না মিখাইলের গুয়াহাটির বাড়ি থেকে), সেটা বলতে পারবেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। পুলিশ অবশ্য মুছে দেওয়া তথ্য পুনরুদ্ধারেই জোর দিচ্ছে বেশি।

গুগ্‌লের এক ইঞ্জিনিয়ার এ দিন আমেরিকা থেকে ফোনে বলেন, ‘‘ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কবে নাগাদ চালু ছিল, কবে বন্ধ হল— এ সব বার করা তেমন কঠিন নয়। কিন্তু ৩০ দিন পেরিয়ে গেলে মুছে দেওয়া ই-মেল কিংবা চ্যাট উদ্ধার করা মুশকিল।’’ ইন্দ্রাণী মূলত কাদের সঙ্গে চ্যাট করতেন, সেটা জানা গেলে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টগুলিতে ঢুকে ওই কথোপকথন উদ্ধার করা সম্ভব বলে জানান তিনি। অবশ্যই যদি তা মুছে না দেওয়া হয়ে থাকে।

abpnewsletters Mumbai police facebook google
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy