মুঙ্গিয়া কুমারী
মাত্র পনেরো বছর বয়সেই অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিল ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে মুঙ্গিয়া কুমারী। আর সেই তাকেই কুসংস্কারের বলি হতে হল।
গত পরশু রাতে রাঁচির কাছে দশম ফলস এলাকার রাসেন গ্রামে ডাইনি অপবাদে একই পরিবারের তিনজন খুন হয়। তিনজনের একজন হল মুঙ্গিয়া। তার ভাই কাঞ্চন ও কাকা ডিম্বাও একই সঙ্গে খুন হয়। মারাত্মক জখম হয়ে মা সোমবারি ও দাদা হরিশ হাসপাতালে ভর্তি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুঙ্গিয়া ছিল স্থানীয় হাঞ্জেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। মেধাবি ছাত্রী হিসেবে স্কুলে সে পরিচিত ছিল। পড়াশোনা ছাড়াও মাত্র পনেরো বছর বয়সেই তার মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বোধ তৈরি হয়েছিল বলে স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন।
স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘মুঙ্গিয়া গরিব, মেধাবি ছাত্রী ছিল। সামাজিক সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে চাইছিল তার বন্ধুদের মধ্যে। ‘ডাইনি অপবাদ’-এর মতো কুসংস্কারের কবলে পড়ে ওর এই মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না।’’
মাস কয়েক আগে মুঙ্গিয়ার বাবা সাগর মুণ্ডা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। চাষের কাজ করত সাগর। বাবার মৃত্যুর পরে মুঙ্গিয়া সরব হয় ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে। সে স্কুলের শিক্ষকদের জানায়, চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য গ্রামের মানুষরা ম্যালেরিয়ার শিকার হচ্ছে। অথচ গ্রামের মানুষরা কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে মনে করছে, ডাইনির অভিশাপে মৃত্যু হচ্ছে। গ্রামগুলিতে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো দরকার। গ্রামবাসীদের কাছে মশা মারার ওষুধ পৌঁছে দিতে হবে। ওই গ্রামের মুখিয়া প্রিয়াঙ্কা দেবী বলেন, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পরে চরম অর্থসঙ্কটের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল মুঙ্গিয়া। গ্রামের উন্নতি নিয়েও সব সময় ভাবত।’’
আততায়ীর হাতে খুন হওয়ার কিছু ক্ষণ আগে, দেশের ৭০ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রবন্ধ লিখছিল মুঙ্গিয়া কুমারি। লেখা অবশ্য শেষ হয়নি। পুলিশ আজ সেই খাতা উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই খাতায় লেখা আছে: অনেক লড়াই, সংঘর্ষ ও বলিদানের পর আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশকে আরও সুন্দর করে তুলতে হবে। আর তো এক সপ্তাহ পরেই ৭০ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে চলেছে সারা দেশ। কিন্তু এখনও দেশ যে কুসংস্কার মুক্ত নয় তা জীবন দিয়েই প্রমাণ করে গেল মুঙ্গিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy