সেনা কমান্ডোদের এই কাজের পরে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি ফের জোরদার হল। সেনাবাহিনীর হাতে দিয়ে রাখা বিশেষ ক্ষমতার এই আইন প্রত্যাহারের দাবি করেছে এনপিপিও এনডিপিপি। এই দু’টি আঞ্চলিক দলই বিজেপি নেতৃত্বাধীন উত্তর-পূর্বের জোট নেডা তথা এনডিএ-র শরিক। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা এনপিপি জাতীয় সভাপতি কনরাড সাংমা উত্তর-পূর্বে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি জানান। নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের বিভিন্ন স্থানে আজ আফস্পা বিরোধী মিছিল বেরোয়। কংগ্রেসের তরফেও অভিযোগ আনা হয়, আফস্পা বলবৎ থাকার ফলেই বছরের পর বছর সেনা ও আধাসেনা সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে। সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র সিংহ, নাগাল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত দলের নেতা অজয় কুমার, সাংসদ গৌরব গগৈ ও অ্যান্টো অ্যান্টনি ৮ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডের মন জেলায় গিয়ে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। ত্রিপুরার তিপ্রা মথার চেয়ারম্যান প্রদ্যোত দেববর্মাও আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। আসু ও উত্তর-পূর্ব ছাত্র সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, এই ঘটনা দেখাল কেন্দ্র উত্তর-পূর্বে শান্তি ফেরাতে ইচ্ছুক নয়। এর জন্য দায়ী আফস্পা। মণিপুর ‘ওমেন গান সারভাইভার্স নেটওয়ার্ক’-এর বীণালক্ষ্মী নেপ্রাম বলেন, “বিনা বিচারে, বিনা প্ররোচনায় বছরের পর বছর সামরিক বাহিনী সাধারণ মানুষকে হত্যা করে চলেছে। আজ পর্যন্ত কারও শাস্তি হয়নি। মানুষ মারার অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে তাদের।”
মন জেলার ওটিংয়ে আজ নিহত গ্রামবাসীদের শেষকৃত্য হয়। আয়োজন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও তাতে অংশ নিয়ে বলেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা চাই নাগাল্যান্ড থেকে আফস্পা প্রত্যাহার করা হোক। এই আইন গোটা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তিনি আরও জানান, নাগাল্যান্ডের মন জেলায় সেনার গুলিতে মৃতদের পরিবারকে কেন্দ্রের তরফে ১১ লক্ষ ও রাজ্যের তরফে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। জখমদের কেন্দ্র ১ লক্ষ টাকা ও রাজ্য ৫০ হাজার টাকা করে দেবে।”
নিহত গ্রামবাসীদের শেষকৃত্যে যোগ দেন সব দল ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। রাজ্য জুড়ে চলে মৌন প্রার্থনা। নিহতদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়ে হর্নবিল উৎসব স্থগিত রাখা হয়েছে। ইএনপিও সংগঠনের নির্দেশে হর্নবিল উৎসবের বাইরে থাকা সব চাং ঘর, খাবার ঘর ও অন্যান্য প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে আজ নাগাল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে বন্ধ ডাকা হয়েছিল। তাতে বিক্ষিপ্ত কয়েকটি সংঘর্ষের খবর এসেছে। ডিমাপুরে ও বিভিন্ন স্থানে সেনার কনভয় আটকানো হয়। জওয়ানদের সঙ্গে জনতার বচসাও হয়।
এ দিকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দলের প্রতিনিধিদের ওটিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় বলেন, “আমরা লড়াই করতে যাচ্ছি না। মানুষের পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছি।” কিন্তু তাঁদের যাওয়া হয়নি। যা নিয়ে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, “আগেই ভয় পেয়ে গেলেন! কেন? যান গিয়ে নাটক করে আসুন, যেমন ত্রিপুরায় নাটক করতে গিয়েছিলেন। যদিও ত্রিপুরায় অশ্বডিম্ব প্রসব হয়েছে। প্রচুর কাটমানির পয়সা জমেছে। তাই পলিটিক্যাল টুরিজ়ম করতে বেরিয়েছেন।”
তৃণমূলের তরফে বিশ্বজিৎ দেব বলেন, “আমরা যখন বিমানে উঠব, খবর পেলাম, ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। খবর পেলাম, যোরহাট থেকেই বেরোতে দেবে না। নাগাল্যান্ড ও ভারত সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সেখানকার মানুষের সমস্যার কোনও সমাধান করতে পারেনি। কারণ জানতে চাই। কারা দায়ী তা জানতে চাই।” দলের সাংসদ সুস্মিতা দেবের বক্তব্য, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁরা অবশ্যই ওই গ্রামে যাবেন। তবে ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন। গোটা দেশকে জানানো উচিত কোথায়, কার ব্যর্থতা। সুস্মিতা বলেন, “দেশের ইতিহাসে হয়তো এ রকম হয়নি, সশস্ত্র বাহিনী মানুষের উপরে গুলি চালাচ্ছে, আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন গোয়েন্দা ব্যর্থতা! ক্ষমা চাইছি! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।”
পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘গোয়েন্দা ব্যর্থতা, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ব্যর্থতা। আমরা ওঁদের পদত্যাগ চাইছি। ওঁরা পদত্যাগ করবেন না। ওঁদের সরাতে হবে।”
সুস্মিতা জানান, দল হিসেবে আফস্পা নিয়ে তৃণমূল অবস্থান নিতে পারে না। এটা সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত। এটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত উত্তর-পূর্ব ভারতের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কংগ্রেসের সময়েও আফস্পা ছিল। কী করা উচিত, তা আলোচনার মাধ্যমেই স্থির করা ভাল। পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্যে মোদী সরকার এখন বিএসএফের এলাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এই ঘটনাই প্রমাণ যে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের সরকারকে সঙ্গে নিয়ে চলছে না। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে ভয়ঙ্কর আক্রমণ।