গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের বদলে স্বামী বিবেকানন্দ!
দিল্লির মানচিত্রে আচমকাই তুঘলক লেনের জায়গায় স্বামী বিবেকানন্দ মার্গের উদয় হল। তুঘলক লেনের বাসিন্দা বিজেপির এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও এক সাংসদ তাঁদের সরকারি বাসভবনের নামফলকে স্বামী বিবেকানন্দ মার্গ লিখে ফেললেন। তুঘলক লেন রইল। তবে ছোট হরফে। বন্ধনীর মধ্যে।
সরকারি ভাবে নামবদল হয়নি। তুঘলক লেনের নাম পাল্টে ফেলার কোনও সিদ্ধান্ত নয়াদিল্লি পুরসভা নেয়নি। অথচ বিজেপির মন্ত্রী, সাংসদেরা নিজেরাই রাস্তার নাম পাল্টে ফেললেন কেন? তা হলে কি ঔরঙ্গজেব রোডের পরে এ বার দিল্লিতে তুঘলক রোডের নামও বদলাতে চলেছে?
রাহুল গান্ধী বহু বছর তুঘলক লেনের বাসিন্দা ছিলেন। সেই রাস্তাতেই বাড়ি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৃষণ পাল গুর্জরের। তিনি কেন্দ্রীয় সমবায় মন্ত্রকে অমিত শাহের প্রতিমন্ত্রী। গুর্জর বাড়ির নামফলকে তুঘলক লেনের বদলে স্বামী বিবেকানন্দ মার্গ লিখেছেন। তাঁর পাশাপাশি বিজেপির সাংসদ দিনেশ শর্মাও বাড়ির নামফলকে তুঘলক লেন ছোট হরফে লিখে বড় করে স্বামী বিবেকানন্দ মার্গ লিখেছেন। দিনেশ লখনউয়ের মেয়র ও যোগী আদিত্যনাথ সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর যুক্তি, বৃহস্পতিবারই তিনি গৃহপ্রবেশ করেছেন। তিনি রাস্তার নাম বদলাননি। তবে গুগল ম্যাপে এই রাস্তার নাম স্বামী বিবেকানন্দ মার্গ দেখায়। তাই তিনি আশপাশের বাংলোয় কী নাম লেখা দেখে নামফলক লেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আশপাশে অনেকেই স্বামী বিবেকানন্দ মার্গ লিখেছেন। দিনেশের যুক্তি, ‘‘আমি জানি সাংসদের রাস্তার নামবদলের ক্ষমতা নেই। সেই ক্ষমতা পুরসভার নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।’’
বছর দশেক আগে নয়াদিল্লি পুরসভা ঔরঙ্গজেব রোডের নাম বদলে এ পি জে আবদুল কালাম রোড রাখা হয়েছিল। তার পরে অবশ্য ওই রাস্তার পাশেই একটি ছোট গলির নাম ঔরঙ্গজেব লেন থেকে গিয়েছিল।বছর দেড়েক আগে সেই নামও বদলায়। তার আগেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন যে রাস্তায়, তার নাম রেস কোর্স রোড থেকে বদলে লোককল্যাণ মার্গ করা হয়েছিল। তিন বছর আগে দিল্লি বিজেপির সভাপতি আদেশ গুপ্ত নয়াদিল্লি পুরসভার চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখে দাবি করেছিলেন, শাহজাহান রোড,হুমায়ুন রোড, তুঘলক রোড, আকবর রোডের নাম বদলে ফেলা হোক। কারণ মুঘল, সুলতানি শাসনকাল হল ভারতের গোলামির প্রতীক। আদেশ অবশ্য তুঘলক রোডের নাম বদলে গুরু গোবিন্দ সিংহ মার্গ, আকবর রোডের নাম বদলে মহারাণা প্রতাপ রোড করার দাবি তুলেছিলেন। যদিও তেমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
সম্প্রতি দিল্লি বিধানসভার ভোটে জিতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে উত্তর-পূর্ব দিল্লির মুস্তফাবাদের বিজেপি বিধায়ক মোহন বিস্ত মুস্তফাবাদের নাম বদলে শিববিহার বা শিবপুরী রাখার দাবি তুলেছেন। এই এলাকাতেই সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছিল এবং এখানে বিপুল সংখ্যালঘু মানুষের বাস। বিস্তের অবশ্য দাবি, মুস্তফাবাদে হিন্দুদের জনসংখ্যা মুসলিমদের থেকে সামান্য হলেও বেশি। তাই হিন্দুদের ইচ্ছে অনুযায়ী নাম হওয়া উচিত। অতীতে দিল্লির বাইরে বিজেপির উদ্যোগে ইলাহাবাদের নাম বদলে প্রয়াগরাজ, মুঘলসরাই স্টেশনের নাম বদলে দীনদয়াল উপাধ্যায় জংশন, ফৈজাবাদ জেলার নাম বদলে অযোধ্যা রাখা হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা অজয়কুমার লাল্লুর কটাক্ষ, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রুটিরুজি, মূল্যবৃদ্ধির সমস্যাসমাধানে ব্যর্থ। তাই বাস্তব সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে এখন রাস্তার নাম বদল করতে নেমেছে। সমাজবাদী পার্টির অভিযোগ, বিজেপির নেতাদের এ সব পদক্ষেপ তাঁদের অনগ্রসর, দলিত, সংখ্যালঘু বিরোধীমানসিকতার পরিচয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)