Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Narendra Modi

মোদীর মুখে ‘আমরা’, ব্যর্থতার ভাগও কি...!

তা হলে ব্যর্থতার দায় কার? নাকি তার পাল্লা ভারী বুঝেই গত সাত বছরের কাজের ফসল এখন দেশবাসীর সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছেন মোদী?

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২১ ০৪:৩৬
Share: Save:

‘আমি’ নয়। ‘আমরা’!

কেন্দ্রে নিজের নেতৃত্বাধীন সরকারের সপ্তম বর্ষপূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘‘এই সাত বছরে যা কিছু ‘সাফল্য’, তা দেশের এবং দেশের মানুষের।’’

বিরোধীরা প্রশ্ন তুললেন, তা হলে ব্যর্থতার দায় কার? নাকি তার পাল্লা ভারী বুঝেই গত সাত বছরের কাজের ফসল এখন দেশবাসীর সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছেন মোদী?

প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর মাসের শেষ রবিবারের ‘মন কি বাত’ রেডিয়ো-বার্তায় বলেছেন, “এই সাত বছরে সব কাজ সম্ভব হয়েছে, কারণ, সরকার ও জনতার বদলে আমরা একসঙ্গে টিম-ইন্ডিয়া হিসেবে কাজ করেছি।” বিরোধীদের প্রশ্ন, জনতাকে সাফল্যের ভাগিদার করার ‘অছিলায়’ কি আসলে কোভিড মোকাবিলায় চূড়ান্ত ব্যর্থতার দায়ও তাঁদের ঘাড়ে ঠেলে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী?

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে নরেন্দ্র মোদী কখনও দাভোসের ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম, কখনও সংসদে দাঁড়িয়ে দাবি করেছিলেন, কোভিড মোকাবিলায় সারা বিশ্বের সামনে ভারত নজির তৈরি করেছে। কিন্তু গত এক মাসে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় শয্যা নগণ্য। অক্সিজেন বাড়ন্ত। প্রতিষেধক জোগান দিতে না-পারায় রাজ্যে-রাজ্যে ঢিমে গতিতে চলছে টিকাকরণ। এই পরিস্থিতিতে এ দিন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘কোভিড অতিমারি এমন এক সঙ্কট, যাতে গোটা দুনিয়া ত্রস্ত। বহু মানুষ আপনজনকে হারিয়েছেন। বড় বড় দেশও এর ধ্বংসলীলা থেকে বাঁচতে পারেনি।’’

মোদীর অবশ্য দাবি, ভারত এই কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হবে। সেই লড়াইয়ে প্রতিষেধকই প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠবে। অক্সিজেনের অভাব মেটাতে দেশে তার উৎপাদন দশ গুণ বেড়েছে বলেও ‘বড়াই করেছেন’ তিনি।

কিন্তু প্রতিষেধকের অভাব মিটবে কবে? মোদীর বক্তৃতায় তার কোনও নির্দিষ্ট উল্লেখ নেই। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, “করোনার বিরুদ্ধে লড়তে সঠিক নীতি, মনোভাব, সঙ্কল্প প্রয়োজন। মাসে এক বার নিরর্থক বক্তৃতা নয়।” কংগ্রেস আজ মোদী সরকারকে দেশের পক্ষে ‘হানিকারক’ (ক্ষতিকর) তকমা দিয়ে সাত বছরের জন্য সাত দফা ‘চার্জশিট’ পেশ করেছে। অন্যান্য বিরোধীদেরও কটাক্ষ, কোভিডের ধাক্কার আগেই দেশের অর্থব্যবস্থা ‘গর্তব্যবস্থা’-য় পরিণত হয়েছে। অথচ অনেকের মতে, মোদীর প্রথম বার দিল্লির তখ্‌ত জয়ের অন্যতম কারণ ছিল, এই অর্থনীতির ভোল বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। কারণ, তাতে ভর করে বছরে দু’কোটি কাজের সুযোগ তৈরির স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন তিনি। বিরোধী শিবিরের দাবি, নতুন চাকরি তো দূর অস্ত‌্‌,

নোটবন্দি-লকডাউনের জেরে বরং কাজ খুইয়েছেন বহু মানুষ।

কোভিডের বিরুদ্ধে সামনের সারিতে থাকা কর্মীদের মনোবল বাড়াতে এ দিন রেডিয়ো-বার্তার মধ্যেই মোদী ফোনে কথা বলেছেন অক্সিজেন-ট্যাঙ্কার চালক দীনেশ উপাধ্যায়, অক্সিজেন ট্যাঙ্কারবাহী রেলের মহিলা চালক শিরিশা গজনী, দিল্লির ল্যাব টেকনিসিয়ান প্রকাশ কন্ডপাল, বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে পট্টনায়কের সঙ্গে। পট্টনায়কের স্কুল-ছাত্রী কন্যা অদিতির মুখে কোভিডের বিরুদ্ধে জয়ের কথা শুনে মোদী বলেন, ‘‘এ দেশে মেয়েদের মুখ নিঃসৃত শব্দে সরস্বতী বিরাজমান। অদিতির কথা আসলে ঈশ্বরের বাণী।’’

বিজেপির প্রাক্তন শরিক শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউতের মতে, ‘‘মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে কি না, তা নিয়ে মোদী সরকারের আত্মসমীক্ষা করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী আজ ‘মন কি বাত’-এ বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, সত্তর বছরে যে কাজ হয়নি, সাত বছরে তিনি তা করে দেখিয়েছেন।’’ বিচ্ছেদের আগে ছ’বছর কেন্দ্রে মোদী সরকারের শরিক শিবসেনার ওই নেতার দাবি, “জওহরলাল নেহরু থেকে মনমোহন সিংহ পর্যন্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের ভাল কাজের জন্যই দেশ এখনও টিকে রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi BJP Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE