Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

প্রচার কৌশল পাল্টালেন মোদী, তীব্র আক্রমণ সপা এবং কংগ্রেসকে

উত্তরপ্রদেশে ভোটের মাঝপথে এসে প্রচার কৌশল অনেকটাই বদলে ফেললেন নরেন্দ্র মোদী।জোটের হাওয়া জোরালো হয়ে উঠছে দেখে অখিলেশ-রাহুলের বিরুদ্ধে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস–সমাজবাদী পার্টির শক্তি কমাতে মায়াবতীকে কাজে লাগানোর জন্যও মোদী তৎপর হয়েছেন।

প্রচারে প্রধানমন্ত্রী। রবিবার উত্তরপ্রদেশের ফতেপুরে। ছবি: পিটিআই

প্রচারে প্রধানমন্ত্রী। রবিবার উত্তরপ্রদেশের ফতেপুরে। ছবি: পিটিআই

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:২৪
Share: Save:

উত্তরপ্রদেশে ভোটের মাঝপথে এসে প্রচার কৌশল অনেকটাই বদলে ফেললেন নরেন্দ্র মোদী।

জোটের হাওয়া জোরালো হয়ে উঠছে দেখে অখিলেশ-রাহুলের বিরুদ্ধে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস–সমাজবাদী পার্টির শক্তি কমাতে মায়াবতীকে কাজে লাগানোর জন্যও মোদী তৎপর হয়েছেন। পাশাপাশি, নোট বাতিল নিয়ে এখন সরাসরি জোর গলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে প্রচার করতে চাইছেন বিজেপি নেতারা। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা ঠিক করেছেন, ব্যাকফুটে নয়, এগিয়ে খেলেই উত্তরপ্রদেশে ভোটের প্রচার চালাবেন। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী আজ ফতেপুরের জনসভায় মেরুকরণের তাসও খেলে দিয়েছেন। মোদী বলেন, ‘‘গ্রামে কবরস্থানের জায়গা করা হলে শ্মশানঘাটও বানানো উচিত। যদি রমজানের সময় বিদ্যুৎ দেওয়া হয়, দীপাবলির সময়েও তা দিতে হবে।’’ ভোটের মাঝপথে গো-মাংস বিতর্কও শুরু হয়েছে। অমিত শাহ বলেছেন, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায় এলে সব কসাইখানা বন্ধ করে ছাড়বে। আর অখিলেশের পাল্টা চ্যালেঞ্জ, মোদী আর অমিত শাহ দিল্লি ফিরে গিয়ে মাংসের রফতানি বন্ধ করে দেখান।

ভোট দেওয়ার পরে। সাইফাইয়ে রবিবার পিটিআইয়ের ছবি।

উত্তরপ্রদেশের ভোট প্রক্রিয়ার তিনটি পর্ব শেষ। এখনও বাকি চারটি পর্ব। মোট ৪০৩টি আসনের মধ্যে ২০৯টিতে ভোট হয়ে গিয়েছে। ১৯৪টি আসনে ভোট বাকি। মোদী-অমিত শাহ ঠিক করেছেন, এই পর্যায়গুলিতে অনেক বেশি ‘আক্রমণাত্মক’ হয়ে উঠবে বিজেপি। সেই কৌশল নিয়েই মোদী-শাহ এখন তাঁদের জনসভাগুলিতে অখিলেশকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে শুরু করেছেন। অখিলেশের ‘কংগ্রেস-প্রীতি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মোদী-অমিত শাহ বলছেন, কংগ্রেস মুলায়মকে তিন দশক আগে হত্যার চেষ্টা করেছিল। সেই ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন অখিলেশ। কংগ্রেস ও সপা-র সমঝোতাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে জোট সমর্থকদের ভাঙার চেষ্টা করছেন মোদী। পাশাপাশি, মোদী-অমিত শাহ জুটির সিদ্ধান্ত, নোট বাতিলকে প্রচারের প্রধান হাতিয়ার করা। এই সিদ্ধান্ত যে গরিব মানুষের স্বার্থে ও ধনীদের বিরুদ্ধে— সেটা প্রচার করা। মোদী মনে করছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে রক্ষণাত্মক অবস্থান নিলে আমও যাবে ছালাও যাবে। ফলে এই ‘মতাদর্শগত অবস্থান’-র পক্ষে জোরদার সওয়াল করতে হবে। একই ভাবে মোদী এ দিন সারের কালোবাজারির বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন। ফতেপুরের জনসভায় মোদী প্রশ্ন করেন, ‘‘সারের কালোবাজারিরা কি আমাকে শাস্তি দিতে চাইবে না? তা হলে কারা আমাকে রক্ষা করবে?’’ বিজেপির জনসভা থেকে আওয়াজ ওঠে, ‘‘আমরা, আমরা!’’

আরও পড়ুন:হাফিজদের শাস্তি নিশ্চিত করতে উদ্যোগী দিল্লি

জোটকে আক্রমণের পাশাপাশি বিজেপি এখন কৌশলে মায়াবতীর সঙ্গে বোঝাপড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। মায়াবতীর কারণে মুসলিম ভোট যাতে ভাগাভাগি হয়— সে জন্যও সক্রিয় বিজেপি। মায়াবতীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অভিযোগ তুলে বিজেপি নালিশ করেছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। এর পিছনে রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে। মায়াবতীকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরে মুসলিম ভোট ভাগ করার চেষ্টায় রয়েছে বিজেপি। সূত্রের খবর, জামা মসজিদের শাহি ইমামের অখিলেশ-বিরোধী ও মায়াবতীর পক্ষে ফতোয়াকে বিএসপি-র দিকে নিয়ে আসতে তলে তলে সক্রিয় হয়েছে বিজেপি।

ভোটের তিন পর্ব কেটে গেলেও রাজ্যের অনেক শীর্ষ নেতাকেই সে ভাবে প্রচার করতে দেখা যায়নি। মোদী-অমিত শাহ এ নিয়ে এখন শীর্ষ স্থানীয় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু রাজনাথ নন, সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের প্রচারে সামিল করানোর চেষ্টা হচ্ছে। এত দিন মোদী-অমিত জুটিই ছিল শেষ কথা। কিন্তু বিজেপির শীর্ষ নেতারা এটাও বুঝতে পারছেন, তাদের তরফে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী না দেওয়ায় মূল রাজনৈতিক লড়াইটা অখিলেশ-রাহুল বনাম নরেন্দ্র মোদীর লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। জিতলে মোদীর জয়। হারলে মোদীরই পরাজয়। বিজেপির অনেক নেতাই মনে করছেন, মোদী-বিরোধী জাতীয় অসন্তোষ রাজ্যে অখিলেশ-বিরোধী অসন্তোষের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে। এই কারণে প্রচার কৌশলে বদল। আর আক্রমণেই নেতৃত্বে সেই মোদী। প্রথমে ঠিক ছিল প্রতিটি পর্যায়ে শুধু দু’টি করে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর জনসভার সংখ্যা এখন দ্বিগুণের বেশি করে দেওয়া হয়েছে।

এক কথায় বিজেপি রণং-দেহি মুডে। আত্মরক্ষার শ্রেষ্ঠ পথ আক্রমণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE