Advertisement
E-Paper

বিদেশযাত্রা বা ছুটি নয়, মন্ত্রীরা মোদীর শাসনে

নতুন মন্ত্রীদের এমনই নিগড়ে বেঁধেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৯ ০২:৫২

গরমে হাসফাঁস অবস্থা। কাঠফাটা রোদ্দুর মাথায় নিয়ে গত কয়েক মাস ভোট কেটেছে। কিন্তু গরম পড়েছে বলে ছুটিতে চলে যেতে হবে, এমনটি যেন না-হয়। বিদেশে যাওয়া তো নৈব নৈব চ।

নতুন মন্ত্রীদের এমনই নিগড়ে বেঁধেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মন্ত্রীদের শপথ নেওয়ার আগেই চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সরকার কী ভাবে কাজ করে, আধ ঘণ্টার মতো সময়ে তা ব্যাখ্যাও করেন। বিজেপির এক নতুন মন্ত্রীর কথায়, সেই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন— কী করবেন, কী করবেন না। আর সেখানেই তিনি স্পষ্ট বলেছেন, গরমের ছুটি বাতিল। মন্ত্রকেই সকলকে মন দিতে হবে। কাজ শিখতে হবে। বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত খুব প্রয়োজন না-হলে দিল্লিতেই থাকতে হবে। নির্বাচনী কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার হলে বেছে নিতে হবে শনি ও রবিবার। কিন্তু সেখানে গিয়েও নিজেদের ‘স্বাগত সমারোহ’ অনুষ্ঠানে মাতার কোনও প্রয়োজন নেই।

মোদীর নির্দেশ হুবহু পালনের নমুনাও মিলতে শুরু করেছে। কয়লা ও খনি এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী আজ সন্ধেয় টুইট করে জানান, ‘‘আগামিকাল নিজের কেন্দ্র (কর্নাটকের ধারওয়াড়)-এ পৌঁছব। যাঁরা আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে আসবেন, প্রত্যেককে অনুরোধ করছি, দয়া করে ফুলের তোড়া, শাল, স্মারক বা উপহার আনবেন না।... আসুন ওই অর্থ আমরা গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করি।’’ যদিও প্রহ্লাদের পরের টুইটেই রয়েছে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার একটি ছবি। দেখা যাচ্ছে, গুলবর্গায় দলের জয়ে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন, এমন এক বিধান পরিষদ সদস্য তাঁর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিচ্ছেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে মোদীর মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ জনা কুড়ি। পুরনো যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা মোদীর কাজের ধরন বিলক্ষণ জানেন। এটিও জানেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘নজর’ সব সময় তাঁদের উপর রয়েছে। পাঁচ বছর আগে, মোদীর প্রথম সরকার তখন সবে
শুরু হয়েছে। সরকারি কাজে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই বিদেশে যাচ্ছিলেন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। জিন্‌স আর টি-শার্ট পরে। বাড়ি
থেকে বেরিয়ে সবে দু’কিলোমিটার মতো গিয়েছেন। ফোন আসে প্রধানমন্ত্রীর, ‘‘মন্ত্রী হিসেবে এই পোশাক উপযুক্ত নয়।’’ তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে পোশাক বদলে ফের বিমানবন্দরে যান জাভড়েকর।

গোটা ভোট প্রচারে মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ বিদেশে ছুটি কাটানো নিয়ে রাহুল গাঁধীকে কটাক্ষ করে এসেছেন। সেই সঙ্গে বারবার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে তিনি কয়েক দশক ধরে চেনেন। আজ পর্যন্ত এক দিনের জন্যও ছুটি নেননি। কাজ না-থাকলেও নতুন কাজ খুঁজে নেন। দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই কাজ করেন। বিজেপির মন্ত্রী-নেতাদের মধ্যেও সেই ভাবমূর্তি মজ্জায় ঢুকে গিয়েছে। পশুপালন মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়ে গিরিরাজ সিংহের মতো মন্ত্রীও তাই পাখি পড়ার মতো বলে ফেললেন, ‘‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০ ঘণ্টার মধ্যে ২৪ ঘণ্টা কাজ করেন।’’ প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক মেহনতের সময় দু’ঘণ্টা বাড়িয়ে আসলে বলতে চেয়েছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টা!

কিন্তু মোদীর এই ‘পরিশ্রম’-এর প্রচার বিরোধী শিবিরের নেতাদের অনেককেই চাপে ফেলে দিয়েছে। কেউ সেটি চাপা গলায় বলেন, কেউ খোলাখুলি। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব যেমন বলেন, ‘‘পরিবার নিয়ে ছুটি কাটানোও তো দরকার। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতে গেলে ছুটি নেওয়া যেন অপরাধ!’’ কিন্তু বিরোধীরা যা-ই বলুক, বিজেপির সাফ কথা— এখন শুধু ‘মোদী জমানা’ই নয়, ‘মোদী-ঘরানা’ও বটে। ফলে বাকি মন্ত্রীদেরও সেই ঘরানায় তাল ঠুকতে হবে।

Narendra Modi BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy