Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

লক্ষ্য দিল্লি, শিখদের ফের ক্ষতিপূরণ মোদীর

সুপ্রিম কোর্টের কড়া সমালোচনার পরে রাজধানীতে ভোটের দিন যে দ্রুত ঘনিয়ে আসছে, আগেই বুঝেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এ বার তাই সেই লক্ষ্য পূরণে সক্রিয় হল কেন্দ্র। রাজধানীর অন্যতম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী শিখ সমাজের সমর্থন পেতে ’৮৪ দাঙ্গার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নতুন করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করল মোদী সরকার। আজ কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, শিখ-দাঙ্গায় যে ব্যক্তিদের মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে আগামী দিনে দাঙ্গা, সন্ত্রাসবাদী বা মাওবাদী হামলায় কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হলে তিন লক্ষ টাকার পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ বাড়িয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টের কড়া সমালোচনার পরে রাজধানীতে ভোটের দিন যে দ্রুত ঘনিয়ে আসছে, আগেই বুঝেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এ বার তাই সেই লক্ষ্য পূরণে সক্রিয় হল কেন্দ্র।

রাজধানীর অন্যতম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী শিখ সমাজের সমর্থন পেতে ’৮৪ দাঙ্গার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নতুন করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করল মোদী সরকার। আজ কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, শিখ-দাঙ্গায় যে ব্যক্তিদের মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে আগামী দিনে দাঙ্গা, সন্ত্রাসবাদী বা মাওবাদী হামলায় কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হলে তিন লক্ষ টাকার পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ বাড়িয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।

আগামিকাল ইন্দিরা গাঁধীর ত্রিশতম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৪ সালে শিখ দেহরক্ষীদের হাতে ইন্দিরার হত্যার পরেই দিল্লিতে শুরু হয়েছিল শিখ নিধন পর্ব। সরকারি হিসেবে মোট ৩৩২৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল ওই সংঘর্ষে। যাঁদের অধিকাংশই শিখ সমাজের। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুবার্ষিকীর ঠিক আগের দিন নিহত ব্যক্তিদের জন্য ওই আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করল সরকার। আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে স্বামী বা স্ত্রী, যিনি জীবিত থাকবেন তিনি ওই ক্ষতিপূরণ পাবেন। যদি স্বামী ও স্ত্রী দু’জনেই মারা গিয়ে থাকেন, তা হলে তাঁদের সন্তানরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি ইতিমধ্যেই কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকলেও, এই নতুন ক্ষতিপূরণ পেতে কোনও অসুবিধা হবে না স্পষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্র।

জম্মু-কাশ্মীর ও ঝাড়খণ্ডের পরেই দিল্লিতে নির্বাচন সেরে ফেলতে চাইছে কেন্দ্র। দিল্লিতে সরকার গড়া নিয়ে অযথা দেরি করায় চলতি সপ্তাহেই শীর্ষ আদালতের কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মোদী সরকারকে। তাই দিল্লি নির্বাচনকে মাথায় রেখে শিখ-সমাজকে বার্তা দিতে তৎপর হলেন মোদী-অমিত শাহেরা। আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি হত্যালীলায় অভিযুক্ত প্রধান চক্রীদের সাজা দিতে নতুন করে তদন্ত ঘোষণার পরিকল্পনাও রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের। প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতে দীর্ঘ দিন আইনি লড়াই করছেন দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবী এইচ এস ফুলকা। আজ সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, “এ বার প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করুক সরকার।”

শিখ দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি প্রথম থেকেই আদালতে অভিযোগ জানিয়ে আসছিল, ওই ঘটনার পিছনে দায়ী ছিলেন জগদীশ টাইটলার, সজ্জন কুমারের মতো তৎকালীন কংগ্রেস নেতারা। অভিযোগ, গত দশ বছরে কেন্দ্রে ও দিল্লিতে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকায় অভিযুক্তদের ভূমিকা কার্যত লঘু করে দেখানো হয়েছে। প্রমাণাভাবে অধিকাংশ অভিযুক্ত ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। আর শাস্তিও হয়েছে নামমাত্র।

কংগ্রেসের প্রতি শিখ সমাজের সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছিল অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টিও। গত বিধানসভা নির্বাচনে নতুন করে ’৮৪ দাঙ্গার তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আপ শিবিরকে ঢেলে সমর্থন জানায় শিখ সমাজ। তাই বিজেপি এখন বুঝতে পারছে, দিল্লি দখলে শিখ সম্প্রদায়ের সমর্থন তাদের প্রয়োজন। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভোট ঘোষণার অনেক আগেই আপের সেই জনসমর্থনে চিড় ধরাতে পরিকল্পিত ভাবে আজ এই পদক্ষেপ করল মোদী সরকার। যার প্রেক্ষিতে আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবালের বক্তব্য, “৮৪-র দাঙ্গায় মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ভাবনা অবশ্যই ভাল। কিন্তু দেখতে হবে, ওঁরা যেন সুবিচার পান। আমরা সরকারে এসেই শিখ দাঙ্গার তদন্তে সিট গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলাম। কেন্দ্রের উচিত সেটা প্রকাশ্যে জানানো।” আর কংগ্রেসের দাবি, এটা রাজনৈতিক চমক ছাড়া আর কিছুই নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE