ব্রিগেডে বিরোধীদের ‘মহাজোট’-কে ‘মহাভেজাল’ বলে আখ্যা দিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও বলে ফেললেন, ‘মহাভেজালের সরকারই ক্ষমতায় আসতে চলেছে!’
নিছক মুখ ফসকে বলা, নাকি ‘ফ্রয়েডিয় স্লিপ’?
বৃহস্পতিবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতার পর প্রশ্নটা স্বাভাবিক নিয়মেই উঠল। কারণ এমনিতে মুখ ফসকে কিছু বলার লোক মোদী নন। সেই তিনিই আজ সংসদে দাঁড়িয়ে নিশানা করলেন ‘কলকাতায় এককাট্টা হওয়া’ বিরোধীদের জোটকে। আর সেটা করতে গিয়ে মুখ ফসকে সেই জোটের ক্ষমতা দখলের কথা বলেছেন! তা দেখে রাজনীতিকদের মত একটাই। তা হল, এই মহাজোট নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন মোদী। সে কারণেই তাঁর অবচেতনের কথা ভরা সভায় এ ভাবে বেরিয়ে এসেছে।
এ বারের বাজেট অধিবেশনই বর্তমান সরকারের শেষ সংসদের অধিবেশন। এবং রাষ্ট্রপতি বক্তৃতা নিয়ে আলোচনায় আজকের জবাবি বক্তৃতাই সম্ভবত এই লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর শেষ বক্তৃতা। যদি না তিনি বাজেট নিয়ে বিতর্কে ফের অংশ নেন। মোদী নিজেই বলেছেন, এর পরে
তিনি ‘জনতা জনার্দন’-এর সামনে যাবেন। নিজের কাজের ‘লেখাজোখা’ পেশ করবেন।
বাংলায় মোদী: প্রধানমন্ত্রী কে কতটা চেনেন? খেলুন কুইজ
সেই ‘লেখাজোখা’-র হিসেব দিতে গিয়েই আজ লোকসভায় অনুপস্থিত রাহুল গাঁধীর এত দিনের তোলা প্রায় সব অভিযোগের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মোদী। যদিও এড়িয়ে গিয়েছেন অস্বস্তির প্রসঙ্গগুলি! যেমন কংগ্রেস শাসনের ৫৫ বছরের সঙ্গে নিজের ৫৫ মাসের কাজের তুলনা করেছেন, কিন্তু এড়িয়ে গিয়েছেন চাকরির সংখ্যা। বলেছেন, নিচুতলা থেকে উঠে এসেছেন বলেই তাঁকে কংগ্রেসের আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে, কিন্তু এড়িয়ে গিয়েছেন
রাফাল নিয়ে রাহুলের তোলা অভিযোগের জবাব।
তবে রাফাল প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস বায়ুসেনার শক্তি দুর্বল করতে চাইছে। কোন সংস্থাকে ফায়দা পাইয়ে দিতে রাফাল চুক্তি বাতিল করার চেষ্টা হচ্ছে?’’ সেই সঙ্গেই রাহুলের ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানের জবাবে বলেছেন, ‘উল্টা চোর চৌকিদারকো ডাঁটে’!
সেই সঙ্গেই এনেছেন বিরোধীদের মহাজোট-প্রসঙ্গ। যাকে ‘কলকাতায় এককাট্টা হওয়া মহাভেজাল’ বলে আক্রমণ করেছেন। ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে বিরোধীরা একজোট হয়েছিলেন। এ বার সিবিআইকে কাজে লাগানো নিয়েও বিরোধীরা ফের মমতার পাশে। আজ তাই কংগ্রেসের পাশাপাশি, নাম না করে মমতা ও তৃণমূলকে একাধিক বার বিঁধেছেন মোদী।
আয়ুষ্মান ভারত, চাষিদের জন্য ন্যূনতম আয়ের প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নাম না করে মমতাকে নিশানা করেছেন মোদী। আবার তৃণমূলের সাংসদরা বক্তৃতার মাঝে তাঁকে কটাক্ষ করলে নারদ-কাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করে, পকেটে হাত ঢুকিয়ে অভিনয় করে বলেছেন, ‘‘টিভির সেই দৃশ্যটা এখনও মনে আছে। নোট এই ভাবে এ পকেটে, ও পকেটে রাখা হত!’’
আর এই সব করতে গিয়েই বলে ফেলেছেন ‘মহামিলাবটি সরকার আনেওয়ালি হ্যায়’! শুনে কংগ্রেস নেতারা হাসি মুখে ‘শুক্রিয়া’ জানিয়েছেন, তৃণমূলের সাংসদরা উল্লসিত হয়ে উঠেছেন। ব্যাপারটা বুঝে হতবাক হয়ে যান বিজেপি সাংসদরাও। বিযাপারটা বুঝে নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের আসনের দিকে তাকিয়ে মোদী বলেন, ‘‘মহাভেজাল সরকার এখানে পৌঁছতে পারবে না।’’
মোদীর দাবি, ওই মহাজোটের সরকারের কথা দেশের কেউ কল্পনা করছে না। কিন্তু রাজ্যে রাজ্যে বিরোধীদের মধ্যে মতভেদ ও ফাটলই যে তাঁর আশা, তা মোদীর কথাতেই স্পষ্ট। লোকসভায় কংগ্রেস, সিপিএমের নেতাদের এক সঙ্গে সরব হতে দেখে মোদী বলেছেন, কেরলে একে অপরের মুখও দেখেন না!
মোদীর দাবি, ২০২৪ পর্যন্ত তিনিই ক্ষমতায় থাকবেন। যা শুনে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘অহঙ্কারের ভাব ফুটে বেরোচ্ছে।’’ মোদীর পাল্টা দাবি, এ আসলে সমর্পণ। এই সমর্পণ ভাব নিয়েই বিজেপি ২ থেকে আজকের সংখ্যায় পৌঁছেছে।