ভাইফোঁটা শেষ হতেই বিহারে প্রচারে নামছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে আগামী ২৪ অক্টোবর সমস্তিপুর থেকে প্রচার শুরু করবেন তিনি। সে দিন বিকেলে বেগুসরাইতেও বৈঠক করার কথা রয়েছে মোদীর। সূত্রের মতে, ওই দু’টি এলাকাই এনডিএ-র শক্ত ঘাঁটি। তাই ওই এলাকা থেকেই প্রচারে নামার পরিকল্পনা নিয়েছেন মোদী। এরই মধ্যে আজ বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর দলের প্রার্থীদের ভয় দেখিয়ে ভোট ময়দান থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সরব হলেন জন সুরাজ দলের নেতা প্রশান্ত কিশোর (পি কে)।
দীপাবলির উৎসব উপলক্ষে বিহারে গত কয়েক দিন হেভিওয়েট প্রার্থীদের দিয়ে প্রচার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। ভাইফোঁটা শেষ হতেই তাই ফের এক বার বিহার জুড়ে প্রচারে নামতে চলেছেন মোদী-অমিত শাহেরা। সূত্রের মতে, আগামী ২৪ অক্টোবর সমস্তিপুরের কর্পূরী ঠাকুরের গ্রাম থেকে দ্বিতীয় দফার প্রচার শুরু করবেন মোদী। লক্ষ্য দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী পিছিয়ে থাকা সমাজের নেতা কর্পূরী ঠাকরকে সামনে রেখে ওই সমাজের ভোট দলের পক্ষে নিশ্চিত করা। বিহারে গত লোকসভা নির্বাচনে পিছিয়ে থাকা সমাজ ঢেলে সমর্থন দিয়েছিল এনডিএ প্রার্থীকে। রাজ্যের মোট ভোটের প্রায় ৩৬ শতাংশ হল অতি পিছিয়ে থাকা শ্রেণির অন্তর্গত। সূত্রের মতে, লোকসভার মতো বিধানসভাতেও ওই ভোটকেই পাখির চোখ করে এগোনোর পরিকল্পনা রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। পরবর্তী ধাপে আগামী ৩০ অক্টোবর মুজফ্ফরপুর ও ছাপরা জেলায় সভা করবেন মোদী। বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘দলের পরিকল্পনা হল প্রথম পর্বে দলের জেতার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে এমন এলাকাগুলি থেকে প্রচার শুরু করে ধীরে ধীরে বিরোধীরা যেখানে শক্তিশালী সেই এলাকায় পা দেওয়া। সেই কারণে গোড়ায় মগধ-মিথিলাঞ্চলের একাংশকে বেছে নিয়েছে দল। পরবর্তী সময়ে সীমাঞ্চল এলাকায় প্রচার যাবেন হেভিওয়েট প্রার্থীরা।’’ সূত্রের মতে, এরপরে ২, ৩, ৬ ও ৭ নভেম্বর বিহারে প্রচারে যাওয়ার কথা রয়েছে মোদীর। সব ঠিক থাকলে সপ্তাহান্তে বিহারে সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে অমিত শাহের। সূত্রের মতে, ওই দিন পটনা সংলগ্ন ও মুজফফ্রপুর এলাকার কেন্দ্রগুলিতে প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে শাহের।
মাঝের কয়েক বছর বাদ দিলে প্রায় দু’দশক ধরে বিহারে ক্ষমতা ধরে রেখেছে এনডিএ জোট। ফলে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হওয়া যে ভালই রয়েছে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই কারণে মহিলাদের মন জিততে কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যে চলা সরকারি প্রকল্পগুলির লাভ কী ভাবে মহিলারা পেয়ে চলেছেন, তা নিয়ে প্রচারেজোর দেওয়ার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। মহিলা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ নিয়ে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছে দল। এ ছাড়া লালু-রাবড়ী দেবীর শাসনে বিহার কোন ‘জঙ্গল রাজ’-এর শিকার ছিল তাও নতুন ভোটারদের কাছে তুলে ধরার কৌশল নিয়েছে দল। একই সঙ্গে অপারেশন সিঁদুর ও অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রচারে ধারাবাহিক ভাবে সরব হয়ে জাতীয়তাবাদ ও হিন্দুত্বের হাওয়া তুলে সীমাঞ্চল এলাকায় শক্তি বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে গেরুয়া শিবির।
এ দিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ ও ধর্মেন্দ্র প্রধানের বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে তাঁর দলের প্রার্থীদের নির্বাচনীময়দান থেকে সরানোর অভিযোগ আনলেন প্রশান্ত কিশোর। তাঁর অভিযোগ, তাঁর দল জন সুরাজের তিন জন প্রার্থীকে এখনও পর্যন্ত বিজেপির চাপে সরে যেতে হয়েছে। প্রশান্তের দাবি, এই তিন প্রার্থীর সঙ্গেই যোগাযোগ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীতথা বিহারে বিজেপির নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ধর্মেন্দ্র চাপ সৃষ্টি করেন। দানাপুরের জন সুরাজ প্রার্থী অখিলেশ সাউ যাতে মনোনয়ন জমা দিতে না পারেন, সে জন্য স্বয়ং শাহ তাঁকে ডেকে সারা দিন বসিয়ে রেখেছিলেন বলে দাবি প্রশান্তের। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে এই সংক্রান্ত ছবিও দেখিয়েছেন তিনি। প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতেবাধা বা মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া আটকাতে নির্বাচন কমিশনের সক্রিয়তার দাবি তুলেছেন তিনি। একই সঙ্গে পি কে-র হুঁশিয়ারি, ‘‘এ সব করে ভোটের ফলবদলানো যাবে না। বিজেপির একটা ধারণা তৈরি হয়েছে গত কয়েক বছরে যে, ভোটের ফল যা-ই হোক, সরকার ওরাই গড়বে! বিহারে এ বার সেই জিনিস চলবে না। এনডিএ এত দিন বুথ লুট করত, এ বার প্রার্থী লুট করা শুরু করেছে।’’ বিজেপি নেতা অজয় অলোকের পাল্টা দাবি, “জন সুরাজের প্রার্থীরা নিজেরাই বিজেপিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন। প্রশান্ত আসলে নিজের ভবিতব্য বুঝতে পেরে রং বদলাচ্ছেন!”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)