সীমান্ত বিবাদ নিয়ে সুর যথেষ্ট চড়া রেখেই আজ বেজিং-এর সঙ্গে এক দীর্ঘমেয়াদি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের যাত্রা শুরু করল নয়াদিল্লি।
আজ হায়দরাবাদ ভবনে শীর্ষ বৈঠকের পর চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-কে পাশে বসিয়ে বাণিজ্য সম্পর্কে অগ্রগতির খতিয়ান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি কিছুটা অভূতপূর্ব ভাবেই সীমান্ত প্রসঙ্গে কড়া ভাষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। এবং তা প্রকাশ্যে, চিনা প্রেসিডেন্ট ও তাঁর মন্ত্রিসভার নেতাদের সামনে। এক দিকে পরিকাঠামো, রেল-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের বাজার খুলে বিপুল অঙ্কের (প্রায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার কোটি টাকা) চিনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন মোদী। অন্য দিকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, সীমান্তের ঘটনায় ভারত অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। চিনা প্রেসিডেন্টের সামনেই মোদীর বক্তব্য, বহু দিন ধরে ঝুলে রয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার জট ছাড়ানোর বিষয়টি। তার সমাধান না-হলে দু’দেশের সম্পর্কে রাজনৈতিক আস্থা তৈরি হবে না। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, শত্রুতা এবং নিঃশর্ত বন্ধুত্ব এই দুই চরম অবস্থানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ড্রাগনের চোখে চোখ রেখে আজ বাণিজ্য সম্পর্ককে মজবুত করতে চেয়েছেন মোদী। দেড় ঘণ্টা একান্ত বৈঠক করেছেন শি-র সঙ্গে। সেই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতের বিশাল ঘাটতির প্রসঙ্গ তুলে চিনা প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে তাঁদের বাজারে ভারতীয় সংস্থাগুলির প্রবেশের বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস আদায়ও করে নিয়েছেন। তবে শুধু বাণিজ্য নয়। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, আজকের এই শীর্ষ বৈঠকের একটি বড় সময় ব্যয় হয়েছে সীমান্তের সাম্প্রতিক অশান্তি নির্মূল করা নিয়ে। মোদীর বক্তব্য, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের সম্ভাব্য সমস্ত দিকগুলিকে তখনই সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, যখন বকেয়া বিবাদগুলির শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।
দু’দেশের শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে এ দিন মোট ষোলটি চুক্তিপত্রে সই করলেন ভারত এবং চিনের মন্ত্রী-আমলারা। কৈলাস যাত্রার জন্য নতুন যাত্রা পথের ঘোষণা হল। আমদাবাদ-গুয়াংঝাও এবং মুম্বই-বেজিং-এর মধ্যে সমঝোতা মৈত্রী স্বাক্ষরিত হল। হাই স্পিড ট্রেন চালানোর লক্ষ্যে ভারতকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল বেজিং। জাপান যেখানে মুম্বই-আমদাবাদ বুলেট ট্রেন চালানোর লক্ষ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে, তখন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চিন এগিয়ে এল চেন্নাই-বেঙ্গালুরু-মহীশূর শাখায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে সেমি হাই স্পিড ট্রেন চালানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে। ভারতীয় রেল সংক্রান্ত পড়াশুনোর জন্য কেন্দ্র যে বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতেও প্রযুক্তিগত সাহায্য দিতে রাজি হয়েছেন চিনা কর্তৃপক্ষ। চিন ওষুধ-সহ বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে তাদের বাজারে ভারতের সংস্থাগুলিকে প্রবেশাধিকার দেয় নাএই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু আজ চিনফিং নিজেই বলেছেন, “চিনের বাজারে ভারতীয় ওষুধ এবং জ্বালানি সংস্থাগুলিকে আরও বেশি করে প্রবেশাধিকারের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।”