Advertisement
E-Paper

‘অনেকটাই স্বাভাবিক’! প্রায় ৮৫০টি উড়ান বাতিলের পরও বিবৃতি ইন্ডিগোর, ‘কঠোর’ কেন্দ্রের শিথিল বিধি নিয়েও প্রশ্ন

কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকের প্রশ্ন, কেন্দ্র অনেক দিন ধরেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। তারা কেন আগে পদক্ষেপ করেনি?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:৪৮
IndiGo sends message in the face of disaster, central government takes strict action

শনিবারও প্রায় সাড়ে ৮০০টি ইন্ডিগোর উড়ান বাতিল হয়েছে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

একের পর এক উড়ান বাতিল! শনিবারও একই ছবি দেখা গেল দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে। সঙ্গে যাত্রীভোগান্তি। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। তবে ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি অনেকটাই অনুকূল! প্রায় ৯৫ শতাংশ যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে শনিবারও উড়ান বাতিলের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ইন্ডিগো সূত্রে খবর, শনিবার দিনভর প্রায় ৮৫০টি উড়ান বাতিল হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের তুলনায় দেরিতে চলেছে অনেক উড়ানই।

দিন কয়েক ধরেই উড়ান পরিষেবা নিয়ে প্রশ্নের মুখে ইন্ডিগো। তবে মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। শুক্রবার ইন্ডিগোর উড়ান বাতিলের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছিল। ইন্ডিগোর তরফে জানানো হয়, গত কয়েক দিনের তুলনায় শুক্রবারই পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ ছিল। কী ভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়, তা নিয়ে ইন্ডিগোর সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখে ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। কেন্দ্রের তরফে কিছু পদক্ষেপও করা হয়। একই সঙ্গে কেন ইন্ডিগোর এই বিপর্যয়, তা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশও দেন দেশের বিমানমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু।

ইন্ডিগো বিপর্যয়ের মূল কারণ কেন্দ্রেরই বিধি! ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাইলট এবং বিমানকর্মীদের কাজের সময় এবং বিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল দেশের উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’ নামের ওই বিধি ১ নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে। আর তাতেই বিপাকে পড়েছে ইন্ডিগো। এই নিয়মবিধি মেনে উড়ান পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছিল না তাদের। অন্য বিমান সংস্থাগুলির তুলনায় কিছুটা সস্তায় যাত্রীদের উড়ান পরিষেবা দিয়ে থাকে ইন্ডিগো। তাদের অনেক বিমানই রাতে অবতরণ করে। তাই নয়া বিধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে এই বিমানসংস্থাই। নয়া বিধি মেনে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে যত সংখ্যক কর্মী এবং পাইলট প্রয়োজন, বর্তমানে তা ইন্ডিগোর নেই।

পরিস্থিতি কী ভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব, তা নিয়ে ইন্ডিগোর মতো কেন্দ্রও ভাবনাচিন্তা শুরু করে। শুক্রবারই কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, ডিজিসিএ-র বিধি আপাতত শিথিল করা হচ্ছে। বিধি অনুযায়ী, পাইলটদের নেওয়া ছুটিকে সাপ্তাহিক বিশ্রামের যে নির্দিষ্ট সময়সীমা, তাতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। অর্থাৎ, পাইলটরা আগাম ছুটি নিন বা না-নিন, সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বিশ্রাম দিতেই হবে তাঁদের। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুক্রবার এই সংক্রান্ত নিয়মটি শিথিল করা হয়েছে। তার পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এয়ারলাইন্স পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন (আলপা) নামের এক সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে যে, কেন শুধুমাত্র ইন্ডিগোর সুবিধা করে দিতেই নিয়মবিধি শিথিল করা হল? এর ফলে লক্ষ লক্ষ যাত্রীকে ঝুঁকির মুখে ফেলা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ওই সংগঠনটি।

কী যুক্তি কেন্দ্রের?

নিয়ম শিথিল পুরোপুরি স্থগিত করা হয়নি। স্পষ্ট করল কেন্দ্র। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’ কখনই সম্পূর্ণরূপে স্থগিত রাখা হয়নি। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই তা শিথিল করা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা করতে ইন্ডিগোর এ৩২০ বহরের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়া কথা উল্লেখ করা হয়েছে মন্ত্রকের তরফে।

মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

ইন্ডিগো বিপর্যয়ের জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের মূল্য চোকাতে হবে! শনিবার হুঁশিয়ারির সুরে এমনই জানান কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী রামমোহন। তাঁর কথায়, “আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। কোথায় গলদ ছিল এবং তার জন্য কে দায়ী ছিল, ওই কমিটি তা খতিয়ে দেখবে। আমরা ওই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে চলেছি। তাই যাঁরা এটার (ইন্ডিগো বিভ্রাট) জন্য দায়ী, তাঁদের এর মূল্য চোকাতে হবে।”

শো কজ় নোটিস ইন্ডিগো প্রধানকে

ইন্ডিগো সংস্থার সিইও পিটার এলবার্সের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, এমন খবর মিলেছিল আগেই। এ বার পিটারকে শো কজ় নোটিস পাঠাল ডিজিসিএ। ইন্ডিগোর বিপর্যয়ের জন্য তাঁকে দায়ী করা হয়েছে। নয়াবিধি সম্পর্কে অবগত থাকার পরেও কেন ‘পর্যাপ্ত’ পদক্ষেপ করেনি বিমান সংস্থা, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতেও ব্যর্থ ইন্ডিগো।

ভাড়া নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ

ইন্ডিগো বিপর্যয়ের পর থেকেই অন্য বিমান সংস্থাগুলির বিমানভাড়া নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে বিমানের ভাড়া। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভাড়া দ্বিগুণ, তিন গুণও ছুঁয়েছে। সেই কারণে আরও বিপদ বেড়েছে যাত্রীদের। সেই কথা বিবেচনা করেই অন্য সংস্থাগুলি যাতে ইচ্ছামতো ভাড়া নিতে না-পারে, পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হওয়া পর্যন্ত বিমানের ভাড়া বেঁধে দিয়েছে তারা। কেন্দ্র জানিয়েছে, ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে সর্বোচ্চ ৭,৫০০ টাকা, ৫০০ থেকে ১০০০ কিলোমিটার দূরত্বে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা ভাড়া বাবদ নিতে পারবে বিমান সংস্থাগুলি। ১০০০-১৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা, ১৫০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকা ভাড়া নিতে পারবে।

বার্তা ইন্ডিগোকেও

যাত্রীদের বিমানভাড়া ফেরতের ব্যাপারেও ইন্ডিগোকে নির্দেশ দিয়েছে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত যতগুলি বিমান বাতিল হয়েছে, সেগুলির টিকিটের টাকা রবিবার রাত ৮টার মধ্যে ফেরাতে হবে যাত্রীদের। এ জন্য যাত্রীদের যেন তাগাদা দিতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। যত দিন না পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হচ্ছে, তত দিন ‘অটোমেটিক রিফান্ড’ ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। এ ছাড়াও, যে যাত্রীরা এই বিভ্রাটের কারণে যাত্রার দিন বদলাতে বাধ্য হয়েছেন (রিসিডিউল), তাঁদের থেকে বাড়তি টাকা আদায় করতে পারবে না ইন্ডিগো সংস্থা। অনেক সময়েই যাত্রীরা মালপত্র ইন্ডিগো কর্মীদের কাছে জমা দিয়েছেন। তার পরে দেখা গিয়েছে, সেই বিমান বাতিল হয়েছে বা অনেক দেরিতে ছাড়ছে। এ সব ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রীদের কাছে মাল ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রক।

তবে এত কিছুর পরেও কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকের প্রশ্ন, কেন্দ্র অনেক দিন ধরেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। তারা কেন আগে পদক্ষেপ করেনি? ইন্ডিগোর সঙ্কটের কথা অবগত নয় কেন্দ্রের তা মানতে নারাজ অনেকেই। নয়াবিধি চালুর পর কেন তা মূল্যায়ন করা হয়নি!

পাইলট এবং কর্মী অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করে ইতিমধ্যেই যাত্রীদের কাছে একাধিক বার ক্ষমাও চেয়েছে ইন্ডিগো। শনিবার এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই স্বাভাবিক। প্রায় দেড় হাজার বিমান পরিচালনা করেছে তারা। ইন্ডিগোর কথায়, ‘‘আমরা বুঝতে পেরেছি, আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। যাত্রীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পাইলট-বিমানকর্মীদের কজের সময় ঠিক করা। সেই কাজে আমরা অনেকটাই অগ্রসর হয়েছি।’’ তবে কবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে, তা নিশ্চয়তা নেই! ইন্ডিগোর ধারণা, আরও এক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে।

Indigo Flight Central Gov IndiGo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy