E-Paper

এসআইআর-ছাঁকনিতে বিহারে বাদ ৪৭ লক্ষ নাম

বিশেষ আমূল সংশোধনের প্রথম পর্ব শেষে গত ১ অগস্ট বিহারে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল কমিশন। সেই তালিকায় ভোটার সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ২৪ লক্ষ ৫ হাজার ৭৫৬।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৫ ১০:১৯
২৪ জুন এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সময়ে সে রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম ছিল ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ।

২৪ জুন এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সময়ে সে রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম ছিল ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ। —প্রতীকী চিত্র।

তিন মাসের দক্ষযজ্ঞে বিহারে ভোটার তালিকা থেকে বাদ চলে গেল প্রায় ৪৭ লক্ষ নাম!

ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার শেষে বিহারে যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করল নির্বাচন কমিশন, তাতে নাম রয়েছে ৭ কোটি ৪১ লক্ষ ৯২ হাজার ৩৫৭ জনের। চলতি বছরের ২৪ জুন এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সময়ে সে রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম ছিল ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ। ঝাড়াই-বাছাইয়ের পর্ব শেষে সেই আগের তালিকা থেকে প্রায় ৪৭ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হল। ছটের পরব মিটে গেলেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, বিধানসভা নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ১০ দিন আগে পর্যন্ত কেউ ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদন করতে পারবেন। তবে সেই প্রক্রিয়া হবে এসআইআর বহির্ভূত।

বিশেষ আমূল সংশোধনের প্রথম পর্ব শেষে গত ১ অগস্ট বিহারে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল কমিশন। সেই তালিকায় ভোটার সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ২৪ লক্ষ ৫ হাজার ৭৫৬। প্রাথমিক পর্বেই প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম কাটা গিয়েছিল, যা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছিল বিভিন্ন বিরোধী দল। খসড়া তালিকার প্রেক্ষিতে আপত্তি বা সংশোধন এবং নতুন নাম তোলার আবেদনের জন্য এক মাস সময় (সুপ্রিম কোর্টে মামলার জেরে সেই এক মাসের পরেও অবশ্য আবেদন জমা নেওয়া হয়েছে) দেওয়া হয়েছিল। অগস্টের খসড়া তালিকা থেকে আবার তিন লক্ষ ৬৬ হাজার নাম বাদ পড়েছে এবং অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ২১ লক্ষ ৫৩ হাজার নাম। সব মিলিয়ে খসড়ার তুলনায় চূড়ান্ত তালিকায় প্রায় ১৮ লক্ষ নাম বেড়েছে। কমিশন সূত্রের বক্তব্য, খসড়া তালিকায় বাদ পড়েও প্রয়োজনীয় নথি জমা দিয়ে আবার নাম ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন, এমন ভোটারও চূড়ান্ত তালিকায় আছেন।

বিহারে এখন নবরাত্রি এবং দুর্গা পুজোর উৎসব চলছে। তার মধ্যেই মঙ্গলবার কমিশন ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের (এপিক) নম্বর দিয়ে বা বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক বুথ ধরে সেই তালিকায় ভোটারেরা নাম খুঁজে নিতে পারেন। কমিশন সূত্র বলা হচ্ছে, প্রতি জেলার নির্বাচন আধিকারিকের (অর্থাৎ জেলাশাসক) কাছে তালিকা দেওয়া হয়েছে। এর পরে স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও সেই তালিকা পাঠানো হবে। সুপ্রিম কোর্টে এসআইআর সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা আগামী ৭ অক্টোবর। সর্বোচ্চ আদালত আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, বড় রকমের কোনও অসঙ্গতি পাওয়া গেলে গোটা প্রক্রিয়াই বাতিল হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টে ওই শুনানির আগেই ৪ ও ৫ তারি‌খ বিহারে ভোটের প্রস্তুতি দেখতে যাচ্ছে কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।

চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরেও নানা প্রশ্ন ওঠা অব্যাহত রয়েছে। বিহার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ কুমারের দাবি, ‘‘এসআইআর নিয়ে যে উদ্বেগ ছিল, তার নিরসন তো হয়নি। খসড়া তালিকা থেকে আবার যে সব নাম বাদ দিয়েছে, তার কারণ স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করা হয়নি। নতুন অন্তর্ভুক্তির সংখ্যাও কিছুটা অস্বাভাবিক। কমিশনের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে।’’ কংগ্রেসের মতো রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল আরজেডি-রও দাবি, আম জনতার অধিকারের স্বার্থে শেয পর্যন্ত লড়াই চলবে। বিহার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ জাওয়সওয়ালের পাল্টা মত, ‘‘অবৈধ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ যেতেই হবে। অনুপ্রবেশকারীদের বাঁচানোর জন্য বিরোধীরা হল্লা করছেন! বিহারের সব বৈধ ভোটারের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য।’’

প্রসঙ্গত, চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, বিহারে এখন পুরুষ ভোটারের সংখ্যা তিন কোটি ৯২ লক্ষ ৭ হাজার ৮০৪ এবং মহিলা তিন কোটি ৪৯ লক্ষ ৮২ হাজার ৮২৮। নতুন প্রজন্মের ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী ভোটার ১৪ লক্ষ ১ হাজার ১৫০। খসড়া তালিকার সঙ্গে প্রতি জেলাতেই চূড়ান্ত তালিকায় ভোটারের সংখ্যার কিছু তফাত হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SIR bihar election Election Commission

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy