Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আসুর নয়া অসমীয়া-সংজ্ঞা, উদ্বেগ বরাক, ব্রহ্মপুত্রে

অসমীয়া-র সংজ্ঞা নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকের পরে ঐকমত্যে পৌঁছলো আসু-সহ ২৬টি সংগঠন। আজ বিধানসভার স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে তারা তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। তবে এই যৌথ মঞ্চ ১৯৫১ সালের নাগরিকপঞ্জীকে ভিত্তি ধরে ‘অসমীয়া’র যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে আমসু। চলতি বিধানসভায় রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, অসম চুক্তির ৬ নম্বর ধারায় রয়েছে অসমীয়াদের ভাষিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থ ও ঐতিহ্যের সাংবিধানিক, আইনি ও প্রশাসনিক সুরক্ষা প্রদান করতে হবে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫২
Share: Save:

অসমীয়া-র সংজ্ঞা নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকের পরে ঐকমত্যে পৌঁছলো আসু-সহ ২৬টি সংগঠন। আজ বিধানসভার স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে তারা তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। তবে এই যৌথ মঞ্চ ১৯৫১ সালের নাগরিকপঞ্জীকে ভিত্তি ধরে ‘অসমীয়া’র যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে আমসু।

চলতি বিধানসভায় রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, অসম চুক্তির ৬ নম্বর ধারায় রয়েছে অসমীয়াদের ভাষিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থ ও ঐতিহ্যের সাংবিধানিক, আইনি ও প্রশাসনিক সুরক্ষা প্রদান করতে হবে। কিন্তু কারা অসমীয়া---তা নিয়েই আজ অবধি কোনও সর্বসম্মত সংজ্ঞা নির্ধারিত না হওয়ায় ওই ধারার রূপায়ণ হয়নি। এ নিয়ে অসম গণপরিষদ ও কংগ্রেসের আমলে দু’বার কমিটি গড়া হলেও সর্বজন গ্রাহ্য কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অসম সাহিত্য সভাও এ নিয়ে নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দিতে পারেনি। স্পিকার প্রণব গগৈ সিদ্ধান্ত নেন, শীঘ্রই সব দলের বিধায়কদের নিয়ে এ ব্যাপারে আলোচনায় বসা হবে। এরপর, রাজ্যের সব রাজনৈতিক, মানবাধিকার, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন, উপজাতি সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ‘অসমীয়া’ কারা তার সর্বসম্মত সংজ্ঞা চূড়ান্ত করার চেষ্টা চালানো হবে।

অসম সাহিত্য সভা ইতিমধ্যে এ নিয়ে তাদের মত জানিয়ে দিয়েছে। তাদের মতে, বংশগতভাবে অসমের ভূমিপুত্র না হলেও, অসমে বসবাসকারী যাঁরাই স্কুলে অসমীয়া ভাষাকে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেন ও অসমীয়া ভাষা-সংস্কৃতি গ্রহণ করেছেন তাঁরা সকলেই অসমীয়া। অন্য দিকে, বড়ো সাহিত্য সভার মতে, অসম চুক্তির ছয় নম্বর ধারায় ‘অসমীয়া’ শব্দটি বদলে ‘অসমের ভূমিপুত্র’ (ইন্ডিজেনাস পিপ্ল অফ অসম) করা হোক।

বিষয়টি নিয়ে আসু ও অন্য ২৫টি সংগঠন বৈঠকে মিলিত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জাতি, সম্প্রদায়, ভাষাগোষ্ঠী, ধর্ম নির্বিশেষে যাদের নাম ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জীতে অন্তর্ভূক্ত ছিল, তারা সকলেই অসম চুক্তির ৬ নম্বর ধারার অধীনে অসমীয়া হিসাবে সুরক্ষা পাওয়ার যোগ্য। তবে এ নিয়ে বিভিন্ন সাহিত্য সভারও মত নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। এদিন বৈঠকের সিদ্ধান্ত-সহ বিধানসভার অধ্যক্ষ প্রণব গগৈয়ের সঙ্গে দেখা করেন যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিরা। তাঁরা আবেদন জানান, যত দ্রুত সম্ভব এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।

আলফা সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়া বিবৃতি পাঠিয়ে বলেন, সাহিত্য সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাষার ভিত্তিতে অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ধারিত হলে অন্য উপজাতির ভূমিপুত্ররা বিপদে পড়বেন। আলফার মতে, রাজ্যের সব ভূমিপুত্র ও তাদের বংশধর, যারা নিজেদের অসমীয়া ভিন্ন অন্য কোনও পরিচিতি রাখেনি---তাদেরই অসমীয়া বলা উচিত।

এ দিকে, সংখ্যালঘু ছাত্র সংগঠন আমসু যৌথ মঞ্চের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জী অসম্পূর্ণ। তার ভিত্তিতে অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণ হলে বহু প্রকৃত অসমীয়া তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। একই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বরাক উপত্যকায়। জাতীয় নাগরিক পঞ্জী নবীকরণের ঠিক আগে এমন বিতর্কে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে নতুন করে বিভাজন রেখা টানা হচ্ছে।

সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত বলেন, অসমে বৈচিত্র্যের মধ্যে সামগ্রিক একটা ঐক্যসুর রয়েছে। বার বারই তাতে ছন্দপতন ঘটানো হচ্ছে। আগেও অ-অসমীয়াদের ভাষিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক অধিকার কৌশলে দলিত করায় এ রাজ্য দফায় দফায় বিভক্ত হয়েছে।

১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জীতে নাম থাকা মানুষ ও তাদের উত্তরসূরীরাই প্রকৃত ভূমিপুত্র, আসু-সহ বিভিন্ন সংগঠনের এমন দাবিকে গৌতমবাবু বিপজ্জনক আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এটি অ-অসমীয়াদের আরেক দফা অগ্নি পরীক্ষার মুখে ঠেলে দেওয়ার নীল নকশা ছাড়া কিছু নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

citizenship bengali speaking assam silchar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE