Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উমার মন্তব্যে রসদ, আঁতাঁত প্রচারে জোট

বামেদের সঙ্গে জোট অটুট রাখার বার্তা আগেই দিয়েছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। এ বার তৃণমূল-বিজেপি’র আঁতাঁত নিয়ে জোরালো প্রচারে যাওয়ার জন্যও বাংলার কংগ্রেস নেতাদের পরামর্শ দিলেন রাহুল। একই পথে হাঁটছে সিপিএমও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০৩:৩০
Share: Save:

বামেদের সঙ্গে জোট অটুট রাখার বার্তা আগেই দিয়েছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। এ বার তৃণমূল-বিজেপি’র আঁতাঁত নিয়ে জোরালো প্রচারে যাওয়ার জন্যও বাংলার কংগ্রেস নেতাদের পরামর্শ দিলেন রাহুল। একই পথে হাঁটছে সিপিএমও।

নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের গোপন সমঝোতা নিয়ে বাম এবং কংগ্রেস নেতারা আগে থেকেই সরব। বাংলায় বিধানসভা ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করার পরে তাঁদের অভিযোগ আরও নতুন মাত্রা পেয়েছে। আর এই আবহেই নতুন সংযোজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সাম্প্রতিক মন্তব্য। উমা বলেছেন, আরএসএস সাংগঠনিক ভাবে যে ভূমিকা পালন করেছে, তাতে তৃণমূলের সুবিধা হয়েছে। সঙ্ঘ ও বিজেপি-র সাহায্য ছাড়া তৃণমূল এই জায়গায় পৌঁছতে পারত না বলে মন্তব্য করেছেন উমা। আর খড়গপুরের বিধায়ক দিলীপবাবু বলেছেন, বাংলার রাজনীতিতে এই মুহূর্তে মমতার বিকল্প নেই! বিকল্প তৈরি করায় নিজেদের ব্যর্থতাও কবুল করে নিয়েছেন তিনি। দুই নেতা-নেত্রীর এই জোড়া মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই মঙ্গলবার ফের নতুন উদ্যমে বিজেপি-তৃণমূলের আঁতাঁতের বিরুদ্ধে মুখ
খুলেছেন কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্ব।

দিল্লিতে এ দিনই আব্দুল মান্নান, দীপা দাশমুন্সিরা রাহুলের সঙ্গে দেখা করে ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। এর আগে অধীর চৌধুরী, ওমপ্রকাশ মিশ্রদেরই রাহুল বলেছিলেন, জোট ধরে রাখতে হবে। এ বার বাংলার নেতাদের তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে মোদী তৃণমূল নেত্রীকে আক্রমণ করছেন। তাতে তৃণমূলেরই সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখতে সুবিধা হচ্ছে। আর দিল্লিতে দু’দলের বোঝাপড়া চলছে। বিধানসভা ভোটে বিভিন্ন আসনেও এই সমঝোতা স্পষ্ট। বাংলার নেতারা ভোটের পর থেকেই বলে আসছেন, তৃণমূলের ভোট না পেলে খড়গপুরে দিলীপবাবু জিততেন না। আবার বিজেপি-র ভোটের একাংশ তৃণমূলের বাক্সে না গেলে ভবানীপুরে মমতার জয়ের ব্যবধান কমতো। এ বার রাহুলও আঁতাঁতের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, বামেরা আর যা-ই হোক, বিজেপি-র সঙ্গে কোনও দিন যাবে না! বামেদের সঙ্গে নিয়েই এখন আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি, পেট্রোল-ডিজেলের দাম নিয়ে মোদীর সরকারের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন টুইট করেছেন, ‘‘এ বার উমা ভারতীর স্পষ্ট স্বীকারোক্তি! সঙ্ঘই তৃণমূলের জয়ের নেপথ্যে। ঝুলি থেকে বেড়াল ফের বেরিয়ে পড়ল!’’ দু’দলের ‘সেটিং’ বোঝাতে তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি প্রকাশ্যেই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কোনও বিকল্প নেই! এটা কি খড়গপুরে তৃণমূলের ভোটে জেতার কৃতজ্ঞতা?’’ কেন্দ্রকে ‘বিষয়ভিত্তিক সমর্থনে’র কথা বলে মমতা যে প্রত্যুত্তর দিয়েছেন, তা-ও উল্লেখ করেন সূর্যবাবু।

একই ভাবে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেছেন, ‘‘বাম-কংগ্রেস জোট হওয়ার সময় থেকেই তৃণমূল বিজেপি-র সাহায্য নিচ্ছে। ভোটের
ফল এবং উমার কথায় সেটা আরও বোঝা যাচ্ছে। বাংলার রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষকে এই সমঝোতার বিপদ সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে।’’ সেই ২০০৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র ভূমিকা কী, তা নিয়ে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করে একটি রিপোর্টও তৈরি করছেন মানসবাবু।

তবে জোট ধরে রাখার ব্যাপারে সনিয়া ও রাহুলের মনে সংশয় না থাকলেও সিপিএমে প্রকাশ কারাট শিবির যে ভাবে রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে, তা নিয়ে একটু সংশয়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। রাহুল খোঁজ নিয়েছেন, সিপিএম কি শেষ পর্যন্ত জোট ধরে রাখতে চাইবে? বাংলার নেতারা তাঁকে জানান, ভোটের পরেও যে ভাবে হিংসা চলছে, তাতে সিপিএমের পক্ষেও জোট ধরে রাখা ছাড়া উপায় নেই। হাওড়া জেলা সিপিএমের সাধারণ সভায় সূর্যবাবুও এ দিন জোট ধরে রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন। একই দিনে আলিমুদ্দিনে সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি নেতৃত্ব জোটের নামে বিভ্রান্তি নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছেন ঠিকই। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৃহত্তর ঐক্য থেকে সরে আসতে বলার ঝুঁকিও তাঁরা পুরোপুরি নিতে পারেননি! পাশাপাশি, ভোটের পরে হামলা নিয়ে আজ, বুধবার ডিজি-র সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন কংগ্রেস বিধায়কদের প্রতিনিধিদল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uma bharati TMC CPM sonia gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE