বিহার-ঝাড়খণ্ডের মাওবাদীদের হাতে এম-১৬ রাইফেল-সহ অত্যাধুনিক অস্ত্রসম্ভার পৌঁছচ্ছে বলে জানাল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। ওই অস্ত্রসম্ভার উত্তর-পূর্বের জঙ্গিরা সরবরাহ করছে বলেও জানিয়েছে তারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিষয়টি বিহার ও ঝাড়খণ্ড পুলিশকে জানিয়েছে। ওই দুই রাজ্যের পুলিশকর্তাদের সতর্ক থাকতেও বলেছে কেন্দ্র। তবে আধুনিক অস্ত্র হাতে পাওয়ায় গত বছর দেড়েক ধরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মাওবাদীরা বড় ধরনের হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
অস্ত্রপাচার ও পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও জঙ্গি মোকাবিলার জন্য
জুলাইয়ে দিল্লিতে বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব ও নাগাল্যান্ডের অ্যান্টি টেররিজম স্কোয়াড (এটিএস) ও স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনআইএ। এনআইএ-র শীর্ষ কর্তারা সেই বৈঠকে থাকবেন। বৈঠকে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রাজ্যগুলিকে দেওয়া হবে। কী ভাবে ওই অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নিয়েও সেখানে আলোচনা হবে। পুরো সিন্ডিকেটকে একবারে সমূলে বিনাশ করতে উঠেপড়ে লেগেছে এনআইএ। আর সে কাজে রাজ্যের এটিএস এবং এসটিএফকে সঙ্গে নিয়েই অভিযান চালাতে চাইছেন এনআইএ কর্তারা।
এনআইএ-র তথ্য বলছে, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’ নাগাল্যান্ড থেকে অস্ত্র বিহার-ঝাড়খণ্ড সীমা হয়ে পৌঁছে দিচ্ছে বিহারের মুঙ্গেরে। বছর কয়েক ধরেই গোয়েন্দারা উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করছেন। ২০১০ সালে পটনায় অ্যান্থনি সিমরে গ্রেফতার হয়। তাকে জেরা করে তাইল্যান্ডের বাসিন্দা উইলির নাম পায় এনআইএ। সেই উইলিকে তাইল্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে দিল্লিতে এনে জেরা করা হয়।
২০১৩ সালে নাগাল্যান্ডের একটি থানায় অস্ত্রপাচার সংক্রান্ত মামলা দায়ের করেছিল এনআইএ। গোটা তদন্তে বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবের কয়েক জন ব্যবসায়ীর নাম পেয়েছেন তারা। সেই ব্যবসায়ীদের মোবাইল ও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখে অস্ত্রপাচার সংক্রান্ত সিন্ডিকেটের কথা জানতে পেরেছে এনআইএ। গত কয়েক দিনে সেই ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৩০-৪০ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। কলকাতার একটি ব্যাঙ্কের লেনদেনও সেই সূত্রে গোয়েন্দাদের নজরে এসেছে।
মুঙ্গেরকে দীর্ঘদিন ধরেই অস্ত্র কারবারীরা ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করে। গোয়েন্দাদের মতে, সেখানেই এম-১৬ রাইফেল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পর মাওবাদীদের হাতে তা পৌঁছে গিয়েছে। এম-১৬ রাইফেল নিয়ে গোয়েন্দারা চিন্তিত কেন!
পুলিশের এক বড়কর্তার ব্যাখ্যা, ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত এম-১৬ আমেরিকান সৈন্যদের প্রধান অ্যাসল্ট রাইফেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এত বছর ধরে সেনাদের প্রধান অ্যাসল্ট রাইফেল হিসেবে এই রাইফেলের টিকে থাকা থেকেই বোঝা যায় এর গুরুত্ব। এখনও পর্যন্ত ৮০ লক্ষের বেশি এম-১৬ তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি সিলেকটিভ ফায়ার অটোমেটিক রাইফেল। এটি গ্যাস-অপারেটেড, রোটেটিং বোল্ট রাইফেল। এর ওজন প্রায় সাড়ে ৩ কেজি, গুলি ভরার পরে প্রায় ৪ কেজি। ব্যারেল লম্বায় ২০ ইঞ্চি। ম্যাগাজিন ক্যাপসিটি ৩০ রাউন্ড। প্রায় ৫৫০ মিটার পর্যন্ত অব্যর্থ লক্ষ্য। এর অটোমেটিক রেট অফ ফায়ার ৭৫০-৯০০ রাউন্ড। এতে বিভিন্ন রকম সাইট এবং এম-২০৩ গ্রেনেড লঞ্চারও যুক্ত করা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy