ইংরেজি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের করা মন্তব্যে বিতর্ক অব্যাহত। এ নিয়ে এ বার লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে নিশানা করলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁর তির্যক মন্তব্য, দাসত্বমূলক মনোভাবের কারণেই রাহুল ইংরেজির পক্ষে সওয়াল করছেন। ওই বিজেপি সাংসদ বলেন, ‘‘রাশিয়া, চিন, জাপান, জার্মানি, আরব দেশ—সকলেই নিজের ভাষা নিযে গর্বিত। সেখানে রাহুল এক জন দাসের মতো ইংরেজি নিয়ে গর্বিত।’’
সম্প্রতি শাহ একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন আগামী দিনে এমন একটি সমাজ গড়ে উঠবে, যেখানে ইংরেজি বলতে লজ্জা পাবেন ভারতবাসী। বিশ্বজনীন ভাষা হিসেবে স্বীকৃত ইংরেজি নিয়ে ওই মন্তব্যের ফলে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ওই মন্তব্যের সমালোচনা করে রাহুল বলেন, ‘‘আজকের দিনে মাতৃভাষার মতোই গুরুত্বপূর্ণ হল ইংরেজি ভাষা শিক্ষা। যা রোজগার দেয়, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। ইংরেজি ভাষা হল সেতু। এ ভাষা শেখা লজ্জার নয়, এ হল শক্তি। এই ভাষা শৃঙ্খল নয়, বরং শৃঙ্খল ভাঙার শক্তি।’’ গৈরুয়া শিবিরকে নিশানা করে তাঁর আক্রমণ, ‘‘কিন্তু বিজেপি ও আরএসএস চায় না দেশের গরিব শিশুরা ইংরেজি শিখুক। কারণ, গেরুয়া শিবির চায় না পিছিয়ে পড়া শ্রেণি ইংরেজি শিখে তাদের প্রশ্ন করুক। এগিয়ে যাক, সমমর্যাদা পাক।’’
বিজেপি-আরএসএস নেতৃত্বের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আজ রাহুলকে উদ্দেশ্য করে পাল্টা আক্রমণে নামেন নিশিকান্ত। টেনে আনেন রাহুলের পিতা রাজীব গান্ধীর প্রসঙ্গও। বিজেপি সাংসদের বক্তব্য, ‘‘আপনার পিতা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৮৬ সালে যে জাতীয় শিক্ষা নীতি এনেছিলেন, তাতে হিন্দি ভাষার উপরে জোর দিয়েছিলেন। হিন্দিকে সংযোগকারী ভাষা হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল সংস্কৃত ভাষা শেখার উপরে। আর ইংরেজিকে আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল সে সময়কার জাতীয় শিক্ষানীতিতে। কার্যত তখনকার শিক্ষানীতিই এখন প্রবর্তন করা হয়েছে।’’ মাতৃভাষার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে নিশিকান্তের যুক্তি, ‘‘পড়ুয়ারা নিজেদের মাতৃভাষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা পাক এটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চেয়েছেন। তাই আপনি ইংরেজি নিয়ে যা বলছেন তা আপনার দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয়।’’ পাশাপাশি, অন্যান্য দেশের উদাহরণ তুলে ধরে নিশিকান্তের ব্যাখ্যা, ‘‘রাশিয়া, চিন, জাপান, জার্মানির মতো শক্তিধর দেশ সকলেই তাদের ভাষার জন্য গর্বিত। কিন্তু রাহুল আপনি কেন এক জন দাসের মতো ইংরেজির জন্য গর্বিত? আমরা সাঁওতালি, তামিল, সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দি, মালায়ালম ভাষার জন্য গর্বিত।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)