Advertisement
E-Paper

আম-লিচু-দলিত মিলে সরগরম পটনা

উঁচু-নিচু-আম-লিচু— সব মিলেমিশে বৃহস্পতিবার সারাদিন রসে ভরপুর বিহারের রাজনীতি। নিজের বেতন থেকে আম ও লিচু কিনে প্রাক্তনকে দিতে চান বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। যদিও তাঁর এই ঘোষণায় নিম্নবর্ণ তথা মহাদলিতদের প্রতি উচ্চবর্ণের প্রতিনিধির অহঙ্কার দেখছেন প্রাক্তন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৫ ০৩:৩৯

উঁচু-নিচু-আম-লিচু— সব মিলেমিশে বৃহস্পতিবার সারাদিন রসে ভরপুর বিহারের রাজনীতি।

নিজের বেতন থেকে আম ও লিচু কিনে প্রাক্তনকে দিতে চান বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। যদিও তাঁর এই ঘোষণায় নিম্নবর্ণ তথা মহাদলিতদের প্রতি উচ্চবর্ণের প্রতিনিধির অহঙ্কার দেখছেন প্রাক্তন।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১ নম্বর অ্যানে মার্গের গাছের ফল নিয়ে নীতীশ কুমার ও জিতনরাম মাঁঝির দড়ি-টানাটানি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, স্মরণকালে তার তুলনা মিলছে না। বিশেষত বিহারে ভোট যেখানে আসন্ন, সেখানে এই ফল-রাজনীতি নয়া মাত্রা যোগ করবে কি না, মুখরোচক চর্চা শুরু হয়েছে তা নিয়ে। বিহার থেকে দিল্লি— নেতাদের অনেকেই হাল্কা মেজাজে বা কটাক্ষে মুখ খুলেছেন ‘আম-লিচ্চি কা কহানি’ নিয়ে।

সঙ্ঘাতের মোদ্দা কথা হল, ওই বাড়ির গাছের আম লিচু খাবেন কে? যিনি বাস করছেন সেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম, নাকি যিনি মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে রয়েছেন সেই নীতীশ? মাঁঝির অভিযোগ, গাছের আম-লিচু মাটিতে পড়ে গেলেও তাঁদের কুড়োতে দিচ্ছে না পুলিশ। ফল পাহারা দিতে নাকি বাড়িতে বিশেষ পাহারাদার দল বসিয়েছেন নীতীশ।

যা নিয়ে আজ সকালে মুখ খুলেছেন নীতীশ। সার্কুলার রোডে নিজের বাড়িতে বসে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমার বেতন থেকে টাকা দিয়ে মাঁঝিকে আমি আম-লিচু কিনে পাঠাতে চাই।’’ তাঁর নির্দেশেই গাছ পাহারা দেওয়া হচ্ছে বলে মাঁঝি যে অভিযোগ করেছেন, তা উড়িয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আম-লিচু পাহারায় কোনও নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। সংবাদমাধ্যম থেকেই জেনেছি। যদি এমন কোনও সার্কুলার জারি হয়ে থাকে, তবে নিশ্চয়ই তদন্ত হবে।’’ শুধু তা-ই নয়, একদা তাঁর ঘনিষ্ঠ মাঁঝিকে তীব্র কটাক্ষ করে নীতীশ যোগ করেছেন, ‘‘কিছু মানুষের খুব অল্প সময়েই অনেক জিনিসের প্রতি মোহ তৈরি হয়। তাঁরা সেই মোহ সহজে কাটিয়ে উঠতে পারেন না।’’

এর উত্তরেই তাঁর এক ও একমাত্র দলিত তাসটি খেলেছেন জিতনরাম। বলেছেন, ‘‘আমি দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। দলিতদের আম-লিচু থেকে বঞ্চিত করছেন নীতীশ কুমার।’’ জিতনরামের সংগঠন হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা (হাম)-র মুখপাত্র দানিশ রিজওয়ান নীতীশের দাবি নস্যাৎ করে বলেছেন, ‘‘আমার কাছে তথ্য রয়েছে, আম-লিচুর জন্য ২৪ জন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৮ জন সাব-ইন্সপেক্টর এবং ১২ জন কনস্টেবল। আমরা মনে করি, এটা মহাদলিতদের অপমান।’’

বিহার পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চায়নি। এডিজি (সদর) সুনীল কুমার বলেন, ‘‘আম-লিচুর জন্য আলাদা করে কোনও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী অ্যানে মার্গে থাকেন না ঠিকই, তবে সচিবালয়ের বাইরে মুখ্যমন্ত্রী নিবাসের অফিসটি ব্যবহার করেন। তাঁর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন সময়ে কর্মী নিয়োগ হয়। এ ক্ষেত্রেও রুটিন নিয়োগ হয়েছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, পটনা পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর আবাসের বাইরের নিরাপত্তা দেখে। ভিতরের নিরাপত্তা দেখেন স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের কর্মীরা। কোথাওই কোনও পরিবর্তন হয়নি।

‘ফল’-এর গণ্ডির বাইরেও আজ মাঁঝিকে তোপ দেগেছেন নীতীশ। বলেছেন, ‘‘মাঁঝি সরকারি পয়সায় নিজের জন্য যে বাসভবন সংস্কার করিয়েছেন, সেখানে চলে যাচ্ছেন না কেন? তবে চিন্তা নেই। উনি এখনও মাস তিনেক থাকতে পারেন। তার পরে যিনি নতুন মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তিনি থাকবেন ওই বাড়িতে।’’

মাঁঝি অবশ্য বিজেপিকে পাশে পেয়েছেন। রাজ্যের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীলকুমার মোদী তাঁর সুরেই বলেছেন, ‘‘বাসভবনে যিনি রয়েছেন, স্বাভাবিক ভাবেই আম-লিচু তাঁকেই খেতে দেওয়া উচিত। এটাই পরম্পরা। তা না করে পুলিশ মোতায়েন করে নীতীশ কুমার মহাদলিতদের অপমান করছেন।’’ এমনকী দিল্লির অশোক রোডে বিজেপির সদর দফতরে দলের অন্যতম মুখপাত্র তথা বিহার বিজেপির নেতা শাহনওয়াজ খানের সাংবাদিক বৈঠকের বিষয়ই ছিল ‘আম-লিচ্চি’। নীতীশ-বিরোধীরা যে তাঁর বিরুদ্ধে দলিত তাসটাই খেলার চেষ্টা করছেন, তা শাহনওয়াজের কথাতেও স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘নীতীশ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে এক মহাদলিত নেতাকে সরিয়ে দিলেন। নিজে বসলেন কুর্সিতে। এখন তাঁকে আমের চাটনিও খেতে দেবেন না!’’ শাহনওয়াজের কটাক্ষ, জিতনরামকে ক’দিন পরে বাড়ি খালি করতে হবে বলে নীতীশ ইঙ্গিত দিলেও তিনি নিজে মোটেই ওই অ্যানে মার্গে ফিরতে পারবেন না।’’

বিজেপির বিরুদ্ধে সম্প্রতি এক ছাতার তলায় এসেছে সাবেক জনতা পরিবার। নীতীশের বন্ধু-দল আরজেডি-র নেতা রঘুবংশ প্রসাদের সুর তাই ঈষৎ নরম। ‘‘আম-লিচু রক্ষার চেয়ে বিহারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দিকেই নীতীশ নজর দিলে ভাল হতো’’— বলেছেন তিনি। নীতীশ অবশ্য সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা আম নিয়ে চিন্তা করছেন, করুন। কিন্তু আমাকে সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে ভাবতে হয়। আম নিয়ে ভাবার সময় নেই।’’

বিরোধী শিবিরের এখানেই প্রশ্ন— ভাবার সময় নেই, তা হলে বেতনের টাকায় আম-লিচু কেনার কথা তুললেন কেন নীতীশ? সন্দেহ নেই, নাটক জমেছে আম-দরবারে!

Patna 1, Anne Marg Bihar Chief Minister Nitish Kumar Jitan Ram Manjhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy