কাঁটাতার তো দূরস্থান, দু’দেশের মধ্যে নেই কোনও বাঁশের বেড়া!
উত্তর ২৪ পরগনার পানিতারে ভারত বাংলাদেশে সীমান্তের মধ্যে এমনই বেআব্রু অবস্থা।
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের পরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশ জুড়ে। গোটা ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)-কে। তদন্তে ওই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগ থাকার প্রমাণও পাওয়া যায়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়।
কিন্তু ওই ঘটনার প্রায় এক বছর হতে চলল। এখনও সীমান্তবর্তী বেশ কিছু এলাকায় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) টহলদারি চোখে পড়লেও কার্যত মেলেই না নূন্যতম কাঁটা তারের ঘেরা টুকুও! এবং প্রতি ক্ষেত্রেই সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার নিয়ম টুকুও উধাও! নজরদারি এড়িয়ে ভারতে ঢুকে পড়তে হলে তেমন কসরত করতে হবে না অনুপ্রবেশকারীদের। এমনই আশঙ্কা বিএসএফের।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রায় ৪২ কিলোমিটার অংশ জলপথের সীমান্ত রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ভাসমান ক্যাম্পের সাহায্যে নজরদারি চালায় বিএসএফ। কিন্তু সমস্যা রয়ে গিয়েছে স্থল সীমান্তেই। কেন? জিরো পয়েন্ট অর্থাৎ উত্তর ২৪ পরগনার পানিতার ও বাংলাদেশের হরদা সীমান্তের ব্যবধান মাত্র কয়েক ফুটের। নিয়ম অনুযায়ী দু’দেশের মধ্যে যে সীমান্ত রেখা থাকে সেটিকে বলা হয় কেন্দ্রীয় সীমান্ত (ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার বা আইবি)। নিয়ম অনুযায়ী এর উভয় দিকে ১৫০ মিটারের মধ্যে কোনও রকম নির্মাণ করা যায় না। অর্থাৎ কাঁটা তারের ঘেরা দিতে হলেও সেটা দিতে হয় ১৫০ মিটার দূরেই। এর পরে প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশে কোনও জনবসতি থাকার কথা নয়। কিন্তু পানিতার গ্রামের ক্ষেত্রে সেই চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা।
কী রকম?
সার দিয়ে লোহার কাঠামো রয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে উধাও কাঁটা তার। যার ফলে অনায়াসেই সেখান থেকে ভারতে লোক ঢুকে পড়তে পারে। এমনকী কোনও পুকুর বাংলাদেশে হলেও পুকুরের পাড় ভারতের। একটি বাড়ির দেওয়াল ভারতের দিকে তো উঠোন পড়ে গিয়েছে বাংলাদেশে। এ ভাবে সীমান্তে নিরাপত্তা কতটা সুনিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে সন্দিহান প্রকাশ করেছেন খোদ বিএসএফের কয়েক জন কর্তাও। যে কারণে স্থানীয় বিএসএফের ক্যাম্পে গ্রামবাসীর পরিবারের সকলের ছবি ও পরিচয় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও সংখ্যা কমলে বা বাড়লেই বিএসএফ জওয়ানদের যেন চোখ না এড়িয়ে যায় সে কারণেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু রাতের অন্ধকারে কাঁটা তারের ঘেরা পার হয়ে সহজেই ভারতে ঢুকতে পারবে বলে আশঙ্কা থেকেই যায়। একই অবস্থা হাকিমপুরেও। সোনাই নদী সরু হয়ে কার্যত খালে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে অনায়াসেই নদী পার হয়ে এপার -ওপার করা যায়। এই অংশে প্রধানত ভারতীয় মশলা ওপারে যায়।
তবে ঘোজাডাঙ্গায় দেখা গিয়েছে ভিন্ন চিত্র। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা উত্তর ২৪ পরগনার উত্তরপাড়ার সীমান্তেই রয়েছে বিএসএফের ক্যাম্প। ওই অঞ্চলে জনবসতিও নেহাতই কম নয়। এক কর্তা জানান, এখানে স্থানীয় লোকেরাই পরোক্ষে গরু পাচারে সহযোগিতা করেন। তাঁদের প্রধান কাজ থাকে কোন পথে বিএসএফ টহল দিচ্ছে তা ফোন মারফত পাচারকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
তবে গরু পাচার রুখতে বিএসএফ নতুন ভাবে পদক্ষেপ শুরু করেছে। পিজে নগর এলাকায় প্রায় ৯ কিলোমিটার অংশে কয়েক ফুট গভীর গর্ত করে রাখা হয়েছে। ফলে সেখান দিয়ে কোনও ভাবেই গরু ঢুকতে পারে না বলে দাবি বিএসএফের। যে কারণে ২০১৪-এর তুলনায় ২০১৫তে গরু পাচারের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু সীমান্ত সুরক্ষা রাখার ক্ষেত্রে কেন এত অবহেলা? নূন্যতম কাঁটাতারের ঘেরাটুকুও নেই কেন?
বিএসএফের ডিআইজি (সাধারণ) এস পি তিওয়ারী বলেন, ‘‘কাঁটাতারের বেড়া না থাকার কারণে কাজ করতে অসুবিধা হয়। বেড়া থাকলে সীমান্ত রক্ষার কাজ সুনিশ্চিত করা যায়।’’
কিন্তু কেন এখনও করা হল না?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কিছুই হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy