Advertisement
E-Paper

সেনা সরানোর প্রশ্নই নেই, ডোকলামে রাস্তা-বাঙ্কার তৈরি করা শুরু করল দিল্লি

ফের ডোকলাম নিয়ে সুর চড়াল চিন। ভারতকে নিঃশর্তে সেনা সরাতে বলল চিনা বিদেশ মন্ত্রক। ভারত কিছুটা সেনা সরিয়ে নিয়েছে বলেও দাবি করল তারা। ভারতীয় সেনা নস্যাৎ করল সে খবর। সাফ জানাল, একতরফা সেনা সরানোর প্রশ্নই নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ১৯:০৯
ভারতীয় সেনা বলছে, ডোকলাম থেকে পিছু হঠার প্রশ্নই নেই। বরং শুরু করা হয়েছে রাস্তা এবং বাঙ্কার তৈরির কাজ। —ফাইল চিত্র।

ভারতীয় সেনা বলছে, ডোকলাম থেকে পিছু হঠার প্রশ্নই নেই। বরং শুরু করা হয়েছে রাস্তা এবং বাঙ্কার তৈরির কাজ। —ফাইল চিত্র।

ডোকলাম থেকে সেনা সরানো শুরু করেছে ভারত, সেখানে কমেছে ভারতীয় বাহিনীর উপস্থিতি। আচমকা এক ছাপানো বিবৃতি প্রকাশ করে এমনই দাবি করল বেজিং। ভারতীয় সেনা অবশ্য চিনের এই দাবি সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছে। সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, বাহিনী সরিয়ে আনা হয়নি। গত ১৬ জুন পরিস্থিতির উত্তাপ বাড়ার পর যে পরিমাণ বাহিনী পাঠানো হয়েছিল ডোকলামে, এখনও সেই পরিমাণ বাহিনীই সেখানে অবস্থান করছে। ভারত ওই অঞ্চলে দ্রুত সামরিক পরিকাঠামো গড়া শুরু করেছে বলেও সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে।

বুধবার ডোকলাম প্রসঙ্গে চিনের সুর আবার কিছুটা চড়া হয়েছে। চিনা বিদেশ মন্ত্রক এ দিন একটি ১৫ পাতার বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারি তো রয়েইছে, রয়েছে ডোকলামের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে চিনের নিজস্ব দাবিও। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এ দিন বলা হয়েছে— ‘ভারতকে অবিলম্বে ডোকলামে মোতায়েন করা বাহিনী প্রত্যাহার করে নিতে হবে’ এবং ‘নিঃশর্তে’। এই হুঁশিয়ারির পাশাপাশিই জানানো হয়েছে, জুনের ১৬ তারিখের পর থেকে ডোকলামে মোতায়েন হওয়া ভারতীয় বাহিনীর আকার যেমন ছিল, এখন আর তেমন নয়। যে অঞ্চলে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল দুই বাহিনী, সেখানে এখন ৪০ জন ভারতীয় জওয়ান রয়েছেন বলে চিন জানিয়েছে। ওই ৪০ জনকেও নিঃশর্তে এবং অবিলম্বে সরিয়ে নিতে হবে বলে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের হুঁশিয়ারি।

সেনা সরিয়ে আনা তো দূরের কথা, ডোকলামে ভারত পাল্টা রাস্তা এবং বাঙ্কার তৈরি করা শুরু করেছে বলে সেনা সূত্রের দাবি। —ফাইল চিত্র।

ডোকলামে ভারতীয় বাহিনীর উপস্থিতি কমার যে তথ্য চিনের তরফে দেওয়া হয়েছে, ভারতীয় বাহিনী কিন্তু তা সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছে। সেনা সূত্রে আনন্দবাজার পত্রিকাকে জানানো হয়েছে, ডোকলাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করার কোনও প্রশ্নই নেই, চিনা বিদেশ মন্ত্রকের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ১৬ জুনের পর যে পরিমাণ বাহিনী সেখানে পাঠানো হয়েছে, সেই পরিমাণ বাহিনীই এখনও সেখানে রয়েছে বলে সেনা সূত্র থেকে জানা গিয়েছে। বাহিনীর ৩৫০-৪০০ জন সদস্য ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছেন। উল্টো দিকে মোতায়েন চিনা বাহিনীর আকারও একই রকম। জানিয়েছে ভারতীয় সেনা।

আরও পড়ুন: বিতস্তা, চন্দ্রভাগার উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তেই পারে ভারত: বিশ্ব ব্যাঙ্ক

জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে গোলমাল শুরু হয়েছে ভারত-ভুটান-চিন সীমান্তের ডোকলাম অঞ্চলে। ভুটানের এলাকায় ঢুকে চিন রাস্তা তৈরি করছিল বলে ভারত এবং ভুটানের অভিযোগ। সেই কাজ আটকাতেই এলাকায় বাহিনী পাঠিয়ে দেয় ভারত। জুনের মাঝামাঝি পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। ফলে দু’পক্ষই ডোকলামকে ঘিরে বিপুল সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে শুরু করে। বিতর্কিত এলাকার আশপাশের বিভিন্ন সামরিক ছাউনিতে এবং অস্থায়ী শিবিরে দু’পক্ষই প্রায় ৪০০০ করে সৈন্য পাঠিয়ে দেয়। আর যে অঞ্চলে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই বাহিনী, সেখানে সারা ক্ষণ ৩৫০-৪০০ সৈন্যের বাহিনী মোতায়েন রাখার বন্দোবস্ত হয়।

ভারতীয় সেনা সূত্রে আনন্দবাজার পত্রিকাকে আরও জানানো হয়েছে, ডোকলামে শুধু সেনা পাঠানো হয়েছে এমন নয়, সেখানে অত্যন্ত দ্রুত পরিকাঠামোও তৈরি করছে ভারত। সেনার তত্ত্বাবধানে সেখানে অত্যন্ত দ্রুত রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। সামরিক বাঙ্কারও গড়ে তোলা হচ্ছে বলে সেনা সূত্রের খবর। ডোকলাম নিয়ে ঘনিয়ে ওঠা বিবাদের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার কোনও ইচ্ছা চিন দেখাচ্ছে না বলেই ভারতকে এই পদক্ষেপ করতে হল, দাবি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের। চিনও নিজেদের দিকে রাস্তা তৈরি করছে। যে এলাকার উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি নিয়ে গোলমাল শুরু, সেখানে কাজ আটকে গিয়েছে। কিন্তু ওই এলাকাকে ঘিরে অন্যান্য দিকে রাস্তা তৈরির কাজ চিনা বাহিনী চালিয়ে যাচ্ছে বলে ভারতীয় সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: তিব্বতি সরকারের নিশানায় বেজিং

ডোকলামে ভারত সেনা পাঠানোর পর থেকে রোজ চড়া সুরে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে বেজিং। চিনের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং বিদেশ মন্ত্রক প্রায় রোজ ভারতকে যুদ্ধের হুঙ্কার শোনাচ্ছে। চিনের এলাকায় ভারত অনুপ্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। ব্রিকস দেশগুলির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠক উপলক্ষে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ২৭ ও ২৮ জুলাই চিন সফর করেছেন। তার পর থেকে কয়েক দিন চিনা বিদেশ মন্ত্রক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং মিডিয়ার সুর কিছুটা নরম ছিল। গত কয়েক দিনে শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং নাম না করে ভারতকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। চিনা বাহিনী পিএলএ-র ৯০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে অন্তত দু’বার প্রেসিডেন্ট চিনফিং বলেছেন, ‘‘যে কোনও অনুপ্রবেশকারী শত্রুকে পরাস্ত করার আত্মবিশ্বাস চিনা বাহিনীর রয়েছে।’’ কিন্তু এ বার ফের বেজিং আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ানো শুরু করল। ভারতকে নিঃশর্তে সেনা প্রত্যাহার করতে বলে চিন উত্তাপ তো বাড়ালই। ভারত সেনা সরানো শুরু করেছে বলে দাবি করে বিতর্কও উস্কে দিল।

Doklam Standoff Indo-China Border Sikkim Arunachal Pradesh Sushma Swaraj India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy