লড়াকু: ভীমা কোরেগাঁও রায়ের পরে সাংবাদিক বৈঠকে মামলাকারী রোমিলা থাপার (বাঁ দিকে) এবং প্রভাত পট্টনায়েক, হাজির সমাজকর্মীদের হয়ে আদালতে সওয়ালকারী আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারও (মাঝে)। ছবি: পিটিআই।
ভীমা কোরেগাঁও কাণ্ডে ভারাভারা রাও, সুধা ভরদ্বাজ, গৌতম নওলাখা-সহ পাঁচ সমাজকর্মীকে গ্রেফতারে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে খারিজ হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টে।
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠের বক্তব্য, ‘বিরুদ্ধ মত’ বা ‘রাজনৈতিক মতাদর্শগত ফারাক’-এর জন্য ওই পাঁচ সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়নি। বরং নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী) ও তার কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগেই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুণে পুলিশ। পুলিশের পেশ করা নথি খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে বেঞ্চ।
রোমিলা থাপার, প্রভাত পট্টনায়েক-সহ পাঁচ বিশিষ্ট জন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধ মতের বলেই পাঁচ সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের দাবি ছিল, পুণে পুলিশের বদলে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে ‘সিট’ গঠন করে এ নিয়ে তদন্ত করা হোক।
আজ সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চে, প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি এ এম খানউইলকর সেই দাবি খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, ‘অভিযুক্তরা কখনও তাদের পছন্দ মতো তদন্ত চাইতে পারে না। কী ভাবে তাদের গ্রেফতার করা হবে, তা-ও ঠিক করতে পারে না।’
কিন্তু এই মতের সঙ্গে একমত হতে পারেননি তৃতীয় বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড়। তাঁর পাল্টা মত, এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তই প্রয়োজন ছিল। সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীনই পুণে পুলিশের সাংবাদিক সম্মেলনের দিকে আঙুল তুলে বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের যুক্তি, পুণে পুলিশের আচরণ থেকেই ধারণা হয় যে নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে না। বরং বিরুদ্ধ মতকে নিশানা করতেই এই গ্রেফতারি।
তবে গ্রেফতারির বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার জন্য পাঁচ সমাজকর্মীকে চার সপ্তাহের সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তত দিন তাঁদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া যাবে না। গৃহবন্দি করেই রাখতে হবে। সমাজকর্মীদের পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই তাঁরা নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার বলেন, ‘‘মানুষের অধিকার, এমনকি বিরুদ্ধ মতের অধিকারকেও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় সম্মান জানানো হয়। আমার সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন ছিল, এই ক্ষয় বন্ধ করা। আমরা খুশি যে, ওই সমাজকর্মীরা বিপন্ন হয়ে পড়েননি।’’
পুণের ভীমা কোরেগাঁওয়ে দলিতদের একটি অনুষ্ঠান ঘিরে হিংসার ঘটনায় গত ২৮ অগস্ট পুণে পুলিশ ওই পাঁচ সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করে। এঁদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগও তুলেছিল পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এত দিন তাঁরা গৃহবন্দিই ছিলেন। এই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করার জন্য মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি উল্লসিত। এ নিয়ে আজ রাহুল গাঁধীকে তোপ দেগে মাঠে নেমেছে বিজেপি। ফডণবীসের যুক্তি, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে, এই গ্রেফতারির পিছনে কোনও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল না। অভিযুক্তদের উদ্দেশ্য ছিল, সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আবেগ উসকে দিয়ে, একে অপরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়া।’’
কিন্তু রোমিলা থাপারের মতে, ২৮ অগস্টের গ্রেফতারি কারও নিজস্ব মত রাখার অধিকার খর্ব করার চেষ্টা ছিল। তাঁর মন্তব্য, ‘‘দু’রকমের সন্ত্রাসবাদ রয়েছে। একটি হিংসার মাধ্যমে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করে। আর একটি গণতন্ত্রকে ছোট করে। যারা প্রভুর ঠিক করে দেওয়া নীতি মেনে চলবে না, তাদের হেনস্থা করা হয়। গণতন্ত্রের ইতিহাস বলে, এখানে হস্তক্ষেপ করা না হলে ভারতীয়দের নাগরিক অধিকার বিপদে পড়বে।’’
এই গ্রেফতারির বিরুদ্ধে আর এক মামলাকারী, অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়েকের মত, ‘‘আসলে নাগরিকদের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে কোনও শাস্তি হয় না। কাউকে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করে, দানবীয় আইনে গ্রেফতার করা হয়। জামিন মেলে না, তার পর বছরের পর বছর মামলা চলে। কিন্তু মামলায় হেরে গেলেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের কোনও মূল্য চোকাতে হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy