চলতি মাসের শুরুতে গোয়ার শিরগাঁও গ্রামের লাইরাই দেবী মন্দিরে পদপিষ্টের ঘটনায় ছ’জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে। কী ভাবে ওই ঘটনা ঘটল, জানতে গড়া হয়েছিল সরকারি তদন্ত দল। অবশেষে ঘটনার ১১ দিন পরে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, নিছক ভাগ্যের পরিহাসে নয়, বরং দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল দুর্বল পরিকল্পনা, কর্তৃপক্ষের গাফিলতি এবং অব্যবস্থার কারণেই।
গত ৩ মে ভোরে গোয়ার মন্দিরে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় তদন্ত শুরু করে গোয়া সরকার গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটি। এই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন কমিশনার ও সচিব (রাজস্ব) সন্দীপ জ্যাকস, ডিআইজি বর্ষা শর্মা, পুলিশ সুপার টিকম সিংহ বর্মা, প্রমুখ। মন্দিরের ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্তাদের বক্তব্যও রেকর্ড করা হয়। কিন্তু তদন্তের পাশাপাশি কী কারণে ওই পদপিষ্টের পরিস্থিতি সৃষ্টি হল, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। কেউ বলেছিলেন বিদ্যুৎবিভ্রাটের জেরে হুড়োহুড়ি থেকেই বিপত্তি, কেউ আবার দোহাই দিয়েছিলেন দুর্ঘটনাপ্রবণ ঢালের। সেই আবহে তদন্তে জানা গেল, আদতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা না থাকা, নির্দিষ্ট প্রশাসনিক নির্দেশাবলি অমান্য করা এবং দুর্বল পরিকল্পনার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল।
উত্তর গোয়ার শিরগাঁও গ্রামের ওই মন্দিরে প্রতি বছর বার্ষিক শোভাযাত্রা হয়। একে ‘শিরগাঁও যাত্রা’ বা ‘দেবী লাইরাই যাত্রা’ও বলা হয়ে থাকে। এখানে পুণ্যার্থীরা খালি পায়ে জ্বলন্ত অঙ্গারের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যান। শতাব্দীপ্রাচীন এই যাত্রায় যোগ দেওয়ার জন্য প্রতি বছর দূরদূরান্ত থেকে মানুষ শিরগাঁওয়ে ভিড় করেন। ৩ মে রাতেও হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল সেখানে। ভোরের দিকে আচমকা হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ছ’জন। আহত হন আরও অন্তত ৫০ জন পুণ্যার্থী। অভিযোগ, সেই রাতে লাইরাই দেবীর মন্দিরে অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে পুণ্যার্থীদের একসঙ্গে মন্দিরের দিকে না আসতে অনুরোধ করেছিল মন্দির কমিটি। কিন্তু তা সত্ত্বেও শত শত ভক্ত পায়ে হেঁটে মন্দিরের দিকে আসছিলেন। মন্দিরে যাওয়ার রাস্তাটি সরু হওয়া সত্ত্বেও সেখানে অস্থায়ী দোকান বসানোর অনুমতি দিয়েছিল মন্দির কমিটি, যার ফলে মানুষের যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল বলেও অভিযোগ। এক প্রশাসনিক কর্তা জানান, গত বছর উৎসবের সময় একই স্থানে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। তবে সে বার হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি। তা হলে পূর্ব ইতিহাস সত্ত্বেও চলতি বছরে কেন বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলেন না মন্দির কর্তৃপক্ষ? উঠেছে সেই প্রশ্নও।